সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী

ইন্দুবালার সাথে আমার সাক্ষাৎ এক সপ্তাহ আগে

এই মহাকাশযানডা ক্ষয়ে গেসে, সব অর্থেই গেসে এক্কেরে, ভিতর আর বাইরে থেকে। আরোই ক্ষইতেসে দিন দিন, ঝুরঝুরায় পড়ে যাইতেসে সব পার্টস-পুটস। এত উথালপাথাল এত কিছুÑশেষমেশ দেখা গেল কিছুই বদলায় নাই, কিছুই ঠেকানো যায় নাই। অস্থিরতায় আমিও মাতসিলাম, নাদান ছিলাম, কী যে চাইসিলাম ঠিকমতো বুঝি নাই। এখন এইটুকু বুঝি যে, আমি আর অন্যের জন্য কিছু চাই না। 
চার সৌর বছর আগে এই লক্করঝক্কর মহাকাশযানটার নাম ছিল দক্ষিণযান। এখন নাম দিসি আলগাযান, আগেও এটাই ডাকতাম, ভালোবেসে, আর এখন কাগজে-কলমে। অবকাঠামোর বেহাল দশা ওই সময়কার সংঘর্ষের কারণেÑযেটারে এখন আমরা বলি ‘গ্যাঞ্জাম’। উত্তরযান থেকে লেলানো অরির ঝাঁক এসে লাখ লাখ অধিবাসী মেরে তুছরা করে দিসে। অরিপোকার হুলের ঘা শুকাইতে না শুকাইতে, নিঙড়ানো নাড়িভুড়ির স্তূপের গন্ধ টাটকা থাকতেই, হায় সে কী দুর্ভিক্ষ। আলগাযানে উত্তরের সেক্টরগুলাতে মেরামত হইসিল না, তারপর থেকে বিষাক্ত হাওয়া ঢুকে ছেলেবুড়া মুখ দিয়ে রক্ত উঠে নাশ হইসে। মাঝে মাঝে মনে হয় কী পুরা জাহাজটাতেই বিষ ছড়ায় আছে। আজকাল এটা একটা পাগলাগারদে পরিণত হইসে। দারোয়ানহীন গারদ। একজন আরেকজনরে ছিঁড়েখুড়ে খাইতেসে এর মধ্যে। 
আমগোরে বাঁচাইতে আদিযান থেকে যেই দোস্ত বাহিনী পাঠাইসিল অরা নিজেরাই... যা হয় আরকি, পল্টি নিসে... এক্কেরে খায়া দিসে আমগো জাহাজটারে, কিছু রাখে নাই। দোস্ত বাহিনীর গোয়েন্দারা এখনো চারপাশে ছোঁক ছোঁক করে। যা পাবে খাবলায় নিয়ে যাবে। 
আমাদের মধ্যে কোনো কোনো সিয়ান পাগল আবার ধরাছোঁয়ার ঊর্ধ্বেÑপাগলেরও তো রকমফেরÑওই শালারা আছে আরামসে। আমার বন্ধু আতর, এককালের বন্ধু, সহপাঠী, এখন জ্বালানির ব্যবসা ধরসে। কাইজা’র পরপর যত কারখানা ফেলে কারখানার মালিকরা পালাইসিল উত্তরযানে। ওই পরিত্যক্ত কারখানাগুলা মহান আব্বা লিখে দিসেন একেকজনের নামে; আতর সেই কপালঅলাদের একজন। এটাও তো ঠিক যে আতররা ছিল বলে গ্যাঞ্জামটা চালানো গেসে, না, গ্যাঞ্জামটা থামানো গেসে। নাইলে এত তাত্তাড়ি থামবে সেটা ভাবি নাই। আতরদের কিছু দিয়েথুয়ে খুশি করা এই জাহাজের দায়। খ সেক্টরে অর কয়েকশ’ কামরার কুঠুরি, ওইখানেই দরবার। এই দিকটা তুলনামূলক উন্নত কারণ এইখানে লোকে কাঁচা ইন্দুর খাওয়া শুরু করে নাই। 
‘আরে আরে ছালামত... অনেকদিন পর!’ শালা সিয়ান পাগল খুশি হওয়ার ভাব ধরল। ওর বড় বড় দুধওয়ালি চাকরানিরে হাতের ইশারায় নাস্তাপানি আনতে পাঠাইল, ‘আছ কেমন বন্ধু আমার?’
কী বিশাল অর দরবার। নীলগ্রহ থেকে উঠানো ধাতু দিয়ে পুরা ছাদ-দেয়াল-মেঝে আগাগোড়া নিজের মতো মোড়াইসে। ওই ধাতু তোলার ইজারা ওরে দিসিল আব্বা। চোখের উপর দেখে বুঝতেসি, উত্তর অংশের মেরামতে এত ধাতু কম পড়সে ক্যান। হয়ই নাই মেরামত আসলে। আমি চারদিকে ভ্যাবলার মতো দেখতেসিলাম। অয় বুঝসে মনে হয়, সেই প্রসঙ্গে বলল, একটা এক্সটেনশান করতেসি, জাহাজের বাইরে নিয়ে যাব আমার কারখানাটা। ম্যালা চাপ হয়ে যাইতেসে।’ 
‘এই জাহাজ তো চলতেসে তোমার মতো দুই-চারজনের জ্বালানি দিয়া।’
আতর এবার শরমের ভাব ধরল, ‘সব মহান আব্বার দয়া। এই, তোমার খবর বল। তুমি তো আব্বার খাস লোক। এখন কীসে আছ? পল্টনে না তুমি?’
‘না না...’ আমি মাথা নাড়তে নাড়তে দুধওয়ালি এসে সমুচা দিয়ে গেল, সমুচার চেহারা দেখে থাকতে না-পেরে মুখে দিলাম বেসবর, ‘চালকপক্ষের সাথে নাই তো আমি। একটা আমদানি-রপ্তানি ব্যবসা ধরতে চাইতেসি।’ 
‘কী কও, ভাই, ব্যবসার লাইনে আইসো না, লোকসান চলে।’
আমি চারদিকে আরেকবার নজর বুলালাম, ‘তোমারে দেখে তো মনে হইতেসে না।’
‘বাইরে থেকে বুঝবা না, আমি টিইকা আছি বহুত কষ্টে। এখন তো চালকপক্ষ শুনতেসি এক ধারসে কল-কারখানা সরকারিকরণের ভাবনা করতেসে। তখন আমারটাও যাবে। যাক, আব্বায় দিসে, আব্বায়ই ফেরত নিবে।’   
আমি চোখ পিটপিট করে গোপনে ছবি তুলতে থাকলাম। উল্টাপাল্টা কিছু বলে বসে কিনা ব্যাটায় এগুলা সংরক্ষণ করা দরকার। বলবে-না মনে হয়, ব্যাটা চালু আছে। বলে, ‘তুমি তো সবই জানো, আমার থেকে কী জানবা।’ 
চুপ বান্দির পোলা। আমি গলা ঝাড়লাম, ‘তোমার একটা আমদানি-রপ্তানির ধান্দা ছিল না? বুদ্ধি নিব তোমার থেকে সেইজন্য আসা।’
‘আসছ ভালো করস। তয় সংঘর্ষের পরপর লাইনডা ধরতা। অনেকেই ফুলসে ওই সময়। এতদিনে যা লাল হওয়ার হয়ে গেসে। তখন এইদিকে আসলা না, তুমি ছোটপোলার বন্ধু, ভাবসি পল্টনে থাইকা যাবা।’
‘না, বয়স হইতেসে, কড়ি জমানো নাই। বুঝোই তো।’ 
‘উ-উ, এখন আদিযান আমাদের ধান্ধা করতে দিবে না। আমি ছেড়ে আসছি ক্যান? ভালোই করতেসিলাম, আমি, আর ওই যে সোনা মিয়া, তার তো পুরাতন ধান্ধা। কিন্তু আদিযানের সমস্যা আছে আমাদের এই খাত ভালো চললে। আদি প্রজাতির কয়েকজনরে ছাড়া ওরা ব্যবসা করতে দিতেসে না। নামায় দিতেসে।’
‘নামায় কারা? চালকপক্ষ?’
অয় উত্তর দেয় না। চোখেমুখে আমোদ আমোদ দেখায়। চাইতেসে আমি যেন বুঝে নেই, বুঝে নিব অয় জানে। আদিযান নিয়ে দুই-চাইরডা বেফাঁস কথা... অয় নিজে থেকে না কইলে অবশ্য জোরাজুরি করা যাবে না। টের পায়া যাবে। আমারে সবাই সন্দেহের চোখে দেখে এখনো।   
‘তোমার শখটা আছেনি?’
অস্থির। মেঘ না চাইতেই জল। আতর নিজে থেকে না জিগাইলে আমার একটা ফিকির বের করা লাগত কথাটা তোলার জন্য, ‘আছে আছে। ভালো কথা। যন্ত্রটা আনসি। আমি একটা বই বানাইতেসি। তুমি একটু সাহায্য কর না। আমাদের ডরমেটরিতে থাকাকালীন কোনো ছবি নাই আমার কাছে। যা ছিল হারায় গেসে। মাথায় রাখসে এমন কেউ জীবিত নাই, হুজ্জতের তো জানো মাথায় সমস্যা, এক আছো তুমি।’
‘কী কও, হুজ্জইত্যাও আউলাইসে?’ 
‘হ, আজকে না তো। গ্যাঞ্জামের পরপর কাজ-কাম পাইতেসিল না। এদিক-ওদিক ঘুরত। একটা আকাম করল মাঝখানে তো তখন রাক্ষসে তুলে নিয়ে গেসিল। আমি তদবির করে ছুটায় আনলাম। তারপর থেকে আউলা।’ 
আতরের মনে হয় মন খারাপ হইল। হুজ্জত ওর পেয়ারা ছিল নাকি? জাহাজের বাইরে তাকায় বলল, ‘আমার কাছে একবার আসলে পারত হালায়। আমি তো ভালোই জমাইসিলাম কয়েক বছর আগে। অনেকরে কাজ দিসি। ইয়ে যাক গিয়া, শোনো, খুব একটা পরিষ্কার ছবি তো পাবা না। মাথা থেকে অনেককিছু বাইর হয়ে গেসে।’
‘হলেই হবে। নতুন বইটার জন্য দরকার। পয়লা বছর কুস্তির পর সবাই যে বাইরে দাঁড়ায় ছবি তুলসিলাম ওইটা লাগবে।’ 
আতর ভাবে। সময় নেয়। যতই ভাবুক ব্যাডা আমারে ‘না’ করবে না। ওর মাথায় যন্ত্রডা বসালাম। ওরে চোখ বন্ধ করতে কইলাম যাতে মনে করতে সুবিধা হয়। ঝাপসা ঝাপসা ছবি আসতে লাগল মুঠাফোনে। কারো চেহারা আসে তো কারোটা আসে না। ওই স্থাপনাগুলা আমার মনে আছেÑস্থাপত্যের ছাত্র ছিলামÑনকশাগুলা ভুলভাল আসতেছে ওর। ওরে আরো জোর দিয়ে চেষ্টা চালাতে বললাম। ১৫ মিনিট চেষ্টা করার পর বলল, ‘উফ মাথা ব্যথা করতেসে ছালামত, আমারে মাফ কর। দেখি ছবি কী বাইর হইল।’
দেখালাম। এখনো কোনো জায়গা ঝাপসা কোনো জায়গা স্পষ্ট। বসে থাকা সবার চেহারা আসে নাই। 
‘আর কোনো মেমোরি আছে? সবাই আছে এমন মেমোরি?’ 
‘না, সবাইরে নিয়ে এই একটাই মনে পড়ে। দেখতেসোই তো সেটারও কেমন হাল।’ 
আর কিছুক্ষণ গল্প-টল্প করলাম। কোনো কামে দিল না ওর সাথে সময়টা। নোয়াবের চেহারা অয় ভুলে গেসে, আমারই মতো। নোয়াব কাউরেই বাকি রাখে নাই। আতর শালা বকবক করে কিন্তু ওরে যে ওর বেফাঁস বকবক দিয়ে ধরা খাওয়াব তারও সুযোগ নাই। স্পর্শকাতর বিষয়গুলা খুব সাবধানে পাশ কাটায় যায়। রথ তো দেখলাম না, দুইডা কলাও বেচতে পারলাম না। আমি বিদায় নিলাম আরেকদিন আসব বলে। যাওয়ার আগে শেষ কথাডা কইল ব্যবসার লাইনে যেন না আসি। 
আর একজন আছে। হ, আরেকজনের কাছে যাওয়া যায়। এটাই শেষ চেষ্টা। আমি ওর ঠিকানা যোগাড় করসি। এখন থাকে দন্ত্য ন সেক্টরের এক কুঠুরিতে। এই জাহাজে চানমিয়ার পাঁচ নাম্বার কুঠুরি ওইটা। এতদূরের রাস্তা। ক্যাপসুল সব নষ্ট। আমি পায়ে হাঁটতে লাগলাম কারণ চাকাওয়ালা জুতা দেখলে মানুষের নজরে পড়ব বেশি। ত-বর্গে ভদ্রলোক তেমন থাকে না। এইটা সরব হয় রাতের বেলা। লেনের সামনে তৈয়বের স্টল। তৈয়বরে চিনি, ওর ছেলে গ্যাঞ্জামের সময় মরসে অরির কামড়ে। তারে জিগাইতেই চানের কুঠুরি দেখায় দিল। একটা কলের মানুষ দরজা খুলে দিল। বললাম, ‘ইন্দুবালা আছে?’ 
ও দুইদিকে মাথা নাড়ল। কথা কয় না ক্যান বালডা। আমি বললাম, ‘কে আছে?’
‘আপনার পরিচয়?’
‘যে আছে তারে বলেন আমি ছালামত।’
লগবগ করতে করতে চলে গেল জিনিসটা। ফিরে আসল ইন্দুবালারে সাথে নিয়েই। ও আমারে দেখে কিছুক্ষণ অ্যা করে তাকায় থাকল। ভাবলাম কান্দে নাকি। ওরে সুন্দর লাগতেসিল। কানলে যা মারাত্মক লাগত। ছুড়ি কানলও না, জড়ায়ও ধরল না। শান্ত মুখে বলল, ‘কার কাছে এসেছ?’ 
‘ইন্দুবালা। তোমার কাছে।’
‘ওই নামে এখানে কেউ থাকে না। আমার নাম চানবিবি,’ এটা বইলা পিছন ঘুরে হাঁটা দিল, ফিরে যেতে যেতে কলের মানুষরে বলল, আসতে দাও।’
চানবিবির পিছা নিলাম। কলের মানুষ দরজার পাশে দাঁড়ায় নিজে থেকে বন্ধ হয়ে গেল। একটা সরু বারান্দা দিয়ে হেঁটে হেঁটে... খাওয়ার ঘর, গোসলখানা পার করে বৈঠকখানায় ঢুকল ইন্দুবালা। আরো দরজা আছে সামনে। ওর শরীর থেকে একটা মিষ্টি গন্ধ পাইতেসি। এটা ওদের সবার শরীরেই থাকে। 
‘একা থাকো?’
‘সব তো জেনেই এসেছ।’ ইন্দুবালা একটা কমলা আসনে বসল। আমি অনুমতির জন্য সবুর করলাম না, এত ভদ্রতা করে লাভ নাই। কথার ভঙ্গি দেখে বুঝতেসি খাবারদাবারও সাধবে না, ‘এই সেক্টরে কী মনে করে?’ 
‘তোমারে দেখতে।’
‘চার বছর পর?’ ভুরু নাচায় জিজ্ঞাসা করল ইন্দুবালা। টিটকারি মারতেসে। ওর হয়তো ক্ষোভ-টোভ নাই আর এতদিনে। তয় টিটকারির আমি যোগ্য। মাথা নিচু করে শরম পাওয়ার ভান করলাম। আমারে চুপ থাকতে দেখে বলল, কী কাজে এসেছ বল না।’ 
আমি আর কোনো ভুগিচুগি দেয়ার চেষ্টা করলাম না। সরাসরি বললাম, ‘নোয়াবের ব্যাপারে।’ 
ও যেমন চেহারা করসিল ওইভাবেই আটকায় থাকল কিছুক্ষণ। তারপর অন্যদিকে মুখ ঘুরায় বলল, ‘ওর ব্যাপারে কী?’
‘শেষ কবে দেখস।’
‘মনে নাই।’ 
বলবে না। এত দেমাগ ওর। যায় নাই দেমাগ। আমি ফন্দিফিকির ছাড়াই ডাইরেক জিগালাম। সবকিছুই ঝাড়া অস্বীকারÑনোয়াব কোথায় আছে না-আছে কিছুই নাকি জানে নাÑতা সত্যি হইতে পারেÑইন্দুবালার সাথে যোগাযোগ রাখা ওদের দুইজনের লাইগাই ঝুঁকিপূর্ণ। মাগার তাতেও আমার কাজ চলবে। আমার দরকার শুধু নোয়াবের ছবি। আজকে পেলে আজকেই টাটকা পাঠায় দিব লেজ এলাকায়। এগা ওরে বললাম য্যান ছবিটা বানায় দেয় নোয়াবের।
‘মনে নাই চেহারা।’
‘কেমনে ভুললা।’ 
মজা নিতেসে, আর যেই ভুলুক, এই ছেমড়ি ভুলবে এটা সম্ভব না, যদি-না নোয়াব ওর মাথা থেকে মুছে দিয়ে থাকে। কিন্তু আমার ছোট আশা ছিল ইন্দুবালার প্রেমের প্রতিদান রাইখা অয় মুছে দেয় নাই নিজের খোমা। এই মুহূর্তে আমার মিটার বলতেসে: ইন্দুবালার মনের মধ্যে নোয়াবের চেহারাটা অক্ষত রয়ে গেসে। নোয়াবের প্রেমিকা কিছুক্ষণ জ্বলজ্বলা চোখ নিয়ে তাকায় থাকল আমার দিকে। তারপর বলল, ‘তুমি কীভাবে ভেবে নিলে যে মনে থাকলেও তোমার ওই যন্ত্র আমার মাথায় বসাতে দিতাম।’
‘নোয়াবরে ধরা আমাদের দরকার। অয় কী করতেসে জানো তো?’
‘যা উচিৎ বলে ভাবছে তাই করছে। আমার পূর্ণ সমর্থন আছে ওর প্রতি।’
‘অনেক সাহস তোমার।’ 
‘কী করবা? খুন করবা খুব বেশি হলে। বড় উপকার হয়। আত্মহত্যার চেষ্টা অনেক করেছিÑ’ ইন্দুবালা থেমে গেল হঠাৎ। আমি ওর চোখে কিরামাকড়ের মতো। আমার কাছে এইসব বলতে ওর আত্মসম্মানে লাগে। এতটুকু বলসে তার কারণ চানমিয়া ছাড়া তো আর কোনো জিন্দা লোকের সাথে কথা বলার সুযোগ পায় না। আমার বারবার ওর খোলা নাভির দিকে চোখ চলে যায়। ও নিশ্চয়ই বুঝতেসে। কিন্তু কোনো বিকার দেখাইতেসে না। আগে কী লাজুক ছিল আর এখন এত খোলামেলা হয়ে গেসে। নোয়াবের এত ভালো কপালÑক্লাসে প্রথম হইল, জাহাজ মেরামতের চাকরি পাইল, মেয়েও পাইসিল ইন্দুবালার মতোÑএক লাত্থি মাইরা সবকিছু ফেলে গেল। হায় রে। অয় যখন থেকে যুদ্ধের কথা বলা শুরু করে তখন আমি স্থাপত্যকলা আর বই বানানো ছাড়া কিছু বুঝতাম না। হ্যাঁ উত্তরযানের উপর আমাদের সবারই রাগ ছিল। তাই বলে কোনোদিন রক্তারক্তি করতে হবেÑঅরি আসার আগ পর্যন্ত কখনোই ভাবি নাই এমন কিছু।   
শালা যে কই গেল এরপর। 
‘ওর যুদ্ধ থামেনি। ও তো বলেছিল, শোষণের অবসান না হলে ওর যুদ্ধ থামবে না।’ ইন্দুবালা কয় নিজের চুলে হাত বুলাতে বুলাতে, এই নভোযান তো আমাদের হয় নি। তোমার আব্বা এই মহাকাশযান নিজের মতো দখলে নিয়েছে।’
মনে হইল নোয়াবের কথা শুনতেসি। সেই ডরমেটরির নোয়াবÑমাথার কাছে যন্ত্রপাতির বই, বুকের উপর লাল সমাজের বই। 
মাইয়া মানুষের সাথে এইসব বাহাসে যাইতে চাই না। কারো সাথেই বাহাস আমার কাজ না। আমি পেয়াদা, উকিল না। জিগালাম ওর দিন কাটে কেমনে। কইল শুকপাখি আছে, সারাদিন ক্যাসেট শোনে, রেশন আসে বস্তা বস্তা, অভাব হয় না কোনো কিছুর। চানমিয়া গ্যাঞ্জামের সময় উত্তরযানের পক্ষে আছিলÑএখনো আছে। মহান আব্বা তখন পুরা টাইমে উত্তরযানের কবজায় ছিল। গ্যাঞ্জামের পর উত্তরযান থেকে ছাড়া পায়া আলগাযানে আইসা প্রথম প্রথম চানমিয়ার সাথে দেনদরবার করসে। তারপর থেকে আর কোনো প্যারাই দেয় নাই হ্যারে। এখন তো লোকটা ত্রাণ-টান মাইরা, ফুইলা-ফাঁইপা সেই একখান মোডা কলাগাছ হইসে। যতদূর জানি হ্যায় গ্যাঞ্জামের সময় ইন্দুবালারে বাঁচাইসিল নিজে খাওয়ার লাইগা। নাইলে অরিপোকা ছেড়িরে জ্যান্ত খায়া ডিম দিত অর লাশের পেটে। 

ইন্দুবালার সাথে আমার সাক্ষাৎ এক সপ্তাহ পরে

আমরা সবাই আদিযান থেকে আসছি। আমরা সবাই আদিযানের অংশ। যেই বছর বড় জাহাজ দুই টুকরা হইল ওই বছরই আমার জন্ম। তারপর আরেক টুকরা আমি নিজে হাতে করলাম। 
আমার পাক্কা মনে হয় আমাদের কেয়ামত অলরেডি হয়ে গেসে। এখন যেই সময়টায় আছি সেইটা আসলে আমাদের আখিরাত। আখিরাত হ্যাঁ। এখানে ঠিক বেঠিক নাই। আমাদের কপালে শুধু অনন্ত নরকভোগ।
তৈয়ব সমানে কানতেসে। ওর স্টল বন্ধ কিন্তু আশেপাশে জটলা। কাউরে কিছু জিগানো লাগল না, সবার বিড়বিড় থেকে বুইঝা নিলাম: কারা জানি ওর মেয়েরে তুলে নিয়ে গেসে। ছেলেরে তো পোকায় খাইসে, এই একখানই মেয়ে ওর। তৈয়ব বলতেসে, ‘রাক্ষসরা।’ রাক্ষস হইল মহান আব্বার সুরক্ষায় নিয়োজিত, উন্নত জিন দিয়ে বানানো একটা প্রজাতি। আব্বাই বানাইসে এদের; যেহেতু আমাদের প্রজাতির হাতে ওনার হেফাজত নিয়া উনি সন্দিহান। 
সবাই ওরে বলতেসে, ‘চুপ কর চুপ করÑ’ কিন্তু তৈয়বের মাথা গেসে, চুপ করার নাম নাই। খবর আছে বেচারার।
আজকে ইন্দুবালা নিজেই দরজা খুলে দিল। আমার অপেক্ষায় ছিল। আজকে গুছায় সাজসে। ওইদিন একরকম এলোমেলো সুন্দর লাগতেসিল, আজকে আরেকরকম সুন্দর লাগতেসে। আমারে বসালো, পানপাত্র সামনে রাখল। আমি ওরে জিগালাম ওর মন বদলানর কারণ। কিছু বলল না। চাপা ঠোঁটে দাঁড়ায় এক হাতে বোতল ধরে আমার সামনের পাত্রে মাল ঢালতে থাকল। বোতলধারীর দাঁড়ানোর ভঙ্গিটা বন্য। পাত্র ভরলে আমি ওর দিকে চাইতে চাইতে হাত বাড়ায়া নিলাম ওর হাত থেকে। সে আক্সগুল একটু বেশিক্ষণ ছুঁইয়া দিল। কী লাগাইসে ছেড়ি। মতলবটা কী। ও তো শুইবে না নিশ্চয়ই আমার লগে, মশকরা নি, তাইলে?
আমি ওর দিকে তাকায় থাকতে থাকতে মালে চুমুক দিলাম। 
কয়, ‘ভেবে দেখলাম, ও যদি আমার জায়গায় হোত? এই যে চারটা সৌর বছর গেল ও তো আমার কোনো খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করেনি। শুনেছি এখন ওর নতুন সঙ্গিনী আছে। নিজের স্বার্থ দেখে যে মানুষ আমার দিকে ফিরেও তাকায়নি তার মহৎ স্বপ্নের জন্য আমি কেন নিজেকে বলি দিব।’ 
জোস তো। এক সপ্তার মধ্যে ওর মতিগতি একদম তিনশ ষাইট ডিগ্রি বদলায় গেল। 
‘তাছাড়া এই জাহাজ তো আমার না। কোনোদিনও ছিল বলে এখন এসে আর বিশ্বাস হয় না। অরিদের কাছে আমি অনিরাপদ ছিলাম। তোমাদের কাছে অনিরাপদ আছি। আমি তো অভিশপ্ত না তোমাদের চোখে? আমি জানি সেদিন তোমাকে আমি অন্যরকম অনেককিছু বলেছি। আমি পাগল নই। আমার মনের নরম মাটিতে নোয়াব যে দাগ কেটেছিল সেটা মিশে যাওয়া এত সহজ ছিল না। সেদিন তোমার কথাগুলো তৎক্ষণাৎ আমাকে নাড়া দেয়নি কিন্তু তুমি যাওয়ার পর আমি সত্যিই ভেবেছি। অনেক ভেবেছি। ওর জীবন তো ওর আদর্শকে ঘিরে, ও একভাবে কাটাচ্ছে সেই জীবন ওর মতো করে। আমি এই নরকে তার মাশুল আর কত জনম দিব বল।’ ইন্দুবালা অন্যদিকে তাকায় কথাগুলা বলতেসিল। বলতে বলতে বসল আমার পাশে। তারপর সরাসরি তাকাল আমার দিকে। 
আমি ওর কথা কৌতুক নিয়ে শুনতেসি। আমার ভিতরে দুই ধরনের অনুভূতি কাজ করতেসে। আমার মজা লাগতেসে যে, আমার বলা কথাগুলাই অয় বলতেসে, যে কথাগুলা গতদিনই শক্তভাবে ফিরায় দিসিল। এই অনুভূতিটা আমি বাইরেও প্রকাশ করতেসি হাসি দিয়ে। আবার একটা কৌতূহল কাজ করতেসে কারণ আমি জানি ছেড়ি এখন একটা দরদাম শুরু করবেÑসেটা কী হইতে পারে। টেকাকড়ি? না। এই অনুভূতিটা আমি বাইরে প্রকাশ করতেসি না। এখন সরাসরি জিগায় ওরে চমকায় দিতে পারি। কিন্তু সেটা ঠিক হবে না। আমি ওর চেয়ে এক কদম আগায় আছি এমন কিছু ওরে ভাবতে দেয়া যাবে না। ওর মনোলগ এক কান দিয়ে ঢুকায় আরেক কান দিয়ে বাইর করতে করতে, আমি খুব সাবধানে মনে মনে অঙ্ক করতে লাগলাম। এটা ঠিক যে, মহান আব্বা নোয়াবের বিনিময়ে যেকোন মাপের তবারক দিতে রাজি। প্রশ্ন হইতেসে: বেডি চায়টা কী?
‘খাও! ধরে আছ কেন? চান মিয়ার অতি বিশেষ অতিথিদের জন্য এই মদ। চুরি করে বের করলাম।’
আমি পাত্রটার দিকে আরেকবার তাকায় চুমুক দিলাম, ‘অস্থির।’ হেব্বি দামী হওয়ার কথা এই মাল। এইডার এক বোতল কেনার মতো কড়ি মনে হয় এই জাহাজে বেবাক মিলায় নাই এখন। খাওনদাওনেরই দাম বাড়সে দুই গুণ থেকে আট গুণ পর্যন্ত। বড় ব্যাংক পুটকি দিয়ে কড়ি বাইর করতেসে সমানে; লুটপাটের লগে তাল মিলাইতে পারতেসে না। তিন সৌরদিন যাবৎ উত্তর দিকের সেক্টরগুলায় চিকা পর্যন্ত নাই খাওয়ার মতো। আমার রেশন বাড়ানর জন্য একটা চিঠি দেয়া লাগবে ককপিটে। 
‘তুমি অবশ্যই জানো আমি তোমাকে কেন ডেকেছি আজকে... এই... কিছু ভাবছ?’
আমি একটু অন্যমনস্ক হয়ে গেসিলাম। নেশায় ধরসে হালকা। বললাম, ‘মতি বদলাইস নিশ্চয়ই।’ আসলে খুব বেশি বেক্কল সাজাও ঠিক হবে না। 
‘হুম।’ ও আমার গায়ের কাছে আরেকটু সরে আসলো। স্বীকার করল যে, নোয়াবের চেহারা মুছে যায় নাই ওর মাথা থেকে। আর, সেটা ও আঁকাতেও দিবে আমার যন্ত্রে। ‘কিন্তু...’ 
আমি জানতাম “কিন্তু” আছে। 
‘তার আগে বল আমি কী পাব?’
‘কী চাওÑ’ ফাঁকা কৌতূহল নিয়া জিগালাম। একটা জিনিস চাওয়াই বাস্তবসম্মত ওর জন্য...ঠিক তাই...
‘মুক্তি।’ 
এই শব্দটা শুনলে গ্যাঞ্জামের কথা মনে পড়ে। কিন্তু আমি জানি ও কিয়ের মুক্তির কথা বলতেসে। তাও ওরে কইলাম খোলাসা করে বলার জন্য। ও কইল। ও কইল আর আমি ওর কথা শুনে যা বুঝলাম: ছেড়ি এক সপ্তাহ ধরে সব খুঁটায় খুঁটায় ভেবে রাখসেÑঠিক কী চায়, কেমনে চায়, আমার কট্টুক এক্তিয়ারÑমোটামুটি জানা ওর। ও চাইতেসে নোয়াবের ছবির বিনিময়ে ওরে করিডর দিয়ে আদিযানে পাঠায় দিতে হবে, সাথে দুই নাম্বারি কাগজপত্র; সেইখানে ওর প্রজাতির লোক আছে এমনকি ওর বংশেরও।
‘যে জীবন হারিয়েছি, সে জীবন তো আর ফিরে পাব না। এখন নতুন জীবন চাই। আর তোমার জন্য এসব বাম হাতের খেল।’ 
ও থামে। আমার দিকে তাকায়। আমি চুপ। ও চুপ। 
‘সই।’ কইলাম।
‘তুমি রাজি!’
‘আমার তো কোনো লস দেখতেসি না। সারাদিনই যাইতাসে মানুষ এদিক-ওদিক। আদিযানে চলে গেলে চানমিয়া তোমার লাগাল পাবে না। এর পিছে আমার হাত আছে জানার পর বেশি হইলে দুইডা গালি দিতে পারে মনে মনে। এর বেশি কিছু করার ক্ষমতা নাই অর।’ 
ইন্দুবালার চেহারা ঝকমকায় উঠল। আমি শেষ এক ঢোক মদ গিলে নিলাম। আমার হাত থেকে খালি পাত্রটা নিয়ে সামনের তাকিয়ায় রাখল, না, উঠে গেল রাখার জন্য, আরো দূরে, যাতে ভাঙে না। রেখে, ফিরে এসে, আমার কাছাকাছি দাঁড়াইল, ‘আমার আরেকটা...’
অর কথা শুনতে শুনতে নেশায় আমার চারপাশটা দুলে উঠল। ও দেখি আমার দুই কাঁধ জড়ায় ধরে ওর দুই হাত রাখল মালার মতো। কী ঘটতেসে? এটা সেই ইন্দুবালা? সম্ভ্রান্ত, স্বল্পবাক... আগে তো নিজে থেকে কথা কইত না, আমিও কইতাম না। নোয়াবের থেকে প্রশংসা শুনে আমার বানানো বই দেখতে চাইসিল একবারÑস্রেফ ভদ্রতাÑপরে দেখানো হয় নাই কখনোই, যদিও জানত আমার দিন যায় এইসব নিয়েই। নোয়াব না-থাকলে একদিন কি দুইদিন কথা হইসেÑশুধু হ্যাই-হ্যালো। 
‘গত সপ্তাহে তোমাকে দেখার পর থেকে ঘুরেফিরে একটা কথা ভেবে ভেবে শিউড়ে উঠছি: আমি কী সহজেই তোমার হতে পারতাম।’ ইন্দুবালা কথা বলতে বলতে আমার মাথার পিছনের চুলে আঙুল বুলাতে শুরু করে। ওর গতরের ওই ঘ্রাণ এখন আরো চাগায় উঠতেসে। শালা নেশাপানি খায়া ইন্দুবালার গলার আওয়াজ গুড়ের মতো মিঠা লাগতেসে আমার কাছে, বাজতেসে বাঁশির মতো, টুংটাং করতেসে মার্বেলের মতো। কী বলতেসে এগুলা। আসলেই কি? 
এই কথাটা আমি ভাবি নাই ভাবলে গুনা হবে দেইখা? ওই জায়গায়Ñতুলনা করতেসি ক্যানÑনোয়াবের জায়গায়... আমি হইলে গ্যাঞ্জামের আগ দিয়া ইন্দুবালার গুষ্টিরে আদিযানে পাঠানোর আগে কোথাও নড়তাম না। নড়তাম? আমি সব ফালায় আগুন হাতে ওরে বাঁচাতাম, অরিপোকার দঙ্গল থেকে বাঁচাতাম, চানমিয়াÑএগোর হাত থেকেও। আজকে এই জাহান্নামের মধ্যে আমাদের দুইজনের একখান কাঞ্চি থাকত যেডি আমগোর বেহেস্ত। নোয়াব হালায়... হায় রে, নোয়াবে থাকত নোয়াবের হাঙ্গামা নিয়া, এইসব থেকে হাজার হাজার সেক্টর দূরে। ইন্দুবালা কি ভাবসিল একবারও, তখন, আগে, আমি আড্ডা থেকে ফিরে যখন আমার মাথা থেকে ওর ছবি বাইর কইরা দেখতাম কয়েক নিমিষ, তারপর মারাত্মক পাপবোধ নিয়া মুইছা ফেলতাম। সেও কি একবারের জন্য আমার সাথে নিজেরে জড়ায় ভাবসিল তখন? 
বরং এই ভাবনাটাই, সম্ভাবনাটাইÑএখনকার না, তখনকারÑআমার গা-হাত-পা দিয়ে বিজলি ছুটায় দিল ঝ্যানঝ্যান করে। কই থেকে কই যাইতেসে আমার মন? 
‘কী হলো? কথাটা রাখবা?’ ইন্দুবালা আমারে শোয়ায় দিসে, আমার পাশে শোয়া ও, ওর গন্ধে নেশা, ওর হাত আমার গালে, ‘আমি চাই না এই নভোযানে আমার মিলনের শেষ স্মৃতি থাকুক ওই পশুর সাথেÑ’ 
ধীরে, উপগ্রহের মতো ধীর গতিতে ওর ঠোঁট দুইটা নেমে আসলো আমার মুখের উপর।

হ্যাঁ, আমি ঠাপাইসি ওরে ওইদিন। সেরাম মজা। আমি ভাবি নাই এত এত পোকা কিলবিল, ছেড়াবেড়া ন্যাংটা বেডির লাশ দেখার পরও কোনো মাইয়া মানুষের সামনে আমার আর খাড়াবে, তাজ্জব ব্যাপার। আর ইন্দুবালা... তার কথা বলতে পারি না। আমারে শক্ত করে চেপে ধরতেসিল বারবার। 
ওরে নাকি চান মিয়া ছাড়া কেউ খায় নাই। তাই ও যখন কইল এইটা ওর জীবনের সেরা কাপঝাপ ছিল তখন আমি আধাআধি হলেও বিশ্বাস করলাম।
প্রায় ঝকঝকা ছবি আইল নোয়াবের। কী সুন্দর দেখতে আছিল হালায়। এখন কেমন হয়ে গেসে কে জানে। তবে এইবার পুরা জাহাজে ছবিসহ হুলিয়া দিতে পারব। ইন্দুবালারে পার করবে খালাসি ফোরকান। কখন কোথায় ওরে নিতে আসবে সব জানায় দিয়ে আমি বিদায় নিলাম। পিছে ফিরে তাকাইলাম না। ইন্দুবালাও একটাবার জিগাইল না আবার কবে দেখা হবে। 

পরের দিন রিপোর্ট করার সময় ফোরকানে জানাইল: একই সেক্টরের তৈয়বরে হাপিস করার দায়িত্বও ওর উপর পড়সিল। দুইজনরে একলগে বাইরে ফেলার পর নাকি তৈয়ব আর ইন্দুবালার ফোলা শরীর ভাসতে ভাসতে আলগাযানের জানালার কাঁচে আইসা ঠোকর খাইতেসিল... এত সব বাড়তি কথা... তৈয়ব হালারপো আজকাল সব জায়গায় বাড়তি কথা কইতেসে, কবি স্বভাব ফিরে আসতেসে, মগজধোলাইয়ের মেয়াদ উৎরাইসে মনে হয়। 
ওরেই এইবার চালান দেয়া দরকার।



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

48 LAWS OF POWER by Robert Greene and Joost Elffers

Vladimir Putin The definition of power in 21st century

হারবার্ট স্পেনসারের 'জৈবিক সাদৃশ্যবাদ'

ইংরেজ সমাজতত্ত্ববিদ ও জীববিজ্ঞানী হারবার্ট স্পেনসারকে বলা হয় সমাজবিজ্ঞানের দ্বিতীয় জনক। তিনি 'সামাজিক ডারউইনবাদ'-এর একজন প্রচারক। স্পেনসারের বিখ্যাত 'জৈবিক সাদৃশ্যবাদ' সমাজ ও জীবকে বিশেষ সাদৃশ্যপূর্ণ বলে দাবি করে। হারবার্ট স্পেনসার (১৮২০-১৯০৩) ১। সমাজ ও জীব উভয়েই আকারে বৃদ্ধি পায়। মানবশিশু প্রাপ্তবয়স্ক হয়। মহল্লা থেকে মেট্রোপলিটন হয়, ক্ষুদ্র রাষ্ট্র থেকে সাম্রাজ্য তৈরি হয়।   ২। প্রত্যেকে আকারে যত বড় হয় উভয়ের কাঠামো জটিলতর হতে থাকে। ৩। দুই ক্ষেত্রেই, কাঠামোগত পার্থক্যের কারণে কার্যকারিতায় অনুরূপ পার্থক্য দেখা দেয়। ৪। জীবদেহ ও সমাজ উভয়েই ক্ষুদ্রতর একক দ্বারা গঠিত। জীবের যেমন কোষ রয়েছে তেমন সমাজের রয়েছে ব্যক্তি। একাধিক কোষ মিলে যেভাবে বৃহত্তর অঙ্গ গঠন করে, একইভাবে একাধিক ব্যক্তি মিলে সমাজের বিভিন্ন অংশ গঠন করে। ৫। সমাজ ও জীব উভয়ই মূলত তিন ধরনের তন্ত্র বা ব্যবস্থার ওপর টিকে থাকে। এরা হলো - বিপাক তন্ত্র (sustaining system), সংবহন তন্ত্র (distributor or circulatory system), স্নায়ু তন্ত্র (regulatory system). জীবের জন্য খাদ্য হলো এর চালিকা শক্তি, সমাজের ক্ষেত্রে যা হলো কৃ...

আমার লেখা বই

আমার সর্বশেষ উপন্যাস অধিনায়ক শাখা -  উপন্যাস প্রকাশকাল -  ফেব্রুয়ারি, ২০২০ প্রকাশক -   ভাষাচিত্র প্রচ্ছদ -  রাজীব দত্ত অধিনায়ক পড়ুন আমার প্রথম উপন্যাস রঙবাহার শাখা - উপন্যাস প্রকাশকাল - ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ প্রকাশক - ভাষাচিত্র প্রচ্ছদ -  তৌহিন হাসান রঙবাহার পড়ুন আমার দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ অপরূপকথা শাখা -  ছোটগল্প সংকলন প্রকাশকাল -  ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ প্রকাশক -   ভাষাচিত্র  প্রচ্ছদ - তৌহিন হাসান অপরূপকথা পড়ুন আমার প্রথম গল্পগ্রন্থ ভূতলোজি কিংবা চিত্তশুদ্ধি শাখা -  ছোটগল্প সংকলন   প্রকাশকাল -  ফেব্রুয়ারি, ২০১২ প্রকাশক -   ভাষাচিত্র  প্রচ্ছদ -  বিক্রমাদিত্য বইটি সম্পর্কে আরো জানুন বিক্রমাদিত্য's books on Goodreads রঙবাহার reviews: 1 ratings: 1 (avg rating 5.00) অধিনায়ক ...

TFP 415 WORLD CINEMA : Class Notes

Aug 14, 2023 LECTURE 2 Expressionism Reality is distorted Artist’s personal feeling From Northern Europe How did it begin? Effects of WWI  Foreign film banned Horror, insecurity, and paranoia From German romanticism  ENLIGHTENMENT ROMANTICISM Reason Emotion Progress Common good Individuality Unique potential Science and technology Rational, ordered society Nature and imagination Spontaneous, passionate life Social conventions and institutions  Resistance to social conventions and institutions First appeared in poetry and theater “The world is a laboratory” by Gottfried Benn Characteristics of german expressionist theater Distorted and exaggerated sets, props, and costumes Unease and anxiety Symbolism- character might be represented by an animal or object or a particular color Non-linear plot Confusion and disorientation Fragmented nature of the human experience The threepenny opera (1928) by bertolt brecht Characteristics of german expressionism The subjective view of the...

স্বর্গচূড়া

অবশেষে, একদিন, এতবছরের অপেক্ষার পর ট্রেনটা পেলাম আমি। সঙ্গের পোটলা-পুটলিগুলো প্রথমে কামরার ভেতর ছুঁড়ে দিলাম। তারপর নিজের নাম মুখে নিয়ে ঝাঁপিয়ে উঠলাম ট্রেনে। গাড়িটা এক মুহূর্ত থামে না প্লাটফর্মে। জোর গতিতে ছুটে চলে। কারো জন্য অপেক্ষা করতে নারাজ। একজনের জীবনে একবার বই দু’বার কখনো আসে না। পাল্লা দিয়ে ছুটে তাকে ধরতে হয়। নইলে নাই। অন্য গাড়ি ধরতে হবে। কিন্তু সে গাড়ি যাবে আরেক গন্তব্যে। ট্রেনের দরজা দিয়ে বাইরে উঁকি দিলাম। প্লাটফর্মে সাথীকে দেখতে পাই। হাত নেড়ে বিদায় জানাচ্ছে অথচ ঠোঁটে হাসি নাই। শুনতে পেলাম মনে মনে কেবল বলছে, তোমার যাত্রা শুভ হোক। (২) প্রথম কবে সাথীর দেখা পেয়েছিলাম ভালো মনে পড়ে না। মনে পড়ে, মন খারাপ করে প্লাটফর্মে বসে ছিলাম। সাথীকে পেয়ে মন ভালো হয়ে গিয়েছিল। কেন, তা মনে নাই। এরপর কত দিন, কত রাত পাশাপাশি বসে কেটে গেল। আমি আর সাথী। স্টেশন জুড়ে এত এত মুখ। কাউকে মনে ধরে নি। সাথী বাদে। সাথীর স্বজনরা একই স্টেশনে ছিল। তবু ও ছিল একা। কী জানি কেন, কখনো জিগ্যেস করা হয় নি। কিন্তু সাথী অনেক প্রশ্ন করত আমাকে। খুব অবাক হতো যে অন্যদের মতো আমার শরীরে কেন বাঁধন নাই। আমার মা-বাবার কথা জিগ...

THE ART OF SEDUCTION by Robert Greene

রবার্ট গ্রিন এখানে ‘সিডাকশন’ কথাটাকে ব্যবহার করেছেন শুধুমাত্র যৌন প্রলোভন হিসেবে নয়, বরং আরো ব্যাপক অর্থে—রাজনৈতিক, সামাজিক বা অন্যান্য ক্ষেত্রে যেই প্রলোভন প্রযোজ্য। এই প্রলোভনের নীতিগুলো জানলে নিজেকে ও নিজের সম্পর্কগুলোকে আরেকটু ভালোভাবে ঝালাই করা যাবে। সেইসাথে তাদের প্রয়োগ করা যাবে ব্যক্তিগত ও পেশাদার জীবনে।    সারকথা প্রলোভন ব্যাপারটাই মনস্তত্ত্বের খেলা, সৌন্দর্যের না। ফলে এই খেলার একজন ওস্তাদ হয়ে ওঠা যেকোন মানুষেরই আয়ত্ত্বে আছে। এমন নয় যে, একজন প্রলোভনকারী তার ক্ষমতাটাকে একবার চালু আর একবার বন্ধ করেন—প্রতিটা সামাজিক ও ব্যক্তিগত লেনদেনই তার কাছে প্রলোভনের একেকটা সুযোগ। সুযোগের একটা মুহূর্তও নষ্ট করার নাই। প্রলোভনকারীরা কখনো আত্মনিমগ্ন থাকে না। তাদের দৃষ্টি থাকে বাইরের দিকে, ভিতরের দিকে নয়।  প্লেজার বা পুলক হলো আমাদেরকে আমাদের সীমার বাইরে টেনে নিয়ে যাওয়ার অনুভূতি, উদ্বেলিত করে দেওয়ার অনুভূতি—তা হতে পারে মানুষের দ্বারা, বা কোনো ঘটনার দ্বারা।  শেষত, যারা কিনা প্রলোভনকারী, তাদের দুনিয়াদারির সাথে নৈতিকতা ব্যাপারটার সম্পর্ক একদম নাই। প্রতিটা প্রলোভনের দুইটা উপাদান থাকে...

মিডিয়া সাক্ষরতা : আদিপর্ব

মিডিয়া সাক্ষরতা ও এ সংক্রান্ত যাবতীয় জিজ্ঞাসা - মিডিয়া নিজে যতটা প্রাচীন তার চেয়ে কম পুরনো নয়। বর্তমানে তথ্য ও তথ্যপ্রযুক্তির সহজলভ্যতা মিডিয়া সাক্ষরতাকে অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে বেশি প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে সত্য। কিন্তু মিডিয়ার প্রভাব ও মিডিয়া সাক্ষরতার গুরুত্ব নিয়ে নানা প্রশ্ন অনেক অনেক আগে থেকেই আলোচিত হয়ে এসেছে। এটাও লক্ষণীয় যে মিডিয়ার পক্ষে-বিপক্ষে বিভিন্ন বিতর্ক একইসাথে নবাগত প্রযুক্তি, শিল্প (আর্ট ও ইন্ডাস্ট্রি উভয় অর্থে), এমনকি সংস্কৃতির গতিপথকে সময় সময় প্রভাবিত করে এসেছে। তবে ১৯৬০ এর দশক পর্যন্ত পরিভাষা বা গবেষণাক্ষেত্র হিসাবে এর অস্তিত্ব ছিল না। যতদিন না বিষয়টি যোগাযোগ স্কলার ও মিডিয়া প্রফেশনালদের কাজের ক্ষেত্র হয়ে ওঠে তার আগ পর্যন্ত (কিংবা এখনো কিছুসময়) যোগাযোগ সংশ্লিষ্ট ভাবনাসমূহ পরিচালিত হয়/হয়েছে তাত্ত্বিক, দার্শনিক, সমাজবিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী ও ভাষাতত্ত্ববিদদের দ্বারা। এ যাবৎ মিডিয়া সাক্ষরতা নিয়ে যত তত্ত্বীয় চিন্তা হয়েছে তাতে --- প্লেটো থেকে ফ্রয়েড, সসার (১) থেকে সিক্সাস (২) --- প্রত্যেকেরই রয়েছে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। উৎপত্তি ও সংজ্ঞা এই তথ্য মোটেও অভিন...

বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি : প্রাচীন অর্বাচীন তর্ক

এই লেখাটা ২০১৪ সালে প্রকাশিত হয় যোসেফাইট কালচারাল ফোরামের বার্ষিক ক্রোড়পত্র ত্রিলয়-এ। আমি তখন সেন্ট যোসেফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণির ছাত্র প্রাচীন -  ওই অর্বাচীনদের আমি শতবার সতর্ক করেছি, আর যা-ই করো, আত্মপরিচয় কখনো হারাবে না। স্পষ্টই দেখতে পাচ্ছি এদের সামনে যেন ঘোর অন্ধকার। নিজেদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি সবকিছু ভুলে গিয়ে এরা আজ পাশ্চাত্যের অনুকরণে ব্যস্ত। নিজের চশমার 'স্টাইল'টা যতই বাজে হোক না কেন ওটা পরেই তুমি স্বচ্ছ দেখবে। তা না করে যদি অন্যের চশমা চোখে দাও, তোমাকে মানাবে হয়তো ভালো কিন্তু হোঁচট খেতে হবে পদে পদে। অর্বাচীন - তোমার কথায় কেমন যেন ছাপাখানার গন্ধ। তোমার বয়স হয়েছে। তাই চোখে সমস্যা। চোখের পাতা বন্ধ করে তুমি অতীতটাকে সোনালি রঙের মনে করো। আর চোখ মেলে ভবিষ্যৎ দেখতে গেলেই তোমার মনে হয় সেটা বুঝি অন্ধকার। অর্বাচীনদের যতই গালি দাও।পশ্চিমা চিকিৎসার সাহায্য নিয়েই দেখো না চোখটা ভালো হয় কি না। প্রাচীন - বাবা! আজকালকার ছেলেমেয়েরা এক কথার পিঠে একশ কথাকে চাপায়। আমাদের যুগে বড়রা বলত। ছোটরা শুনত। তার থেকেই শিক্ষা নিত। এখনকার ছেলেমেয়দের কথা ...

ইফরিত

মোহাম্মদপুরের এক ভীষণ ব্যস্ত সড়কের পাশে আমাদের দুই বেড-ড্রয়িং-ডাইনিং এর ভাড়া বাসা। বাসাটা যখন নেয়া হয় তখন আমি তিন মাসের প্রেগন্যান্ট। এই এলাকায় ভাড়া তুলনামূলক বেশি। কিন্তু সদ্য তোলা বাড়ি আর তমালের অফিসও কাছেই হয় তাই ভাবলাম - এই ভালো। বাসায় উঠে গোছগাছ তখনো সারিনি। এক মাস গেছে কি যায়নি তখন থেকে সমস্যাটার শুরু। তমাল অফিস করে ফিরতে রাত নয়টা দশটা বাজত। খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়তেও সময় নিত না। আমি কোনদিন ওর সাথে শুয়ে পড়তাম, কোনদিন গল্পের বই পড়তাম অথবা ডায়েরি লিখতাম। এক রাতে টেবিল ল্যাম্প জ্বেলে কিছু একটা পড়ছি হঠাৎ দরজায় টোকা দেয়ার মতো আওয়াজ পেলাম। আমার কান খুব খাড়া। আওয়াজটা বাইরের ঘর থেকে এসেছে বুঝতে অসুবিধা হয় না। রাত্রি একটার সময় কে বড় দরজায় টোকা দিবে? পড়ায় মন ফিরিয়েছি মিনিটও হয়নি আবার... নক নক। খুব স্পষ্ট আওয়াজ। ভাবলাম সত্যিই বুঝি কেউ এসেছে। রাত হয়েছে বলে কলিং বেল টিপছে না। উঠে গিয়ে দরজার ফুটোয় চোখ রাখলাম। সারারাত বাহিরের আলো জ্বলত। কাউকে দেখলাম না। ঘরে ফিরে আসার কিছক্ষণের মধ্যেই আবার... নক নক। এবার আর দেখতে গেলাম না। দরকার হয় বেল বাজাবে। শীত করছিল। আলো নিভিয়ে তমালকে জড়িয়ে শুয়ে পড়ল...

TFP 207 Personal Note : SET DESIGN AND ART DIRECTION

FILM AS A GRAPHICO-NARRATIVE STRUCTURE How is film different from other art media? → Every art form has its basic element. For literature, it is the word. For painting, it is paper. While sculptures and architecture are both material arts, the biggest difference between sculpture and architecture is that, unlike the latter, sculptures don’t necessarily require an interior. Theatre is basically about the performance. All these elements are present in the film. However, moving space is the basic element of the film. Space is the predominating feature in a film e.g. the EST shots. Temporality is like music duration that theatre hasn’t. That’s why the film has a leitmotif e.g. the camera in ‘Rear Window’.  The film is a unique art form in the sense that, visual against a specific time is the only prerequisite in film.  Theatre needs casts though it’s not essential for film. A true film should be the one that is difficult to transform in any other media. Although literature and the...