সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

হবু চলচ্চিত্রকারের অবশ্যপাঠ্য ১০ বই

চিত্রনাট্যের গুরু কার্ল উইলিয়ামস ১০টি বইয়ের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা দিয়েছেন যা উঠতি চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জন্য অবশ্যপাঠ্য। 

📘 Adventures in the Screen Trade – উইলিয়াম গোল্ডম্যান (১৯৮৩)

বর্ণনা:
Butch Cassidy and the Sundance Kid, Marathon Man, All the President’s Men, এবং The Princess Bride–এর মতো কালজয়ী সিনেমার চিত্রনাট্যকার উইলিয়াম গোল্ডম্যান তাঁর ক্যারিয়ারের রসাল, কখনও হাস্যকর, কখনও তিক্ত অভিজ্ঞতার বিবরণ এই বইতে দিয়েছেন। এটিই প্রথম বই যেটি পেশাদার স্ক্রিনরাইটিং জগতের অন্তরালের ছবি জনসাধারণের সামনে এনেছিল। এই বই আংশিকভাবে হলিউডের নিষ্ঠুর বাস্তবতা এবং সৃষ্টিশীলতার সংকট নিয়ে একটি সতর্কবার্তাও। বইটির শুরুতেই গোল্ডম্যান যে বাক্যটি বলেছেন — “Nobody knows anything” — তা সিনেমাপ্রেমীদের কাছে আজও একটি কাল্ট উক্তি।


📘 Spike Lee’s Gotta Have It – স্পাইক লি (১৯৮৭)

বর্ণনা:
She’s Gotta Have It সিনেমা তৈরির প্রক্রিয়ার একেবারে মাঠ পর্যায়ের খুঁটিনাটি বিবরণ আছে এই বইয়ে, যা স্পাইক লি’র শুটিংকালীন জার্নালের ওপর ভিত্তি করে লেখা। She’s Gotta Have It ছিল ইন্ডিপেন্ডেন্ট সিনেমার আধুনিক যুগের সূচনাকারী ছবিগুলোর একটি। তিনি পরে এটি Netflix সিরিজ হিসেবেও নির্মাণ করেন। আমার সবচেয়ে স্মরণীয় অংশ ছিল — যখন স্পাইক লি নিজের ছোট নিউ ইয়র্ক অ্যাপার্টমেন্টে একটি ভাড়া করা এডিটিং কনসোল (সম্ভবত একটি Steenbeck) ঢুকানোর চেষ্টা করছেন।


📘 Making Movies – সিডনি লুমেট (১৯৯৬)

বর্ণনা:
Serpico, Dog Day Afternoon, Network এবং The Verdict এর মতো নিউ ইয়র্ক-ভিত্তিক কালজয়ী সিনেমার পরিচালক লুমেট এখানে সিনেমা তৈরির পুরো প্রক্রিয়াকে খুলে বলেছেন। যাদের মনে হয় বড় তারকা আর দারুণ স্ক্রিপ্ট থাকলেই কাজ সহজ, তাদের জন্য এটি একটি বাস্তবতা চেতনকারী পাঠ। তবে পুরো বইটি শেষ পর্যন্ত অনুপ্রেরণাদায়ক এবং একেকটা অধ্যায় একেকটা মাস্টারক্লাস।


📘 Rebel Without a Crew – রবার্ট রড্রিগেজ (১৯৯৬)

বর্ণনা:
মাত্র $৭,০০০ বাজেটে এমন এক স্টাইলিশ, চমকপ্রদ ও ভিজুয়ালি উইটি সিনেমা বানানো — সত্যিই অবিশ্বাস্য। রড্রিগেজ এই বইতে বিশদভাবে বলেছেন কিভাবে তিনি কাজটি করেছেন। এটি অনেকটাই সিনেমার একটা “বোনাস ফিচার” পড়ার মতো। তার আবেগ ও ডেডিকেশন পুরো বই জুড়ে এক অদ্ভুত এনার্জি সৃষ্টি করে — এবং আপনি এই বই পড়ে নিশ্চিতভাবে বুঝতে পারবেন, আপনিও খুব কম বাজেটে একটি ভালো সিনেমা বানাতে পারেন।


📘 Every Frame a Rembrandt – অ্যান্ড্রু লাজলো (২০০০)

বর্ণনা:
দক্ষিণ কমফোর্ট, The Warriors, Rambo: First Blood, Streets of Fire এবং Innerspace–এর মতো সিনেমার সিনেমাটোগ্রাফার অ্যান্ড্রু লাজলো তাঁর দীর্ঘ ক্যারিয়ারের অভিজ্ঞতা দিয়ে সিনেমাটোগ্রাফির মূল পাঠ এখানে শিখিয়েছেন। প্রতিটি সিনেমার সেট থেকে উঠে আসা বাস্তব গল্প সিনেমাটোগ্রাফির ভিজুয়াল চ্যালেঞ্জগুলোকে পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করে। এটি তাঁর বিখ্যাত দুই দিনের সিনেমাটোগ্রাফি ওয়ার্কশপের বই সংস্করণ।


📘 In the Blink of an Eye – ওয়াল্টার মার্চ (২০০১)

বর্ণনা:
The Godfather ট্রিলজি, Ghost, The English Patient, এবং Apocalypse Now–এর মতো সিনেমার এডিটর মার্চ এখানে ফিল্ম এডিটিং–এর শিল্প ও মনস্তাত্ত্বিক দিক ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁর “Rule of 6” এখন এডিটিং জগতের ক্লাসিক থিওরি। মার্চ প্রথম ব্যক্তি যিনি "Sound Designer" হিসেবে অনস্ক্রিন ক্রেডিট পেয়েছেন এবং তিনিই প্রথম সম্পূর্ণ ফিচার ফিল্ম Final Cut Pro তে এডিট করেন (Cold Mountain)। ফিল্ম এডিটরদের জন্য এটি একটি আবশ্যিক রেফারেন্স বই।


📘 If It's Purple, Someone’s Gonna Die – প্যাটি বেলান্টনি (২০০৫)

বর্ণনা:
এই বইটি রঙের প্রতীকমূলক ব্যবহার ও সিনেমায় তার আবেগপ্রবণ প্রভাব বিশ্লেষণ করে। লেখিকা যুক্তি দেন যে নির্দিষ্ট রঙের ব্যবহার (উদ্দেশ্যপূর্ণ বা অবচেতনে) দর্শকের আবেগ সৃষ্টি করতে পারে। বইটির হাইলাইট — Henry BumsteadRoger Deakins–এর মতো দিকপালদের ইন্টারভিউ। যদিও এটি প্রোডাকশন ডিজাইনারদের জন্য লেখা, কিন্তু আমি একজন স্ক্রিপ্ট লেখার শিক্ষক হিসেবে এটিকে ভিজ্যুয়াল স্টোরিটেলিং শেখানোর এক মূল্যবান হাতিয়ার হিসেবে পেয়েছি।


📘 The War of Art – স্টিফেন প্রেসফিল্ড (২০০২)

বর্ণনা:
The Legend of Bagger Vance–এর লেখক প্রেসফিল্ড এখানে সৃজনশীল ব্যারিয়ার (বিশেষ করে রাইটারদের জন্য) কিভাবে অতিক্রম করা যায়, তা বলেছেন একেবারে বাস্তবভাবে। লেখকের ভাষায়, সাদা পৃষ্ঠায় শব্দ তোলার যন্ত্রণার মধ্য দিয়েই সৃষ্টির পথ তৈরি হয়। বইটি আপনার ক্রিয়েটিভ ব্লক কাটাতে সাহায্য করবে। সংক্ষিপ্ত, প্রেরণাদায়ক ও প্র্যাকটিক্যাল — লেখালেখির খরা কাটাতে একটি মোক্ষম দাওয়াই।


📘 So You Want to Be a Producer – লরেন্স টারম্যান (২০০৫)

বর্ণনা:
The Graduate, The Thing, Short Circuit, The River Wild, American History X–এর প্রযোজক লরেন্স টারম্যান এখানে প্রোডিউসিং-এর বাস্তব জগৎ তুলে ধরেছেন। পুরো সিনেমা প্রোডাকশনের প্রতিটি ধাপ — অর্থ সংগ্রহ, ট্যালেন্ট হায়ার, প্রোমোশন ইত্যাদি — এখানে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তিনি USC–এর Peter Stark Producing Program এর দীর্ঘদিনের চেয়ার ছিলেন। একটি টোটাল গাইড টু ফিল্ম প্রোডাকশন — বাস্তববাদী এবং প্রায়োগিক উভয় দিক থেকেই।


📘 Letters to Young Filmmakers – হাওয়ার্ড সুবার (২০১২)

বর্ণনা:
UCLA–র প্রখ্যাত শিক্ষক সুবার এই বইতে তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জন্য সারাজীবনের শিক্ষা ও প্রেরণা একত্র করেছেন। Rilke’s Letters to a Young Poet–এর অনুপ্রেরণায় লেখা এই বইটি স্বল্পায়ু পাঠ হলেও দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে। “Write what you know” – এই প্রচলিত পরামর্শ নিয়ে তাঁর সংশয়বাদী বিশ্লেষণ অসাধারণ। “Decisions” নামক অধ্যায়টি শুধু নির্মাতাদের জন্য নয়, জীবন চালনার পথনির্দেশ হিসেবেও কাজ করে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

48 LAWS OF POWER by Robert Greene and Joost Elffers

Vladimir Putin The definition of power in 21st century

হারবার্ট স্পেনসারের 'জৈবিক সাদৃশ্যবাদ'

ইংরেজ সমাজতত্ত্ববিদ ও জীববিজ্ঞানী হারবার্ট স্পেনসারকে বলা হয় সমাজবিজ্ঞানের দ্বিতীয় জনক। তিনি 'সামাজিক ডারউইনবাদ'-এর একজন প্রচারক। স্পেনসারের বিখ্যাত 'জৈবিক সাদৃশ্যবাদ' সমাজ ও জীবকে বিশেষ সাদৃশ্যপূর্ণ বলে দাবি করে। হারবার্ট স্পেনসার (১৮২০-১৯০৩) ১। সমাজ ও জীব উভয়েই আকারে বৃদ্ধি পায়। মানবশিশু প্রাপ্তবয়স্ক হয়। মহল্লা থেকে মেট্রোপলিটন হয়, ক্ষুদ্র রাষ্ট্র থেকে সাম্রাজ্য তৈরি হয়।   ২। প্রত্যেকে আকারে যত বড় হয় উভয়ের কাঠামো জটিলতর হতে থাকে। ৩। দুই ক্ষেত্রেই, কাঠামোগত পার্থক্যের কারণে কার্যকারিতায় অনুরূপ পার্থক্য দেখা দেয়। ৪। জীবদেহ ও সমাজ উভয়েই ক্ষুদ্রতর একক দ্বারা গঠিত। জীবের যেমন কোষ রয়েছে তেমন সমাজের রয়েছে ব্যক্তি। একাধিক কোষ মিলে যেভাবে বৃহত্তর অঙ্গ গঠন করে, একইভাবে একাধিক ব্যক্তি মিলে সমাজের বিভিন্ন অংশ গঠন করে। ৫। সমাজ ও জীব উভয়ই মূলত তিন ধরনের তন্ত্র বা ব্যবস্থার ওপর টিকে থাকে। এরা হলো - বিপাক তন্ত্র (sustaining system), সংবহন তন্ত্র (distributor or circulatory system), স্নায়ু তন্ত্র (regulatory system). জীবের জন্য খাদ্য হলো এর চালিকা শক্তি, সমাজের ক্ষেত্রে যা হলো কৃ...

আমার লেখা বই

আমার সর্বশেষ বই বাংলায় শিখি ফরাসি ভাষা শাখা: ভাষাশিক্ষা প্রকাশকাল: ২০২৪ প্রচ্ছদ:  বইটি পড়ুন আমার পঞ্চম বই চিত্রনাট্যচিত্রণ: কাহিনি ও চিত্রনাট্য লেখার কলাকৌশল শাখা: চিত্রনাট্য প্রকাশকাল: ২০২৪ প্রচ্ছদ: পার্থপ্রতিম দাস বইটি পড়ুন আমার সর্বশেষ উপন্যাস অধিনায়ক শাখা: উপন্যাস প্রকাশকাল: ২০২০ প্রচ্ছদ: রাজীব দত্ত বইটি পড়ুন আমার প্রথম উপন্যাস রঙবাহার শাখা: উপন্যাস প্রকাশকাল: ২০১৫ প্রচ্ছদ: তৌহিন হাসান বইটি পড়ুন আমার দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ অপরূপকথা শাখা: গল্প সঙ্কলন প্রকাশকাল: ২০১৩ প্রচ্ছদ: তৌহিন হাসান বইটি পড়ুন আমার প্রথম গল্পগ্রন্থ ভূতলোজি কিংবা চিত্তশুদ্ধি শাখা: গল্প সঙ্কলন প্রকাশকাল: ২০১২ প্রচ্ছদ: বিক্রমাদিত্য বইটি সম্পর্কে জানুন My books on Goodreads রঙবাহার (avg rating 5.00) অপরূপকথা (avg rating 5.00) অধিনায়ক ভূতলোজি কিংবা চিত্তশুদ্ধি বাংলায় শিখি ফরাসি ভাষা

48 Laws of Power in Bangla Free PDF Download

বিনামূল্যে ই-বুক পিডিএফ ডাউনলোড করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন সরাসরি পড়তে এখানে ক্লিক করুন বিক্রমাদিত্য's books on Goodreads রঙবাহার reviews: 1 ratings: 2 (avg rating 5.00) অপরূপকথা ratings: 1 (avg rating 5.00) অধিনায়ক ভূতলোজি কিংবা চিত্তশুদ্ধি বাংলায় শিখি ফরাসি ভাষা Goodreads reviews for রঙবাহার Reviews from Goodreads.com রাজাদের রাজ্যে রাষ্ট্ররা by রিফু My rating: 5 of 5 stars ডেস্কে বই জমছেই, ছোটগল্পের বই বাদে, পাই না, লেখে না কেউ—জানি কী লেখে—গাছ মারে শুধু শুধু। রিফুর বই আব্বা অল স্টার রেকমেন্ডেশনসহ দিয়ে গেল। গল্প-কবিতা-ক্যাপশনে ‘রাষ্ট্র’ ‘রাষ্ট্র’ ‘রাষ্ট্র’ লিখতে লিখতে ছাবাছাবা করে ফেলেছে সবাই, তারপরও, এই নামকরণটায় বাড়তি মাথা খাটানোর ইঙ্গিত আছে। এক ঘণ্টায় বইয়ের অর্ধেক পড়েছি, চোখের আন...

TFP 415 WORLD CINEMA : Class Notes

Aug 14, 2023 LECTURE 2 Expressionism Reality is distorted Artist’s personal feeling From Northern Europe How did it begin? Effects of WWI  Foreign film banned Horror, insecurity, and paranoia From German romanticism  ENLIGHTENMENT ROMANTICISM Reason Emotion Progress Common good Individuality Unique potential Science and technology Rational, ordered society Nature and imagination Spontaneous, passionate life Social conventions and institutions  Resistance to social conventions and institutions First appeared in poetry and theater “The world is a laboratory” by Gottfried Benn Characteristics of german expressionist theater Distorted and exaggerated sets, props, and costumes Unease and anxiety Symbolism- character might be represented by an animal or object or a particular color Non-linear plot Confusion and disorientation Fragmented nature of the human experience The threepenny opera (1928) by bertolt brecht Characteristics of german expressionism The subjective view of the...

THE ART OF SEDUCTION by Robert Greene

রবার্ট গ্রিন এখানে ‘সিডাকশন’ কথাটাকে ব্যবহার করেছেন শুধুমাত্র যৌন প্রলোভন হিসেবে নয়, বরং আরো ব্যাপক অর্থে—রাজনৈতিক, সামাজিক বা অন্যান্য ক্ষেত্রে যেই প্রলোভন প্রযোজ্য। এই প্রলোভনের নীতিগুলো জানলে নিজেকে ও নিজের সম্পর্কগুলোকে আরেকটু ভালোভাবে ঝালাই করা যাবে। সেইসাথে তাদের প্রয়োগ করা যাবে ব্যক্তিগত ও পেশাদার জীবনে।    সারকথা প্রলোভন ব্যাপারটাই মনস্তত্ত্বের খেলা, সৌন্দর্যের না। ফলে এই খেলার একজন ওস্তাদ হয়ে ওঠা যেকোন মানুষেরই আয়ত্ত্বে আছে। এমন নয় যে, একজন প্রলোভনকারী তার ক্ষমতাটাকে একবার চালু আর একবার বন্ধ করেন—প্রতিটা সামাজিক ও ব্যক্তিগত লেনদেনই তার কাছে প্রলোভনের একেকটা সুযোগ। সুযোগের একটা মুহূর্তও নষ্ট করার নাই। প্রলোভনকারীরা কখনো আত্মনিমগ্ন থাকে না। তাদের দৃষ্টি থাকে বাইরের দিকে, ভিতরের দিকে নয়।  প্লেজার বা পুলক হলো আমাদেরকে আমাদের সীমার বাইরে টেনে নিয়ে যাওয়ার অনুভূতি, উদ্বেলিত করে দেওয়ার অনুভূতি—তা হতে পারে মানুষের দ্বারা, বা কোনো ঘটনার দ্বারা।  শেষত, যারা কিনা প্রলোভনকারী, তাদের দুনিয়াদারির সাথে নৈতিকতা ব্যাপারটার সম্পর্ক একদম নাই। প্রতিটা প্রলোভনের দুইটা উপাদান থাকে...

স্বর্গচূড়া

অবশেষে, একদিন, এতবছরের অপেক্ষার পর ট্রেনটা পেলাম আমি। সঙ্গের পোটলা-পুটলিগুলো প্রথমে কামরার ভেতর ছুঁড়ে দিলাম। তারপর নিজের নাম মুখে নিয়ে ঝাঁপিয়ে উঠলাম ট্রেনে। গাড়িটা এক মুহূর্ত থামে না প্লাটফর্মে। জোর গতিতে ছুটে চলে। কারো জন্য অপেক্ষা করতে নারাজ। একজনের জীবনে একবার বই দু’বার কখনো আসে না। পাল্লা দিয়ে ছুটে তাকে ধরতে হয়। নইলে নাই। অন্য গাড়ি ধরতে হবে। কিন্তু সে গাড়ি যাবে আরেক গন্তব্যে। ট্রেনের দরজা দিয়ে বাইরে উঁকি দিলাম। প্লাটফর্মে সাথীকে দেখতে পাই। হাত নেড়ে বিদায় জানাচ্ছে অথচ ঠোঁটে হাসি নাই। শুনতে পেলাম মনে মনে কেবল বলছে, তোমার যাত্রা শুভ হোক। (২) প্রথম কবে সাথীর দেখা পেয়েছিলাম ভালো মনে পড়ে না। মনে পড়ে, মন খারাপ করে প্লাটফর্মে বসে ছিলাম। সাথীকে পেয়ে মন ভালো হয়ে গিয়েছিল। কেন, তা মনে নাই। এরপর কত দিন, কত রাত পাশাপাশি বসে কেটে গেল। আমি আর সাথী। স্টেশন জুড়ে এত এত মুখ। কাউকে মনে ধরে নি। সাথী বাদে। সাথীর স্বজনরা একই স্টেশনে ছিল। তবু ও ছিল একা। কী জানি কেন, কখনো জিগ্যেস করা হয় নি। কিন্তু সাথী অনেক প্রশ্ন করত আমাকে। খুব অবাক হতো যে অন্যদের মতো আমার শরীরে কেন বাঁধন নাই। আমার মা-বাবার কথা জিগ...

মিডিয়া সাক্ষরতা : আদিপর্ব

মিডিয়া সাক্ষরতা ও এ সংক্রান্ত যাবতীয় জিজ্ঞাসা - মিডিয়া নিজে যতটা প্রাচীন তার চেয়ে কম পুরনো নয়। বর্তমানে তথ্য ও তথ্যপ্রযুক্তির সহজলভ্যতা মিডিয়া সাক্ষরতাকে অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে বেশি প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে সত্য। কিন্তু মিডিয়ার প্রভাব ও মিডিয়া সাক্ষরতার গুরুত্ব নিয়ে নানা প্রশ্ন অনেক অনেক আগে থেকেই আলোচিত হয়ে এসেছে। এটাও লক্ষণীয় যে মিডিয়ার পক্ষে-বিপক্ষে বিভিন্ন বিতর্ক একইসাথে নবাগত প্রযুক্তি, শিল্প (আর্ট ও ইন্ডাস্ট্রি উভয় অর্থে), এমনকি সংস্কৃতির গতিপথকে সময় সময় প্রভাবিত করে এসেছে। তবে ১৯৬০ এর দশক পর্যন্ত পরিভাষা বা গবেষণাক্ষেত্র হিসাবে এর অস্তিত্ব ছিল না। যতদিন না বিষয়টি যোগাযোগ স্কলার ও মিডিয়া প্রফেশনালদের কাজের ক্ষেত্র হয়ে ওঠে তার আগ পর্যন্ত (কিংবা এখনো কিছুসময়) যোগাযোগ সংশ্লিষ্ট ভাবনাসমূহ পরিচালিত হয়/হয়েছে তাত্ত্বিক, দার্শনিক, সমাজবিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী ও ভাষাতত্ত্ববিদদের দ্বারা। এ যাবৎ মিডিয়া সাক্ষরতা নিয়ে যত তত্ত্বীয় চিন্তা হয়েছে তাতে --- প্লেটো থেকে ফ্রয়েড, সসার (১) থেকে সিক্সাস (২) --- প্রত্যেকেরই রয়েছে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। উৎপত্তি ও সংজ্ঞা এই তথ্য মোটেও অভিন...

ইফরিত

মোহাম্মদপুরের এক ভীষণ ব্যস্ত সড়কের পাশে আমাদের দুই বেড-ড্রয়িং-ডাইনিং এর ভাড়া বাসা। বাসাটা যখন নেয়া হয় তখন আমি তিন মাসের প্রেগন্যান্ট। এই এলাকায় ভাড়া তুলনামূলক বেশি। কিন্তু সদ্য তোলা বাড়ি আর তমালের অফিসও কাছেই হয় তাই ভাবলাম - এই ভালো। বাসায় উঠে গোছগাছ তখনো সারিনি। এক মাস গেছে কি যায়নি তখন থেকে সমস্যাটার শুরু। তমাল অফিস করে ফিরতে রাত নয়টা দশটা বাজত। খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়তেও সময় নিত না। আমি কোনদিন ওর সাথে শুয়ে পড়তাম, কোনদিন গল্পের বই পড়তাম অথবা ডায়েরি লিখতাম। এক রাতে টেবিল ল্যাম্প জ্বেলে কিছু একটা পড়ছি হঠাৎ দরজায় টোকা দেয়ার মতো আওয়াজ পেলাম। আমার কান খুব খাড়া। আওয়াজটা বাইরের ঘর থেকে এসেছে বুঝতে অসুবিধা হয় না। রাত্রি একটার সময় কে বড় দরজায় টোকা দিবে? পড়ায় মন ফিরিয়েছি মিনিটও হয়নি আবার... নক নক। খুব স্পষ্ট আওয়াজ। ভাবলাম সত্যিই বুঝি কেউ এসেছে। রাত হয়েছে বলে কলিং বেল টিপছে না। উঠে গিয়ে দরজার ফুটোয় চোখ রাখলাম। সারারাত বাহিরের আলো জ্বলত। কাউকে দেখলাম না। ঘরে ফিরে আসার কিছক্ষণের মধ্যেই আবার... নক নক। এবার আর দেখতে গেলাম না। দরকার হয় বেল বাজাবে। শীত করছিল। আলো নিভিয়ে তমালকে জড়িয়ে শুয়ে পড়ল...

বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি : প্রাচীন অর্বাচীন তর্ক

এই লেখাটা ২০১৪ সালে প্রকাশিত হয় যোসেফাইট কালচারাল ফোরামের বার্ষিক ক্রোড়পত্র ত্রিলয়-এ। আমি তখন সেন্ট যোসেফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণির ছাত্র প্রাচীন -  ওই অর্বাচীনদের আমি শতবার সতর্ক করেছি, আর যা-ই করো, আত্মপরিচয় কখনো হারাবে না। স্পষ্টই দেখতে পাচ্ছি এদের সামনে যেন ঘোর অন্ধকার। নিজেদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি সবকিছু ভুলে গিয়ে এরা আজ পাশ্চাত্যের অনুকরণে ব্যস্ত। নিজের চশমার 'স্টাইল'টা যতই বাজে হোক না কেন ওটা পরেই তুমি স্বচ্ছ দেখবে। তা না করে যদি অন্যের চশমা চোখে দাও, তোমাকে মানাবে হয়তো ভালো কিন্তু হোঁচট খেতে হবে পদে পদে। অর্বাচীন - তোমার কথায় কেমন যেন ছাপাখানার গন্ধ। তোমার বয়স হয়েছে। তাই চোখে সমস্যা। চোখের পাতা বন্ধ করে তুমি অতীতটাকে সোনালি রঙের মনে করো। আর চোখ মেলে ভবিষ্যৎ দেখতে গেলেই তোমার মনে হয় সেটা বুঝি অন্ধকার। অর্বাচীনদের যতই গালি দাও।পশ্চিমা চিকিৎসার সাহায্য নিয়েই দেখো না চোখটা ভালো হয় কি না। প্রাচীন - বাবা! আজকালকার ছেলেমেয়েরা এক কথার পিঠে একশ কথাকে চাপায়। আমাদের যুগে বড়রা বলত। ছোটরা শুনত। তার থেকেই শিক্ষা নিত। এখনকার ছেলেমেয়দের কথা ...