সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

ভিখারি ও কুকুর

‘আম্মু দেখো দেখো-’  প্রতিদিন এই এক কাহিনী করে মেয়েটা স্কুলে লেট করে। আর আমারও অফিস যেতে দেরি হয়। গলির এক কুকুর পাঁচখানা বাচ্চা দিয়েছে। বাসায় যেতে আসতে আমার মেয়ে বিগলিত হয়ে ওঠে ওদের দেখে। পারলে আমার হাত ছাড়িয়ে ছুটে গিয়ে ছানাগুলোকে আদর করত। কুকুর বিড়ালে এমনিতে আমার এলার্জি। আর রাস্তার কুকুর তো দেখলেই ঘেন্না লাগে। মেয়ে হয়েছে উল্টোটা। আঁচড় দিবে, কামড় দিবে - এর কোনোটা বলেই ওকে ভয় দেখাতে পারিনা। গায়ে হাত দিতে নিষেধ করেছি বলে রোজই যেতে যেতে বায়না ধরে, ‘ওদেরকে চিপস দেই? চকলেট দেই?’ ‘ওরা চিপস খায় না। তাড়াতাড়ি হাঁটো।’ ‘ওদেরকে কে খেতে দেয়?’ ‘দেয় কেউ একজন। নাহলে বাঁচে কী খেয়ে? এই রিকশা এই-’   সেদিন পুরো রাস্তা জ্যামের মধ্যে বসে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জেনে নিয়েছে কুকুর কী খায় আর কী খায় না। জিজ্ঞাসাবাদে অতিষ্ঠ হয়ে দুই-একবার চরম অসত্য ও অবাস্তব তথ্যও দিয়ে ফেলেছি মেয়েকে। বাড়ি ফিরে দুপুরে খাবার সময় বলল, ‘মামণি, বাবুগুলোকে (কুকুরশাবক) ভাত দিয়ে আসি? আমি কাছেও যাব না। তুমি বুয়াকে বলো দিয়ে আসতে। আমি শুধু দূর থেকে দেখব। আচ্ছা?’ প্রথমে স্পষ্ট অসম্মতি জানালাম। তারপর মেয়ে প্যান প্যান শুরু করলে শর্ত স...

সাহিত্যে স্থায়িত্বের তাৎপর্য

“বর্তমানের কবি আমি ভাই ভবিষ্যতের নই ‘নবি’... ...পরোয়া করি না, বাঁচি বা না বাঁচি যুগের হুজুগ কেটে গেলে।” – আমার কৈফিয়ত/কাজী নজরুল ইসলাম সাহিত্যের ভাষাশৈলী, গঠন, পটভূমি প্রভৃতি কতিপয় বৈশিষ্ট্য সাহিত্যিকের উপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল। অপরদিকে, সাহিত্যের পাঠকপ্রিয়তা, গ্রহণযোগ্যতা এবং সে সংক্রান্ত আলোচনা, সমালোচনা এ সবকিছুই খোদ সাহিত্যিকের এক্তিয়ার-নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এরকমই এক বৈশিষ্ট্য সাহিত্যের স্থায়িত্বগুণ। অর্থাৎ কোনো সাহিত্যকর্ম কতদিন বেঁচে থাকবে না থাকবে তা সাহিত্যিকের প্রত্যক্ষ প্রভাবমুক্ত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাহিত্যের কালোত্তরণের বিষয়টিকে ব্যাপক প্রাধান্য দিতেন বলে দেখা যায়। প্রসঙ্গত, ‘ষোড়শী’র নাট্যরূপ নিয়ে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে লিখিত ব্যক্তিগত চিঠিতে কবির অভিমত উল্লেখ্য, “...সৃষ্টিকর্তারূপে তোমার কর্তব্য ছিল, এই ভৈরবীকে একান্ত সত্য করা, লোকরঞ্জনকর আধুনিককালের চলতি ‘সেন্টিমেন্ট’ মিশ্রিত কাহিনী রচনা করা নয়। সাহিত্যে তুমি বড় সাধক, ইন্দ্রদেব এখন যদি সামান্য প্রলোভনে তোমার তপোভঙ্গ করেন তাহলে লোকসান সাহিত্যের। তুমি উপস্থিত কালের কাছ থেকে দাম আদায় করে খুশি থাকতে পারো – কিন্তু ...

মিডিয়া সাক্ষরতা : আদিপর্ব

মিডিয়া সাক্ষরতা ও এ সংক্রান্ত যাবতীয় জিজ্ঞাসা - মিডিয়া নিজে যতটা প্রাচীন তার চেয়ে কম পুরনো নয়। বর্তমানে তথ্য ও তথ্যপ্রযুক্তির সহজলভ্যতা মিডিয়া সাক্ষরতাকে অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে বেশি প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে সত্য। কিন্তু মিডিয়ার প্রভাব ও মিডিয়া সাক্ষরতার গুরুত্ব নিয়ে নানা প্রশ্ন অনেক অনেক আগে থেকেই আলোচিত হয়ে এসেছে। এটাও লক্ষণীয় যে মিডিয়ার পক্ষে-বিপক্ষে বিভিন্ন বিতর্ক একইসাথে নবাগত প্রযুক্তি, শিল্প (আর্ট ও ইন্ডাস্ট্রি উভয় অর্থে), এমনকি সংস্কৃতির গতিপথকে সময় সময় প্রভাবিত করে এসেছে। তবে ১৯৬০ এর দশক পর্যন্ত পরিভাষা বা গবেষণাক্ষেত্র হিসাবে এর অস্তিত্ব ছিল না। যতদিন না বিষয়টি যোগাযোগ স্কলার ও মিডিয়া প্রফেশনালদের কাজের ক্ষেত্র হয়ে ওঠে তার আগ পর্যন্ত (কিংবা এখনো কিছুসময়) যোগাযোগ সংশ্লিষ্ট ভাবনাসমূহ পরিচালিত হয়/হয়েছে তাত্ত্বিক, দার্শনিক, সমাজবিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী ও ভাষাতত্ত্ববিদদের দ্বারা। এ যাবৎ মিডিয়া সাক্ষরতা নিয়ে যত তত্ত্বীয় চিন্তা হয়েছে তাতে --- প্লেটো থেকে ফ্রয়েড, সসার (১) থেকে সিক্সাস (২) --- প্রত্যেকেরই রয়েছে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। উৎপত্তি ও সংজ্ঞা এই তথ্য মোটেও অভিন...

আমার বাসা

নাটোরের বাসায় আমার তোলা কিছু ছবি  মাধ্যম : SONY DSC-H90

ইফরিত

মোহাম্মদপুরের এক ভীষণ ব্যস্ত সড়কের পাশে আমাদের দুই বেড-ড্রয়িং-ডাইনিং এর ভাড়া বাসা। বাসাটা যখন নেয়া হয় তখন আমি তিন মাসের প্রেগন্যান্ট। এই এলাকায় ভাড়া তুলনামূলক বেশি। কিন্তু সদ্য তোলা বাড়ি আর তমালের অফিসও কাছেই হয় তাই ভাবলাম - এই ভালো। বাসায় উঠে গোছগাছ তখনো সারিনি। এক মাস গেছে কি যায়নি তখন থেকে সমস্যাটার শুরু। তমাল অফিস করে ফিরতে রাত নয়টা দশটা বাজত। খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়তেও সময় নিত না। আমি কোনদিন ওর সাথে শুয়ে পড়তাম, কোনদিন গল্পের বই পড়তাম অথবা ডায়েরি লিখতাম। এক রাতে টেবিল ল্যাম্প জ্বেলে কিছু একটা পড়ছি হঠাৎ দরজায় টোকা দেয়ার মতো আওয়াজ পেলাম। আমার কান খুব খাড়া। আওয়াজটা বাইরের ঘর থেকে এসেছে বুঝতে অসুবিধা হয় না। রাত্রি একটার সময় কে বড় দরজায় টোকা দিবে? পড়ায় মন ফিরিয়েছি মিনিটও হয়নি আবার... নক নক। খুব স্পষ্ট আওয়াজ। ভাবলাম সত্যিই বুঝি কেউ এসেছে। রাত হয়েছে বলে কলিং বেল টিপছে না। উঠে গিয়ে দরজার ফুটোয় চোখ রাখলাম। সারারাত বাহিরের আলো জ্বলত। কাউকে দেখলাম না। ঘরে ফিরে আসার কিছক্ষণের মধ্যেই আবার... নক নক। এবার আর দেখতে গেলাম না। দরকার হয় বেল বাজাবে। শীত করছিল। আলো নিভিয়ে তমালকে জড়িয়ে শুয়ে পড়ল...