সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

কাহিনীকৌশল ও চিত্রনাট্য লিখন সিরিজ - পর্ব ৪ [উপাদানসমূহের বিশ্লেষণ]

গল্পের পাঁচটি মূল উপাদান হলো: চরিত্র পটভূমি দ্বন্দ্ব মূলভাব আখ্যান চরিত্র চরিত্র হলো একজন মানুষ অথবা হতে পারে কোনো প্রাণী যা গল্পের অথবা অন্য কোনো সাহিত্যের ক্রিয়ায় অংশ নেয়। চরিত্রকে যেসব উপায়ে জানতে পারি:           - লেখকের সরাসরি বর্ণনার মাধ্যমে            - তাদের কাজের মাধ্যমে           - তাদের কথার (সংলাপের) মাধ্যমে           - তাদের ভেতরকার চিন্তার মাধ্যমে           - তাদের সম্বন্ধে অন্য চরিত্রদের কথা বা ভাবনার মাধ্যমে। পটভূমি গল্পের পটভূমি হলো ঘটনার সময় ও স্থান। লেখক কখনো কখনো দৃশ্যপট, ছবি, ভবন, মৌসুম বা আবহাওয়াকে ব্যবহার করে পটভূমিকে আরো জোরালভাবে তুলে ধরেন।  দ্বন্দ্ব একটি গল্পের চরিত্রকে যে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তা হলো দ্বন্দ্ব। দ্বন্দ্ব হলো একাধিক ব্যক্তি বা বস্তুর মধ্যে বিরোধ। কেন্দ্রীয় চরিত্র মূল দ্বন্দ্বের এক পক্ষে থাকে। দ্বন্দ্ব হতে পারে :           (১)বহিঃস্থ - অন্যদের সাথে কিংবা...

আমেলি: লো ফাবুলো দস্তাঁ দামেলি পউলাঁ [সম্পাদনা কৌশল]

বিশ্লেষণ : চলচ্চিত্র সম্পাদনা চলচ্চিত্রের অন্যতম প্রধান গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো সম্পাদনা। একটি পূর্ণাঙ্গ সিনেমাটিক ফলাফল সৃষ্টির উদ্দেশ্যে দৃশ্য, শব্দ, ও স্পেশাল এফেক্টসের মতো উপাদানসমূহকে যে সম্মিলিত কৌশল দ্বারা সমন্বয় করা হয় তাকে বলে সম্পাদনা। আখ্যান           ফরাসি চলচ্চিত্র ‘আমেলি’ -র গল্প বলার জন্য ছবির নির্মাতারা বিচিত্র ধরনের সম্পাদনা কৌশল অবলম্বন করেছেন। ছবির মূল আখ্যানের বড় অংশ জুড়েই অবিচ্ছেদ সম্পাদনা ব্যবহার হয়েছে। আধুনিক চলচ্চিত্র নির্মাণে শটের সাথে শট জোড়া দেয়ার জন্য এটিই সবচেয়ে প্রচলিত পদ্ধতি। চলচ্চিত্র জুড়ে শটের মসৃণ ও যুক্তিসঙ্গত প্রবাহ তৈরি করতে অবিচ্ছেদ সম্পাদনা ব্যবহার করা হয়। এতে করে আখ্যানভাগ একটি রৈখিক অবস্থানে থেকে একই নির্দিষ্ট দিকে বয়ে চলে। অপরদিকে, বিচ্ছিন্নতা সম্পাদনা দিক, গতি, বা স্থানের পরিবর্তন করে কাহিনী প্রবাহের মাঝে একটা ব্যাবর্তন নিয়ে আসে। এই পরিবর্তন হয়ে থাকে আচমকা এবং কদাচ যুক্তিহীন। ‘আমেলি’ যদিও সম্পাদনার ক্ষেত্রে কিছু পরিমাণে বিচ্ছিন্নতা দেখিয়েছে। যেমন, শুরুর দিকের দৃশ্যে যখন কথক কেন্দ্রীয় চরিত্রদের পছন্দ-অপছন্দের সাথে...

কাহিনীকৌশল ও চিত্রনাট্য লিখন সিরিজ - পর্ব ৩ [কাহিনী কাঠামো]

কাহিনী কাঠামো  এটি হলো গল্প বলার একটি পদ্ধতি। দুইটি বিষয় এখানে গুরুত্বপূর্ণ: - গল্পের বিষয়বস্তু - গল্পের গঠন কাহিনী কাঠামোর এই দুই অংশকে সহজে বোঝানো যায় গল্প ও আখ্যানের দ্বারা।  গল্প কীভাবে লেখা হয় সেই বিন্যাস ও রীতি-পদ্ধতির ফ্রেমওয়ার্কটি সম্পর্কে ধারণা দেয় কাহিনী কাঠামো। কীভাবে একটি বই সাজানো হয় এবং কীভাবে পাঠকের কাছে আখ্যানটিকে উপস্থাপন করা হয়।  বিভিন্ন অংশ নিয়ে কাহিনী কাঠামো তৈরি হয় : আখ্যান, চরিত্র, দৃষ্টিকোণ, পটভূমি, ও মূলভাব।  সাহিত্যে কাহিনীর পরিধি সূচনা : প্রথম ধাপটি হলো পরিচিতি। পাঠক কেন্দ্রীয় চরিত্রদের সাক্ষাৎ পায় এবং একটা দৃশ্য স্থাপনের জন্য  পটভূমিসহ অন্যান্য প্রাথমিক তথ্য জানতে পারে।  আরোহী ক্রিয়া : দ্বিতীয় ধাপে, গল্পকে গতি দেয়ার জন্য দ্বন্দ্বের সাথে পরিচয় করানো হয়। গল্প যত এগোয়, কেন্দ্রীয় চরিত্র তত বেশি বাধার সম্মুখীন হতে থাকে। এভাবে টান তৈরি হতে হতে কাহিনী চরম সীমায় পৌঁছায়।   চরম সীমা বা ক্লাইম্যাক্স : এটি গল্পের সন্ধিক্ষণ - দ্বন্দ্ব ও টানের সেই সর্বোচ্চ বিন্দু   যার দিকে  অন্য সবকিছু গল্পকে এগিয়ে নিয়ে এসেছে। এটি...

কাহিনীকৌশল ও চিত্রনাট্য লিখন সিরিজ - পর্ব ২ [গল্পের উপাদান]

গল্প কী গল্প হলো এক বা একাধিক ঘটনা বা অভিজ্ঞতার বর্ণনা। বলাই বাহুল্য, গল্পের একটি শুরু, মধ্যভাগ, ও সমাপ্তি থাকে। সার্থক গল্প এমন যা একজন পাঠকের মনে ছাপ ফেলে ও সাধারণত এক বসায় শেষ করে ওঠা যায়। আখ্যানের এই উপাদানগুলো গল্পে থাকে: সূচনা দ্বন্দ্ব ঊর্ধ্বমুখী ক্রিয়া (জটিলতা) চরমসীমা মীমাংসা গল্পের উপাদান পটভূমি চরিত্রায়ন    আখ্যান দ্বন্দ্ব চরমসীমা মীমাংসা মূলভাব দৃষ্টিকোণ নিম্নে এদের সবিস্তার বর্ণনা দেয়া হলো: পটভূমি - সেই পরিবেশ যেখানে চরিত্রগুলো অবস্থান করে। - পাঠককে জানায়, কখন ও কোথায় গল্পের অবস্থান। - নিচের বিষয়গুলোর সমন্বয়ে তৈরি হয়: সময় স্থান পরিসর মেজাজ ও আবহ চিত্রকল্পের ব্যবহার সময়   সাধারণত কোনো দৃশ্যের পটভূমি বিস্তারের অংশ হিসেবে সময় কাঠামো নির্ধারণ করা হয়। আখ্যানের অগ্রগতির পাশাপাশি চরিত্রের প্রেক্ষাপট ও হাবভাবের ক্ষেত্রে সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। সাময়িক পটভূমির অংশ হতে পারে নির্দিষ্ট তারিখ অথবা ঘটনা। স্বল্প সময় পরিসরের কাহিনীর ক্ষেত্রে মৌসুম, দিনের কোনো সময়, এমনকি ঘণ্টার হিসাবও বেশি প্রাসঙ্গিক হতে পারে।  স্থান গল্পটি কোন জায়গায় ঘটছে সেই তথ্য তুলনামূলকভাবে...

কাহিনীকৌশল ও চিত্রনাট্য লিখন সিরিজ - পর্ব ১ [পরিচিতি]

কাহিনীকৌশল কী কাহিনী হলো এক বা একাধিক ঘটনার বর্ণনা। কাহিনী কাল্পনিক হতে পারে, অথবা বাস্তবভিত্তিক হতে পারে। কাহিনীকৌশল হলো কিছু পদ্ধতি যা অনুসরণ করে লেখকরা গল্প বলে থাকে। এই কৌশলে নিম্নোক্ত বিষয় বিবেচনায় রাখতে হয় -  দৃষ্টিকোণ দর্শকশ্রোতা চরিত্রায়ন আখ্যান (গল্পে যা ঘটে/ঘটবে) কাঠামো জনরা শব্দচয়ন  কাহিনী  কাহিনী  : একটি কাল্পনিক গল্প যেখানে সব ঘটনা লেখকের কল্পনাপ্রসূত। ব্যক্তিগত কাহিনী  :   লেখকের জীবনের ঘটেছে এমন একটি ঘটনা নিয়ে লেখা সত্য গল্প। কাহিনী ক্রম শুরু  - স্থান, কাল ও চরিত্রের পরিচয় - সংঘর্ষের সূচনা মধ্যভাগ  - ঘটনা শুরু হয় (ঊর্ধ্বমুখী ক্রিয়া) - মুখ্য চরিত্রের সামনে লক্ষ্য ও বাধা থাকবে - ঘটনা সামনের দিকে এগিয়ে যাবে শেষ - পরিণতি (নিম্নগামী ক্রিয়া) চিত্রনাট্য গল্প, পটভূমি, ও সংলাপের বিবরণসহ লিখিতকর্মের জন্য একটি সাধারণ পরিভাষা হলো চিত্রনাট্য। এটি সচরাচর একটি স্বাধীন পেশা। একজন চিত্রনাট্যকার বা স্ক্রিপ্ট লেখকের যে ধরনের কাজ থাকে তা হলো - গবেষণার মাধ্যমে কাহিনী ও গল্পের উন্নতিসাধন; চিত্রনাট্য ও সংলাপ লেখা; সঠিক ফরম্যাট অনুসরণ করে এটিকে কোম্পা...

চলচ্চিত্রের দশ দিকপাল

এডয়ার্ড ময়ব্রিজ স্থির আলোকচিত্র থেকে চলচ্চিত্রের দিকে অগ্রযাত্রায় প্রথম সফল পদক্ষেপ রাখেন যে ব্যক্তি তার নাম এডয়ার্ড ময়ব্রিজ। একজন ভীষণ প্রতিভাবান পাগলাটে অ্যাংলো আমেরিকান, যিনি তার সিনেম্যাটিক বৈচিত্র্যময় জীবনে ওয়াশিং মেশিন উদ্ভাবন করেছেন এবং খুনের দায়ে কাঠগড়াতেও দাঁড়িয়েছেন। যদিও তাকে নিয়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো রেসের বাজি আর চলন্ত ঘোড়ার ছবি তোলার গল্প। ১৮৭২ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার প্রাক্তন গভর্নর লিলেন স্ট্যানফোর্ড এক অদ্ভুত বাজি ধরে তা প্রমাণের জন্য চিত্রগ্রাহক ময়ব্রিজের শরণাপন্ন হন। বাজিটা ছিল, একটি ঘোড়া দৌড়কালীন কোনো সময়ে মাটি থেকে তার সবগুলো খুর শূন্যে তোলে কিনা। প্রায় পাঁচ বছর নিরন্তর প্রচেষ্টার পর ১৮৭৮ সালের জুন মাসে ময়ব্রিজ এই দাবি পুরোপুরি প্রমাণ করতে সফল হন এবং একইসাথে আবিষ্কার করেন চলমান ছবি তোলার নতুন প্রযুক্তি। এই বিশেষ কায়দায় রেসের ট্র্যাকে এক ডজন ক্যামেরা পরপর এমনভাবে রাখা হয়েছিল যাতে করে ছুটন্ত ঘোড়ার শরীরের স্পর্শে একেকটা ক্যামেরার শাটার চালু হয়ে যায়। ফলাফল চমকপ্রদ। এই সিরিজটি ‘দি হর্স ইন মোশন’ নামে প্রকাশিত হয়ে অচিরেই শিল্পী, সমালোচক ও প্রাণীবিদদের ভেতরে সাড়া ফেলে দেয়। ময়ব্...

হারবার্ট স্পেনসারের 'জৈবিক সাদৃশ্যবাদ'

ইংরেজ সমাজতত্ত্ববিদ ও জীববিজ্ঞানী হারবার্ট স্পেনসারকে বলা হয় সমাজবিজ্ঞানের দ্বিতীয় জনক। তিনি 'সামাজিক ডারউইনবাদ'-এর একজন প্রচারক। স্পেনসারের বিখ্যাত 'জৈবিক সাদৃশ্যবাদ' সমাজ ও জীবকে বিশেষ সাদৃশ্যপূর্ণ বলে দাবি করে। হারবার্ট স্পেনসার (১৮২০-১৯০৩) ১। সমাজ ও জীব উভয়েই আকারে বৃদ্ধি পায়। মানবশিশু প্রাপ্তবয়স্ক হয়। মহল্লা থেকে মেট্রোপলিটন হয়, ক্ষুদ্র রাষ্ট্র থেকে সাম্রাজ্য তৈরি হয়।   ২। প্রত্যেকে আকারে যত বড় হয় উভয়ের কাঠামো জটিলতর হতে থাকে। ৩। দুই ক্ষেত্রেই, কাঠামোগত পার্থক্যের কারণে কার্যকারিতায় অনুরূপ পার্থক্য দেখা দেয়। ৪। জীবদেহ ও সমাজ উভয়েই ক্ষুদ্রতর একক দ্বারা গঠিত। জীবের যেমন কোষ রয়েছে তেমন সমাজের রয়েছে ব্যক্তি। একাধিক কোষ মিলে যেভাবে বৃহত্তর অঙ্গ গঠন করে, একইভাবে একাধিক ব্যক্তি মিলে সমাজের বিভিন্ন অংশ গঠন করে। ৫। সমাজ ও জীব উভয়ই মূলত তিন ধরনের তন্ত্র বা ব্যবস্থার ওপর টিকে থাকে। এরা হলো - বিপাক তন্ত্র (sustaining system), সংবহন তন্ত্র (distributor or circulatory system), স্নায়ু তন্ত্র (regulatory system). জীবের জন্য খাদ্য হলো এর চালিকা শক্তি, সমাজের ক্ষেত্রে যা হলো কৃ...