সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

জুন, ২০১৭ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

উড়ো চর্চা ১

বইয়ের বাইরেও যে সত্য আছে বিলক্ষণ জানতাম। আর আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল বইয়ের ভিতরেই তাকে পাওয়া যায়। আলজেবরা দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়না এমন কিছুর অস্তিত্ব মানতে পারতাম না। সাহিত্যের দিকে ঝোঁক ছিল। অন্যের সৃষ্টিতে মুগ্ধ হতাম আর নিজেও সাহিত্যসৃজনের অনুরুপ চেষ্টা চালাতাম। এই সাহিত্যচর্চা করতে গিয়েই প্রথম একদিন ধন্ধে পড়েছিলাম ব্যাপারটা নিয়ে। আচ্ছা মুসিবত, 'কে-কী-কেন' এই প্রশ্নের উত্তর মেলাতে পারছিলাম না। তারপর একদিন... বইয়ের ফাঁকে, নিজের লেখার ভিতর মাঝে মধ্যেই যাকে খুঁজেছি বিনা বলে-কয়ে  সেই ব্যাখ্যাতীত সত্যটাই এসে হাজির হলো। অনভ্যস্ত হাতে শাড়ি পরে, চুড়ির রিন ঝিন শব্দ তুলে, একেবারে আমার লেখার টেবিলের সামনে।  ভাগ্য বিধাতার অগ্র-পশ্চাৎহীন বিবেচনায় (বরাবরই বিধি আমার সাথে এরকম আমোদে মাতেন) তার আসাটা আমি সেভাবে টেরই পেয়েছিলাম না অথচ চলে যাওয়াটা খুব বেশি করে নজরে এল। দেবীকে সাক্ষাৎ পেয়েও আমি উজবুক মঙ্গলকাব্যে মুখ ডুবিয়ে বসেছিলাম। অবহেলায় দেবী যখন ফিরে গেল তখন মুখ তুলে চাইলাম। দূরে যাওয়াতে বাঁধনে টান পড়ল আর সেই প্রথম টের পেলাম যে অজান্তে কবে বাঁধা পড়েছিলাম। জন্ম লাজুক- তাই 'ফি...

অপ্রকাশিত গল্প

ছেলে চাকরি জুটিয়েছে। এই বেলা বউও জুটিয়ে ফেলা চাই। পাত্রী ফাহাদের নিজের পছন্দ করা। আর আঙ্কেল-আন্টিও চাচ্ছেন ছেলে বিয়ে-থা করে সংসার পাতুক। বিপত্তি কেবল এক জায়গাতেই। পাত্রীকে ফাহাদ এখনো নিজের পছন্দের কথা বলে উঠতে পারেনি। পছন্দের কথা কেন, কোনো ধরনের কোনো কথা বলার সুযোগই বেচারার কাছে এখনো আসেনি। অতঃপর ছেলে আমার শরণাপন্ন হলো। আলাপ করিয়ে দিতে হবে দুজনার।          এইবার আমার ইতিহাস বলি। ইতিহাস অতি সংক্ষিপ্ত। আমি মোড়ের কোচিং সেন্টারে ইতিহাস পড়াই। কোচিং সেন্টারের পরিচালক আমাদের স্কুল বেলাকার শিক্ষক মীরজাফর স্যার। ছাত্রদের ওপর রাগলে উনি নির্বাক হয়ে তার দিকে কটমটিয়ে তাকিয়ে থাকতেন। কদাচিৎ ডান কবজির ওপর বাম হাত রেখে জবাই করার ভঙ্গি করতেন। সেই হতে তার অপর নাম কসাই স্যার। রিটায়ারমেন্টের আর বাকি পাঁচ বছর। অবসর জীবনটাও পড়িয়ে পার করবেন বলে এখানে ‘বিজ্ঞান ইনস্টিটিউশন’ নামের কোচিং সেন্টার খুলেছেন। যেখানে “বিজ্ঞানসহ সকল বিষয় যত্নসহকারে"পড়ান হয়। অঙ্ক-বিজ্ঞান স্যার নিজে পড়ান। বাকিটা সময় প্রবেশদ্বারে ধামড়া ডেস্কটায় বসে থাকেন। যদিও এখন এক অর্থে আমি ওনার সহকর্মী, তবু...

স্বর্গচূড়া

অবশেষে, একদিন, এতবছরের অপেক্ষার পর ট্রেনটা পেলাম আমি। সঙ্গের পোটলা-পুটলিগুলো প্রথমে কামরার ভেতর ছুঁড়ে দিলাম। তারপর নিজের নাম মুখে নিয়ে ঝাঁপিয়ে উঠলাম ট্রেনে। গাড়িটা এক মুহূর্ত থামে না প্লাটফর্মে। জোর গতিতে ছুটে চলে। কারো জন্য অপেক্ষা করতে নারাজ। একজনের জীবনে একবার বই দু’বার কখনো আসে না। পাল্লা দিয়ে ছুটে তাকে ধরতে হয়। নইলে নাই। অন্য গাড়ি ধরতে হবে। কিন্তু সে গাড়ি যাবে আরেক গন্তব্যে। ট্রেনের দরজা দিয়ে বাইরে উঁকি দিলাম। প্লাটফর্মে সাথীকে দেখতে পাই। হাত নেড়ে বিদায় জানাচ্ছে অথচ ঠোঁটে হাসি নাই। শুনতে পেলাম মনে মনে কেবল বলছে, তোমার যাত্রা শুভ হোক। (২) প্রথম কবে সাথীর দেখা পেয়েছিলাম ভালো মনে পড়ে না। মনে পড়ে, মন খারাপ করে প্লাটফর্মে বসে ছিলাম। সাথীকে পেয়ে মন ভালো হয়ে গিয়েছিল। কেন, তা মনে নাই। এরপর কত দিন, কত রাত পাশাপাশি বসে কেটে গেল। আমি আর সাথী। স্টেশন জুড়ে এত এত মুখ। কাউকে মনে ধরে নি। সাথী বাদে। সাথীর স্বজনরা একই স্টেশনে ছিল। তবু ও ছিল একা। কী জানি কেন, কখনো জিগ্যেস করা হয় নি। কিন্তু সাথী অনেক প্রশ্ন করত আমাকে। খুব অবাক হতো যে অন্যদের মতো আমার শরীরে কেন বাঁধন নাই। আমার মা-বাবার কথা জিগ...