সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

2022 থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

শট লিস্টে যা থাকবে

যদিও প্রত্যেক নির্মাতা যার যার শট লিস্ট আলাদা আলাদাভাবে তৈরি করে থাকেন, তবু কিছু সাধারণ উপাদান থাকেই যা সব লিস্টে পাওয়া যাবে। এর মধ্যে আছে:  ১। শট নম্বর: প্রত্যেক শটের জন্য একটি নির্দিষ্ট সংখ্যা।  ২। শটের বর্ণনা: ক্রিয়াকর্ম আর/অথবা সংলাপের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা।  ৩। শটের আকার: ফ্রেমের মধ্যে সাবজেক্ট কত বড় বা ছোট হবে।  ৪। শটের ধরন: ক্যামেরা অ্যাঙ্গেল, ফ্রেমে কীভাবে সাবজেক্টকে রাখা হবে।  ৫। গতি: ক্যামেরা কীভাবে নড়বে/নড়বে না। ৬। উপাদান: কোন ক্যামেরায় ধারণ করা হবে। ৭। লেন্স: যে লেন্স ব্যবহার করে শটটি ধারণ করা হবে।  ৮। ফ্রেম রেট: যে হারে ফ্রেম ক্যাপচার করা হবে।  ৯। স্থান: যে জায়গায় শটটা নেয়া হবে। ১০। অভিনেতা: ওই শটে যারা অভিনয় করবেন।  ১১। শব্দ: শব্দ/সংলাপ কীভাবে ধারণ করা হবে। ১২। বাড়তি নোট: পরিচালক কলাকুশলীদের বাড়তি যা বলতে চান। 

ছয় ধরনের প্রামাণ্যচিত্র (six modes of documentary)

প্রামাণ্যচিত্রের ধরন [উৎপত্তির সময়কাল] : সাধারণ বৈশিষ্ট্য — সীমাবদ্ধতা কাব্যিক ধরন [১৯২০ এর দশক] : জগতের ভগ্নাংশগুলোকে পুনর্সজ্জিত করে কাব্যিকভাবে — সুনির্দিষ্টতার অভাব, অত্যাধিক বিমূর্ত  ব্যাখ্যামূলক ধরন [১৯২০ এর দশক] : সরাসরি ঐতিহাসিক জগতের ইস্যুগুলোকে সম্বোধন করে — অনেক বেশি উপদেশাত্মক পর্যবেক্ষণমূলক ধরন [১৯৬০ এর দশক] : ধারাভাষ্য ও পুনর্নির্মাণ বর্জন করে; সবকিছু যেভাবে ঘটে সেভাবেই পর্যবেক্ষণ করে — ইতিহাস ও প্রসঙ্গের অভাব অংশগ্রহণমূলক ধরন [১৯৬০ এর দশক] : সাবজেক্টকে সাক্ষাৎকার বা মিথস্ক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করে; আর্কাইভ ফিল্ম ব্যবহার করে ইতিহাসকে পুনরুদ্ধার করে — সাক্ষ্যদাতার ওপর অতিরিক্ত আস্থা, দুর্বল ইতিহাস, অনধিকার প্রবেশ করে আত্মবাচক ধরন [১৯৮০ এর দশক] : প্রামাণ্যচিত্রের কাঠামোকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, অন্যান্য রীতিকে অচেনা করে তোলে — দুরূহ, আসল ইস্যু থেকে দূরবর্তী পরিবেশনামূলক ধরন [১৯৮০ এর দশক] : সাধারণভাবে বস্তুগত হিসেবে বিবেচিত প্রকরণগুলোর ভাবগত আঙ্গিকের ওপর জোর দেয় — বস্তুনিষ্ঠতা থেকে সরে আসার কারণে এই ধরনের ছবিগুলি আভঁ-গার্দ হিসেবে ধরা হতে পারে; শৈলীর ‘অতিরিক্ত’ ব্যবহার

গ্লাস (১৯৫৮) : বার্ট হানস্ত্রা'র স্বল্পদৈর্ঘ্য প্রামাণ্যচিত্র

ওলন্দাজ চিত্রনির্মাতা বার্ট হানস্ত্রা'র গ্লাস চলচ্চিত্রটি ১৯৫৯ সালে হল্যান্ডের প্রথম কোনো ছবি হিসেবে অস্কার লাভ করে। সচরাচর একে 'নিখুঁত স্বল্পদৈর্ঘ্য প্রামাণ্যচিত্র' আখ্যা দেয়া হয়। ছবিটি নেদারল্যান্ডের কাঁচশিল্পকে বিষয় করে কাব্যিক রীতি তে নির্মিত। হানস্ত্রাকে যখন এই বিষয়ের ওপর কাজ করার বরাত দেয়া হয় তখন উনি সিদ্ধান্ত নেন সাদামাটা পরিবেশনের পরিবর্তে শৈল্পিকভাবে বিষয়টিকে উপস্থাপন করার। রঙিন এই চলচ্চিত্রটিতে পরিচালক একদিকে কায়িক শ্রম ও কারুশৈলীর সাহায্যে তৈরি করা শিল্পবস্তুর বিশেষত্ব দেখিয়েছেন। অপরদিকে ক্যামেরার চোখ দিয়ে কটাক্ষ করেছেন ওই একই শিল্পবস্তুর যান্ত্রিক উপায়ে ব্যাপক হারে উৎপাদনকে।            শ্রুতিমধুর জ্যাজ সঙ্গীতকে পশ্চাদপটে রেখে নির্মাতা দেখিয়েছেন ডাচ কাঁচ শ্রমিকরা কীভাবে যত্নের সাথে ছান্দসিকভাবে কাঁচ সামগ্রী  তৈরি করে চলেছেন। এই পর্বের সাথে বিপ্রতীপভাবে রোবোটিক বাজনা সহযোগে দেখিয়েছেন যন্ত্র চালিত কারখানায় সারি সারি বোতলের দ্রুতগতির উৎপাদন। যদিও মানুষকে না জড়িয়ে সেখানে নিরবিচ্ছিন্ন কাজ চলে না। যার তাৎক্ষণিক প্রমাণ হিসেবে দেখি, একটি ভাঙা...

কমলা পরীর গল্প

দ্বিতীয় অধ্যায় বারো বছর আগে এই স্টেশনটাকেই আর্তনাদ শুষে নেয়ার মতো প্রকাণ্ড মনে হতো। ফটকের ওপর লোহার যে ঐরাবত ছিল, নাটোর রাজবংশের প্রতীক, জমিদারি প্রথার সাথে সাথে তারও উচ্ছেদ ঘটেছে। প্লাটফর্মের উল্টোদিকে আতা গাছের যে বনটা—নাই—এখন সামান্য ঝোপঝাড়। দেশভাগের পর লোকের আনাগোনা—সাথে নতুন রাস্তা, কারবার, কারখানা— স্টেশন রোডের ধারেই কারবালা—নাকি সেই সুদূর মগধ ও মিথিলা থেকে এসে বসতি গড়েছে।  ‘যে নাটোর দেখে গেছিস—’ ছিগড়ু দুই দিকে মাথা নাড়তে নাড়তে বলে, ‘মানুষ এখন নিঙরে খাচ্ছে শহরটাকে।’  বদলে গেছে, হ্যাঁ। তবু জানালার বাইরে একেকটা ক্ষেত সাঁ সাঁ পেছনে ফেলে নাটোরের যত কাছে এগিয়েছি ঢিপঢিপ বেড়েছেই। তবু প্লাটফর্মে পা রাখতেই সারা শরীর টলে উঠেছিল… এত সুন্দর এত সুন্দর… এই বুঝি পড়ে গেলাম। তবু অরণ্যের একেবারে গভীরে, অনেক দূর শিকড় গেড়ে বসা যন্ত্রণার মহীরুহ মোচড় দিয়ে জানিয়েছে, এখনো আছি। এখনো আছে। আমার শ্বাস আটকে যায় এখনো—সেই নাটোর, সেই রূপ, সেই ব্যথা…  স্টেশনের বাইরে বাজার বসে এখন। কাঁচাবাজারের দিকে প্রথম ঝলক তাকিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ি, ‘ছিগড়ু একটু আস্তে হাঁট্ না ভাই—’ ডালিতে ডালিতে উপচে উপচে পড়ছে প্রকৃতির...

অপাপবিদ্ধা

ইন্দ্রদা সেদিনকার ছবি দেখে বলেছিলেন আমাকে গোলাপি শাড়িতে মানায়। খুব সহজভাবে বললেন—বৌদির সামনেই। তার পক্ষেই সম্ভব এভাবে বলা যেহেতু লোকটার মনে কোনো দাগ নাই। নিষ্পাপ বলেই এত সুন্দর ছিল বলাটা। আমার যে মন—এদিককার লজ্জা সামলাতে সামলাতেই চোরা চোখে বৌদির প্রতিক্রিয়া দেখে নিয়েছিলাম। অমায়িক। স্বাভাবিক না?  অথচ আমি এরকম কল্পনাও করতে পারি না। না, আমি বৌদির চেয়ে কম সুন্দর নই—বরং উল্টা, রঞ্জুই বলে—তবু যে জানি কারো প্রতি রঞ্জুর এরকম প্রশংসার অর্থ সেই মেয়ের সাথে ও বিছানায় যেতে চায়। বৌদির জায়গায় আমি হলে প্রার্থনা করতাম আমার স্বামীর যেন সেই ডাইনির সাথে মোলাকাত না-হয় আর কোনোদিন। অসহ্য।  বৌদির কী ভাগ্য। ভাবনাটা আমাকে পোড়ায় অস্বীকার করব না। এই ভাবনাটা: আমাদের পৃথিবীতে বিশ্বস্ত পুরুষ বলে কোনো সৃষ্টি আছে, অথচ আমার কপালে তা জোটেনি। বিশ্বস্ত, যত্নবান, সমঝদার। বৌদি অনর্গল স্তুতি করতে পারে মানুষটার—আমি শুনি, ভালোও লাগে—কিন্তু আমি পারি না আমারজনকে নিয়ে ওভাবে বলতে, পারব না, কোনোদিন পারিনি। ওই যে ইন্দ্রদা বিভিন্ন জনের সাথে হেসে হেসে কথা বলছেন, যুবতীরাও আছে তাদের মধ্যে। বৌদি একদম নিশ্চিন্তে আরেক জায়গায়। আমি...