রবার্ট গ্রিন এখানে ‘সিডাকশন’ কথাটাকে ব্যবহার করেছেন শুধুমাত্র যৌন প্রলোভন হিসেবে নয়, বরং আরো ব্যাপক অর্থে—রাজনৈতিক, সামাজিক বা অন্যান্য ক্ষেত্রে যেই প্রলোভন প্রযোজ্য। এই প্রলোভনের নীতিগুলো জানলে নিজেকে ও নিজের সম্পর্কগুলোকে আরেকটু ভালোভাবে ঝালাই করা যাবে। সেইসাথে তাদের প্রয়োগ করা যাবে ব্যক্তিগত ও পেশাদার জীবনে।
সারকথা
- প্রলোভন ব্যাপারটাই মনস্তত্ত্বের খেলা, সৌন্দর্যের না। ফলে এই খেলার একজন ওস্তাদ হয়ে ওঠা যেকোন মানুষেরই আয়ত্ত্বে আছে।
- এমন নয় যে, একজন প্রলোভনকারী তার ক্ষমতাটাকে একবার চালু আর একবার বন্ধ করেন—প্রতিটা সামাজিক ও ব্যক্তিগত লেনদেনই তার কাছে প্রলোভনের একেকটা সুযোগ। সুযোগের একটা মুহূর্তও নষ্ট করার নাই।
- প্রলোভনকারীরা কখনো আত্মনিমগ্ন থাকে না। তাদের দৃষ্টি থাকে বাইরের দিকে, ভিতরের দিকে নয়।
- প্লেজার বা পুলক হলো আমাদেরকে আমাদের সীমার বাইরে টেনে নিয়ে যাওয়ার অনুভূতি, উদ্বেলিত করে দেওয়ার অনুভূতি—তা হতে পারে মানুষের দ্বারা, বা কোনো ঘটনার দ্বারা।
- শেষত, যারা কিনা প্রলোভনকারী, তাদের দুনিয়াদারির সাথে নৈতিকতা ব্যাপারটার সম্পর্ক একদম নাই।
- প্রতিটা প্রলোভনের দুইটা উপাদান থাকে যা তোমাকে অবশ্যই বুঝতে এবং বিশ্লেষণ করতে হবে: এক, নিজেকে এবং তোমার মধ্যে কোন্ ব্যাপারটা আছে যা প্রলুব্ধকর; দুই, তোমার লক্ষ্য কে, এবং কী করলে তাদের রক্ষাকবচ ভেদ করে তাদেরকে বশে আনা যাবে।
- “বেশিরভাগ সদগূণই হলো বৃহত্তর প্রলোভনের চাহিদা” —নাটালি বার্নি
পর্ব এক - প্রলুব্ধকর চরিত্র
সফল প্রলোভন শুরু হয় তোমার ব্যক্তিত্ব দিয়ে। তোমার চরিত্রে আছে ইন্দ্রজাল যা মেলে দিয়ে মানুষকে আকর্ষণ করতে পার এবং তাদের আবেগকে এমনভাবে নাড়া দিতে পার যেটা তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
কুহকিনী
- এক নারী নিয়ে পুরুষ একঘেয়ে অনুভব করবেই, সে যত সুন্দরী হোক; পুরুষ কামনা করে নতুন আমোদ আর অভিযান।
- নারীর দরকার এটাকে কাজে লাগিয়ে এমন ভ্রম তৈরি করা যা থেকে মনে হয় তার কাছে সেই বৈচিত্র্য ও অভিযানের স্বাদ পাওয়া যাবে।
- একজন কুহকিনীর ইন্দ্রজাল (চরম যৌন মোহাবেশের সাথে রাজকীয় ও নাটকীয় আদবের মিশ্রণ) সৃষ্টি করে দেখ, পুরুষ তোমার জালে বন্দী।
- ঘরের কিংবা বাইরের কাজ তার সময় খায় না; তাকে দেখে মনে হয় যেন আনন্দের জন্যই তার বাঁচা আর সর্বদা সে লভ্য।
- তোমার এক অংশ কামনার তরে সোচ্চার, অন্য অংশ লাজুক আর নিষ্পাপ, যেন তুমি নিজে বোঝো না তোমার কী গুণপনা।
চরিত্রের মূলমন্ত্র:
- সে পুরুষ মনের প্রবল কামবাসনার এক প্রকাশ যে নাকি চরম আবেদনময়ী, চূড়ান্ত আত্মবিশ্বাসী, মোহনীয় সেই নারী যার থেকে পাওয়ার আছে সীমাহীন পুলক আর যৎসামান্য বিপদ।
- একবার নিজেকে অন্যদের চেয়ে আলাদা দেখিয়ে ফেললে, কুহকিনীর আর দুইটা গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য লাগে: এক, যাতে করে পুরুষ নিজের খেই হারিয়ে জ্বরগ্রস্তের মতো তার পিছু নেয়; আর কিছুটা ঝুঁকির হাতছানি।
- কুহকিনীরা মাঝেমধ্যেই দারুণরকম যুক্তিছাড়া, যেটা কিনা সেইসব পুরুষের কাছে ভীষণ আকর্ষণীয় যারা নিজেরাই নিজেদের যৌক্তিকতা দিয়ে জর্জরিত।
- শারীরিক বিশিষ্টতা—কোনো এক সুঘ্রাণ, কোনো প্রসাধনের দ্বারা, কিংবা জাঁকালো বা রমণীয় পোশাকের সাহায্যে ফুটিয়ে তোলা তীব্র নারীত্ব।
- কণ্ঠ। স্পষ্টত এক গুরুত্বপূর্ণ ধর্ম, কুহকিনীর ডাকের মতো তার আছে এক বুনো অস্তিত্বের সাথে অসাধারণ সম্মোহক ক্ষমতা।
- কুহকিনীর কণ্ঠ অবশ্যই কামনার ইঙ্গিত দিবে, যতটা না খোলামেলা ভাবে তার চেয়ে বেশি ভেতরে ভেতরে।
- তার গলা শান্ত ও সুস্থির, যেন মনে হয় সে পুরোপুরি জেগে নাই—কিংবা বিছানা ছেড়ে এখনো ওঠেনি।
- শরীর ও সজ্জা। কণ্ঠ যদি হতে হয় ঘুমজড়ানো, দেহ ও দেহের ভূষণ তাহলে হতে হবে ঝলমকানো।
- মূলমন্ত্র: সবকিছু হবে চোখ ঝলসানো, কিন্তু একই সাথে থাকবে সেসবের ঐকতান, যাতে কোনো নির্দিষ্ট একখানি অলঙ্কারে চোখ গিয়ে বসে না থাকে। তোমার উপস্থিতিই যেন হয় ঝলমলে, যেন বাস্তবের চেহারা নেয়া এক স্বপ্ন। সাজসজ্জা ব্যবহার হয় মায়াজাদু করে আচ্ছন্ন রাখার জন্য।
- চাল-চলন: কুহকিনীর চলাফেরা হবে ধীর ও লাবণ্যময়।
আপদ
যত আধুনিক যুগই হোক, কোনো মেয়েই নিজেকে সুখের কাছে ধর্না দেয়া একজন হিসেবে চিরকাল সম্পূর্ণ অবলীলায় দেখিয়ে যেতে পারে না। আর গা বাঁচানর যত চেষ্টাই সে করুক, ‘সস্তা’ হওয়ার কালিমা চিরকাল কুহকিনীর পিছু নিয়ে থাকে।
(চলবে...)
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন