সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

মিডিয়া লেবেল থাকা পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

Development of TV Studies by Horace Necomb

What is Digital Colonialism?

এই আলোচনায় আমি কলোনিয়ালিজমের বাংলা পরিভাষা হিসেবে দখলদারিত্ব কথাটাকে ব্যবহার করছি। দখলদারিত্ব বলতে সেইসব নীতি ও চর্চাকে বোঝাচ্ছি যার দ্বারা এক দেশের উপর আরেক দেশের আংশিক বা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা পায়। এর একটি বড় পরিণাম হলো দখলদার দেশ কর্তৃক দখলকৃত অঞ্চলের অর্থনৈতিক শোষণ। ধ্রুপদী দখলদারিত্বের যুগে ঔপনিবেশিক দস্যুবৃত্তির চালিকা শক্তি ছিল বেনিয়া পুঁজি। সেই উপনিবাসীদের নজিরবিহীন লুটতরাজের প্রত্যক্ষ সুফল হয়েই আসে প্রথম শিল্প বিপ্লব। যা ছিল বৃহৎ পুঁজিবাদী বিপ্লবের একটি অংশ। পুঁজিবাদী বিপ্লব থেকে উদ্বৃত্ত হওয়া পুঁজ বা পুঁজি পরবর্তীতে শোষণের চাকা ঘূর্ণায়মান রাখতে সাহায্য করেছে। অর্থাৎ শোষণ থেকে আরো শোষণ, পুঁজি থেকে আরো পুঁজি।      পণ্ডিতরা বলতে চান, আজকের দিনে নতুন খোলসে সেই একই দখলদারিত্বের হাতিয়ার হয়েছে যাবতীয় ডিজিটাল মাধ্যম। এই নবরূপী দখলদারিত্বর নাম ডাটা কলোনিয়ালিজম বা ডিজিটাল কলোনিয়ালিজম। কর্পোরেট দখলদারিত্বের এ অন্যতম চেহারা। যার পরিণাম হয়ে এসেছে সর্বব্যাপী নজদারির পুঁজিতন্ত্র । এই নজরদারির কাজ তারা স্বদেশ আর কথিত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোয় সমান উৎসাহ নিয়েই করে ...

What is Surveillance Capitalism? Shoshana Zuboff in Bangla

এই গল্পের শুরুটা খুব পরিচিত। ল্যারি পেজ ও সের্গেই ব্রিন যখন স্ট্যানফোর্ডের ছাত্র তখন তারা ‘গুগল’ নামের একটি সার্চ ইঞ্জিন তৈরি করেন। সার্চ ইঞ্জিন, অর্থাৎ যেখানে আপনি কোনো বিষয়ে খোঁজ করলে, ইন্টারনেট সে বিষয়ে যা যা জানে তা আপনার সামনে হাজির হবে। গুগল নামের এই সার্চ ইঞ্জিনের অনানুষ্ঠানিক মূলমন্ত্র ছিল: “শয়তান হব না”। তরুণ ল্যারি ও সের্গেই দু’জনেই ছিলেন বিজ্ঞাপনের বিপক্ষে কারণ তারা বুঝতে পেরেছিলেন এই নতুন দুনিয়া—ইন্টারনেট দুনিয়া—একে কলুষিত করবে বিজ্ঞাপন। একটি পরিচ্ছন্ন বিশ্বস্ত সার্চ ইঞ্জিন তারা আমাদের দিয়েছিল।  কিছুদিনের মধ্যেই দেখা গেল, লক্ষ লক্ষ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর কাছে গুগল হয়ে উঠেছে ‘কানার লাঠি’-র মতো। এই অবস্থায় গুগলের বিনিয়োগকারীরা ল্যারি-সের্গেইয়ের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে লাগল এটাকে আরো বেশি অর্থকরী করে তোলার জন্য। ওনারা দেখলেন, গুগল থেকে বিপুল টাকা কামানোর যদি কোনো তড়িৎ উপায় না-পাওয়া যায়; তাহলে এত এত ব্যবহারকারী, এত ব্যবস্থাপনা, এত বিনিয়োগ সবকিছুর বোঝা নিয়ে গুগলের ভরাডুবি রক্ষা করা যাবে না। চিন্তায় ঘুম হারাম হয়ে গেল দুইজনের।  সমান্তরালে আরেকটা ঘটনা ঘটে যা আমাদের ইন্টারনেট...

মার্ক্সবাদী নন্দনতত্ত্ব

ভূমিকা - স্টেফান মোরাভস্কি: উৎস হলো মার্কস এবং এঙ্গেলসের সাহিত্য ও শিল্পকর্ম বিষয়ক লেখালেখি - তাদের নান্দনিক চিন্তা ১৮৪২ সালের শেষের দিকে তাদের লেখায় খুঁজে পাওয়া যায় - মূল উৎস: মার্কস এবং এঙ্গেলসের ইউজেন সুয়ের উপন্যাস এবং ফার্দিনান্দ লাসালের নাটক সিকিনজেন সম্পর্কে লেখালেখি - মূল থিম: শিল্পের কার্যকরী দিক - শিল্পী এবং তাদের কাজের উপর বিচ্ছিন্নতার প্রভাব, বাস্তবতার সমস্যা (অর্থাৎ, শিল্পকে মতাদর্শ হিসেবে দেখা), প্রবণতা লেখালেখি, এবং শিল্পের শ্রেণী সংযোগ বাস্তবতার সমস্যা - শিল্প বাস্তবে কী করে? মার্কসবাদী পদ্ধতি - নান্দনিক ঘটনা সামাজিক অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ার সাথে সম্পর্কিত হয়ে অধ্যয়ন করা হয়; ভিত্তি-অবকাঠামো মডেল; দ্বিমুখী সম্পর্ক ভিত্তি - অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ অবকাঠামো - রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক ক্রিয়াকলাপ যা সরাসরি অর্থনীতির সাথে জড়িত নয় অর্থডক্স মার্কসবাদী বলে যে ভিত্তি অবকাঠামোর উপর আধিপত্য করে: যারা উৎপাদনের মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করে তারা প্রকাশের মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করে সূক্ষ্ম পরিবর্তন: পারস্পরিক সংবিধান বলে যে এই দুটি একে অপরকে প্রভাবিত করে আলথুসার বলে যে তারা অপেক্ষাকৃত স্বায়ত্তশাসি...

চলচ্চিত্র তত্ত্বে লাকাঁর মনোসমীক্ষণ

মঁসিও জাক লাকাঁ (১৯০১–১৯৮১) একজন ফরাসি মনোবিদ। চলচ্চিত্র তত্ত্ব অধ্যয়নে তাঁর মনোসমীক্ষণ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।  লাকাঁ বলছেন, মানব সন্তানের জন্ম থেকেই তার মধ্যে একটি অভাববোধ থাকে। সে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। এই বোধকে লাকাঁ বলছেন ‘হতে-চাওয়া’। একজন ব্যক্তি তার সারা জীবনই এই অভাববোধকে পূরণ করতে চায়। বাস্তবে যা কখনো পূরণীয় নয়। সে যার অভাব বোধ করে লাকাঁ তার নাম দিয়েছেন ‘ছোট অপর’। মানব জীবনের একেক পর্যায়ে এই অভাবের আকার ও অভিজ্ঞতা ভিন্ন ভিন্ন হয়। যেমন, জন্মের পর মানবশিশু জৈবিক চাহিদা (ক্ষুধা-তৃষ্ণা-যৌনতা) নিবারণের জন্য সার্বক্ষণিকভাবে তার মায়ের ওপর নির্ভরশীল থাকে। তাই সন্তান মাকে ও নিজেকে মিলিয়ে নিজের সম্পূর্ণতা কল্পনা করে। সে ও তার মা অভিন্ন। মায়ের স্তন হলো ‘ছোট অপর’ যার মধ্য দিয়ে সন্তানের সেই অভাববোধ মেটে। একে বলে প্রাক-ঈডিপাস পূর্ণতা। স্তন এখানে পেটের ক্ষুধা ও যৌন ক্ষুধা নিবারণের একের-ভিতর-সব প্যাকেজ। প্রাক-ঈডিপাস ধাপ শেষ হলে সন্তানের বিকাশে তিনটি নির্ণায়ক পর্যায়ের কথা বলছেন লাকাঁ। এই তিনটি হলো: আরশি পর্যায় (আমাকে চেনা), টুকি ঝাঁ খেলা (ভাষা শেখা), ইডিপাস কমপ্লেক্স (সমাজের নিয়মের কাছে আত্মসমর...

চলচ্চিত্র তত্ত্বের প্রাথমিক পাঠ

চলচ্চিত্র তত্ত্ব   তত্ত্ব হলো যার সাহায্যে একাধিক বিষয়ের মধ্যে সম্পর্ককে ব্যাখ্যা করা হয়।  চলচ্চিত্র তত্ত্ব হলো সাধারণভাবে  চলচ্চিত্রকে ব্যাখ্যা করার মাধ্যম।  চলচ্চিত্র তত্ত্ব বনাম চলচ্চিত্র ইতিহাস চলচ্চিত্রের ইতিহাস হলো চলচ্চিত্রের উপর সময়ের প্রভাব ও চলচ্চিত্রের ক্রম পরিবর্তন।  চলচ্চিত্র তত্ত্ব বনাম চলচ্চিত্র সমালোচনা চলচ্চিত্র সমালোচনা হলো নির্দিষ্ট কোনো চলচ্চিত্রের বিশ্লেষণ যেখানে তত্ত্বের কাজ চলচ্চিত্রের সাধারণ বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা।  তাত্ত্বিকদের সংজ্ঞায় চলচ্চিত্র তত্ত্ব “চলচ্চিত্র তাত্ত্বিকগণ চলচ্চিত্র বা চলচ্চিত্রের কোনো অংশ নিয়ে ধারণা তৈরি ও প্রতিপাদন করেন” ডাডলি অ্যান্ড্রু “[তত্ত্ব হলো] নির্দিষ্ট কোনো প্রপঞ্চকে সবচেয়ে ভালোভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য সাধারণ প্রকল্প।” ডেভিড বর্ডওয়েল “চলচ্চিত্র তত্ত্ব… দ্বারা বোঝানো হয় ধাঁচ ও রীতিসমূহের যেকোন সাধারণ প্রতিফলন… যাকে পাওয়া যায় মাধ্যম হিসেবে চলচ্চিত্রের সাথে, চলচ্চিত্রের ভাষার সাথে, চলচ্চিত্র নির্মাণকৌশল বা চলচ্চিত্রের পাঠ্যের প্রকৃতির সাথে কিংবা এর গ্রহণের সাথে সম্পর্কের সূত্রে।” রবার্ট স্ট্যাম চলচ্চিত্র তত্...

জন ফিস্কের 'দি কোডস অব টেলিভিশন'

টেলিভিশনে তিন স্তরের কোড থাকে। ১ম স্তর – বাস্তবতা চেহারা, সাজসজ্জা, পরিবেশ, আচরণ, কথা, অঙ্গভঙ্গি, অভিব্যক্তি, শব্দ ইত্যাদি ↓ এগুলোকে বৈদ্যুতিকভাবে কোডযুক্ত করা হয় নিম্নলিখিত প্রাযুক্তিক কোডের মাধ্যমে: ২য় স্তর – পরি-উপস্থাপন ক্যামেরা, আলোকসজ্জা, সম্পাদনা, সঙ্গীত ↓ এরা বহন করে চিরায়ত উপস্থাপনামূলক কোড, যারা আখ্যান, সংঘাত, চরিত্র, ক্রিয়াকর্ম, সংলাপ, পটভূমি প্রভৃতির পরি-উপস্থাপনাকে আকার দেয় ↓ ৩য় স্তর – ভাবাদর্শ যাদেরকে আদর্শিক কোড দ্বারা সঙ্গতি ও সামাজিক গ্রহণযোগ্যতায় সংগঠিত করা হয়। যেমন, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য, পিতৃতন্ত্র, জাতি, শ্রেণি, বস্তুবাদ, পূঁজিবাদ ইত্যাদি। জন ফিস্কের 'রিডিং টেলিভিশন' (২০০৪) বইয়ের 'দি কোডস অব টেলিভিশন' শীর্ষক অধ্যায় থেকে। জন ফিস্ক (১২ সেপ্টেম্বর ১৯৩৯ - ১২ জুলাই ২০২১

আঁদ্রে বাজাঁ : পূর্ণ সিনেমার পুরাণ

ফরাসি চলচ্চিত্র তাত্ত্বিক আঁদ্রে বাজাঁর একটি বিখ্যাত উক্তি হলো: “সিনেমা এখনো উদ্ভাবিত হতে বাকি।” এর উৎস বাজাঁর রচনা সংকলন ‘সিনেমা কী’ বইয়ের একটি অধ্যায় ‘মিথ অব টোটাল সিনেমা’ (১৯৪৬)। যা আদতে ওই সালেই প্রকাশিত জর্জ সাদুলের “সিনেমার প্রাকৃত ইতিহাস” বইটির পর্যালোচনা।  মঁসিও সাদুল ছিলেন একজন মার্ক্সবাদী। সেহেতু চলচ্চিত্রের ইতিহাসকে উনি দেখতে চেয়েছেন মার্ক্সীয় বস্তুবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে। এই দৃষ্টিভঙ্গি মোতাবেক, প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথেই ধাপে ধাপে বিকাশ ঘটেছে চলচ্চিত্রের৷ যেমনটা প্রযোজ্য সভ্যতার তাবৎ নিদর্শনের ক্ষেত্রে। প্রথমে প্রাযুক্তিক উৎকর্ষ এবং তার হাত ধরে নব উদ্ভাবন। কিন্তু বাজাঁ যেটি করলেন, তিনি সাদুলের বিবৃত ইতিহাস ধরেই দেখালেন যে, সিনেমা ধারণাটি বরং এক প্লেটোনিক স্বর্গ। প্লেটোনিক বলতে বস্তুবাদী দর্শনের বিপরীত, অনেক বেশি ভাববাদী।  বাজাঁর মতে, টোটাল সিনেমা বা, পূর্ণ অর্থে সিনেমা বা, চূড়ান্ত সিনেমার ধারণাটি একটি অধরা ভাবনা হয়ে মানবমনে টিকে ছিল হাজার বছর ধরে। কারিগরি সংযোজনের ইতিহাস এই প্রাচীন ভাবনার কাছে ফিকে। এমনকি, সিনেপ্রেমীদের মনে পূর্ণ সিনেমার যে আকাঙ্ক্ষাটি কিংবদন্...