সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

ইফরিত ২

বাংলাদেশে করোনায় মৃত্যুর প্রথম যে কেসটা, তার ঠিক এক সপ্তাহ আগে, আমরা ভূত ধরতে গাজীপুরের ওই রিসোর্টে যাই। চারশ বছর বয়সী এক দরবেশের ভূত। শুধু ধরতে না, ধরতে এবং সেই অভিযানের উপর ছবি বানাতে। যে রিসোর্টের কথা বলছি সেটা মালিকানা বদলে গত বছর থেকে আবার পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত হয়েছে; যে কারণে তার নামটা আমি প্রকাশ করতে পারছি না। রিসোর্টের বর্তমান সত্ত্বাধিকারী(গণ) আমাকে স্পষ্ট ভাষায় সতর্ক করেছেন: আকারে-ইঙ্গিতেও ওই রিসোর্টের পরিচয় প্রকাশ পেলে তারা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।  ওই অভিশপ্ত জায়গার কবল থেকে আমরা যারা মুক্তি পেয়েছি তারা নিজেদের প্রাণ রাখতে পেরেই সন্তুষ্ট। সেই আতঙ্কদায়ী অতীতকে আরো বেশি নাড়াচাড়া করে আরো বেশি জটিলতায়—বিশেষত আইনি জটিলতায়—পড়ার ইচ্ছা কারো নাই। কিন্তু আমাদের বায়োস্কোপ-ওঝা-অভিযাত্রী দলে একজন লেখক ছিল, আমি শ্রীমান। আর, লেখকদের সহজাত এক অভিশাপ থাকে: নিজেকে ব্যক্ত করার তাড়না। ফলে আমি যা দেখেছি, শুনেছি, অনুভব করেছি তাকে টাইপ না-করে থাকতে পারিনি। এরপর কয়েক দফা ইমেইল চালাচালি, এক দফা উকিল নোটিশ ও হলফনামা বিনিময়ের মাঝে কেটে যায় অনেকগুলো বছর। বহুদিন ফেলে রেখে, বহু শর্তসাপেক্ষে, বহু...

বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী

ইন্দুবালার সাথে আমার সাক্ষাৎ এক সপ্তাহ আগে এই মহাকাশযানডা ক্ষয়ে গেসে, সব অর্থেই গেসে এক্কেরে, ভিতর আর বাইরে থেকে। আরোই ক্ষইতেসে দিন দিন, ঝুরঝুরায় পড়ে যাইতেসে সব পার্টস-পুটস। এত উথালপাথাল এত কিছুÑশেষমেশ দেখা গেল কিছুই বদলায় নাই, কিছুই ঠেকানো যায় নাই। অস্থিরতায় আমিও মাতসিলাম, নাদান ছিলাম, কী যে চাইসিলাম ঠিকমতো বুঝি নাই। এখন এইটুকু বুঝি যে, আমি আর অন্যের জন্য কিছু চাই না।  চার সৌর বছর আগে এই লক্করঝক্কর মহাকাশযানটার নাম ছিল দক্ষিণযান। এখন নাম দিসি আলগাযান, আগেও এটাই ডাকতাম, ভালোবেসে, আর এখন কাগজে-কলমে। অবকাঠামোর বেহাল দশা ওই সময়কার সংঘর্ষের কারণেÑযেটারে এখন আমরা বলি ‘গ্যাঞ্জাম’। উত্তরযান থেকে লেলানো অরির ঝাঁক এসে লাখ লাখ অধিবাসী মেরে তুছরা করে দিসে। অরিপোকার হুলের ঘা শুকাইতে না শুকাইতে, নিঙড়ানো নাড়িভুড়ির স্তূপের গন্ধ টাটকা থাকতেই, হায় সে কী দুর্ভিক্ষ। আলগাযানে উত্তরের সেক্টরগুলাতে মেরামত হইসিল না, তারপর থেকে বিষাক্ত হাওয়া ঢুকে ছেলেবুড়া মুখ দিয়ে রক্ত উঠে নাশ হইসে। মাঝে মাঝে মনে হয় কী পুরা জাহাজটাতেই বিষ ছড়ায় আছে। আজকাল এটা একটা পাগলাগারদে পরিণত হইসে। দারোয়ানহীন গারদ। একজন আরেকজনরে ছিঁড়ে...

তেঁতুল বনসাই

মনেও থাকে না যে রমজান মাস চলে। চারদিকে কেউ-না কেউ কিছু-না কিছু খাচ্ছে। পথের ধারে কয়েকজন মিলে টেবিল বসিয়ে লেমনেড বিক্রি করে টাকা তুলছে। সম্ভবত যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেক আগত শরণার্থীর জন্য। টেবিলে একটা সাদা ডেস্ক ক্যালেন্ডারের আকৃতিতে কাগজের জিনিসটা রাখা, ফোল্ডেড প্ল্যাকার্ড? তাতে কী লেখা দূর থেকে পড়া যায় না। লেখার নিচে কিউ-আর কোড। যে ক্যাম্পাসেই যাই সেখানেই এখন এটা একটা পরিচিত দৃশ্য, টাকা তোলার দৃশ্যটা। চাঁদা আদায়কারী চেয়ার থেকে ঝুঁকে এগিয়ে হাতে লিফলেট ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এখানে তিনজন অবশ্য অনেকটা ঝিমাচ্ছে। সচরাচর ইমিগ্রান্টরা এসব দান-খয়রাতে উৎসুক হয়ে অংশ নেয়। আমি যেটা করি সেটা হলো পাশ কাটিয়ে চলে যাই। অত্যুৎসাহী কেউ কথা বলার জন্য থামাতে চাইলে ব্যস্ততার দোহাই দেই। এখানকার ছাত্রছাত্রী অনেক ভদ্র। অনেক ক্যাম্পাসে আমি শুনতে পাই পিছনে গালি দিচ্ছে।   শীত সদ্য বিদায় নিয়েছে। ঘাসের ওপর ফ্রিসবি খেলছে তরুণ-তরুণীরা। কয়েকজন দূরে দূরে রোদে বসে গিটার বাজাচ্ছে। তাদেরকে ঘিরে আরো ছেলেমেয়ে। একজন ছাত্রী চিত হয়ে শুয়ে বই পড়ছে গাছের ছায়ায়। পায়ের ওপর পা তোলা। দৃশ্যটা অনেকটা ছায়াছবির মতো। কিছুটা দূরে আর...