দ্বিতীয় অধ্যায় বারো বছর আগে এই স্টেশনটাকেই আর্তনাদ শুষে নেয়ার মতো প্রকাণ্ড মনে হতো। ফটকের ওপর লোহার যে ঐরাবত ছিল, নাটোর রাজবংশের প্রতীক, জমিদারি প্রথার সাথে সাথে তারও উচ্ছেদ ঘটেছে। প্লাটফর্মের উল্টোদিকে আতা গাছের যে বনটা—নাই—এখন সামান্য ঝোপঝাড়। দেশভাগের পর লোকের আনাগোনা—সাথে নতুন রাস্তা, কারবার, কারখানা— স্টেশন রোডের ধারেই কারবালা—নাকি সেই সুদূর মগধ ও মিথিলা থেকে এসে বসতি গড়েছে। ‘যে নাটোর দেখে গেছিস—’ ছিগড়ু দুই দিকে মাথা নাড়তে নাড়তে বলে, ‘মানুষ এখন নিঙরে খাচ্ছে শহরটাকে।’ বদলে গেছে, হ্যাঁ। তবু জানালার বাইরে একেকটা ক্ষেত সাঁ সাঁ পেছনে ফেলে নাটোরের যত কাছে এগিয়েছি ঢিপঢিপ বেড়েছেই। তবু প্লাটফর্মে পা রাখতেই সারা শরীর টলে উঠেছিল… এত সুন্দর এত সুন্দর… এই বুঝি পড়ে গেলাম। তবু অরণ্যের একেবারে গভীরে, অনেক দূর শিকড় গেড়ে বসা যন্ত্রণার মহীরুহ মোচড় দিয়ে জানিয়েছে, এখনো আছি। এখনো আছে। আমার শ্বাস আটকে যায় এখনো—সেই নাটোর, সেই রূপ, সেই ব্যথা… স্টেশনের বাইরে বাজার বসে এখন। কাঁচাবাজারের দিকে প্রথম ঝলক তাকিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ি, ‘ছিগড়ু একটু আস্তে হাঁট্ না ভাই—’ ডালিতে ডালিতে উপচে উপচে পড়ছে প্রকৃতির...
এখানে প্রেম আর বিপ্লব একই সাথে আসে। একই পথে চুপিসারে পাশাপাশি হাঁটে। এখানে বোধহয় তারা সমার্থক...