সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আমেলি: লো ফাবুলো দস্তাঁ দামেলি পউলাঁ [সম্পাদনা কৌশল]

বিশ্লেষণ: চলচ্চিত্র সম্পাদনা

চলচ্চিত্রের অন্যতম প্রধান গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো সম্পাদনা। একটি পূর্ণাঙ্গ সিনেমাটিক ফলাফল সৃষ্টির উদ্দেশ্যে দৃশ্য, শব্দ, ও স্পেশাল এফেক্টসের মতো উপাদানসমূহকে যে সম্মিলিত কৌশল দ্বারা সমন্বয় করা হয় তাকে বলে সম্পাদনা।

আখ্যান

        ফরাসি চলচ্চিত্র ‘আমেলি’-র গল্প বলার জন্য ছবির নির্মাতারা বিচিত্র ধরনের সম্পাদনা কৌশল অবলম্বন করেছেন। ছবির মূল আখ্যানের বড় অংশ জুড়েই অবিচ্ছেদ সম্পাদনা ব্যবহার হয়েছে। আধুনিক চলচ্চিত্র নির্মাণে শটের সাথে শট জোড়া দেয়ার জন্য এটিই সবচেয়ে প্রচলিত পদ্ধতি। চলচ্চিত্র জুড়ে শটের মসৃণ ও যুক্তিসঙ্গত প্রবাহ তৈরি করতে অবিচ্ছেদ সম্পাদনা ব্যবহার করা হয়। এতে করে আখ্যানভাগ একটি রৈখিক অবস্থানে থেকে একই নির্দিষ্ট দিকে বয়ে চলে। অপরদিকে, বিচ্ছিন্নতা সম্পাদনা দিক, গতি, বা স্থানের পরিবর্তন করে কাহিনী প্রবাহের মাঝে একটা ব্যাবর্তন নিয়ে আসে। এই পরিবর্তন হয়ে থাকে আচমকা এবং কদাচ যুক্তিহীন। ‘আমেলি’ যদিও সম্পাদনার ক্ষেত্রে কিছু পরিমাণে বিচ্ছিন্নতা দেখিয়েছে। যেমন, শুরুর দিকের দৃশ্যে যখন কথক কেন্দ্রীয় চরিত্রদের পছন্দ-অপছন্দের সাথে দর্শককে পরিচয় করিয়ে দেয়, এর মধ্যে কিছু পছন্দ দেখানো হয় সাদাকালো জাম্প কাটের মাধ্যমে। বেশ কিছু মন্তাজের ক্ষেত্রেও ধারবাহিকতায় ছেদ দেখা যায়। যেমন, কতজন যুগল ওই মুহূর্তে রতিসুখ উপভোগ করছে সেই কল্পনা, অথবা টিভি পর্দায় নাম-চরিত্রের দুঃখজনক ভবিতব্য দেখার সময়, অথবা যখন জড়বস্তুরা নড়চড়ে কথা বলতে শুরু করে সেইসব দৃশ্য। অবিচ্ছেদ সম্পাদনা মূলত যেখানে পুরোটাই একাংশ; সেখানে পূর্বোক্ত বিচ্ছিন্নতা দর্শকের মনোযোগ কাহিনীর পরিবর্তে নিজের দিকে টেনে ধরে। এটি নির্মাতাকে প্রচলিত চলচ্চিত্র রীতির বাইরে গিয়ে সুনির্দিষ্ট বিষয়বস্তু উত্থাপন করতে দেয়।

ছন্দ 

        নির্মাতারা নির্মাণকালীন অথবা নির্মাণ-পরবর্তী সময়ে যুক্ত করা শব্দ ব্যবহার করে দর্শককে বার্তা দিতে পারে। ‘আমেলি’-র ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক শব্দ আর কৃত্রিম সাউন্ড এফেক্ট এত দারুণ যে তাদেরকে প্রায় ছবির একটা চরিত্র বলা যায়। উপান্ত্য দৃশ্যে যখন আমেলি শেষ ও সম্পূর্ণবারের মতো তার কাঙ্ক্ষিত মানুষটির সাক্ষাৎ পায়, শব্দ আর নীরবতা যৌথভাবে সেখানে চরিত্রদ্বয়ের মিলন আবেগ প্রকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যখন আমেলি তাকে নিজের বাড়িতে দাওয়াত দেয়, দর্শক একটা কৃত্রিম চুরমারের আওয়াজ শোনে। এটাই সর্বশেষ বিস্ফোরণ যার মধ্য দিয়ে তাদের চারপাশের বিচিত্র সব কলকাকলির ইতি ঘটে। সেইসব সাউন্ড এফেক্টের ইতি ঘটে যা তাদের জগতের অন্যান্য চরিত্রের ক্রিয়াকলাপ ও গতিবিধির ওপর জোর দিতে (কিছু ক্ষেত্রে আরো জোরালো করতে) ব্যবহার হচ্ছিল। এই গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যটিতে ভাঙচুরের আওয়াজের আগ মুহূর্তে শোনা গেছে দরজা বন্ধের আওয়াজ। এই শব্দটি অকৃত্রিম, অবর্ধিত, এবং ছবির দৃশ্যের সাথে মিলে এটি নায়িকার জন্য পরিসমাপ্তি বোঝায়। এই জুটি যখন চুম্বনের অদ্ভুত ক্রীড়ায় মাতে, তখনি হঠাৎ নীরবতা নেমে আসে, যেন আমেলি অবশেষে তার শব্দময় অভিযাত্রার মধ্য দিয়ে শান্তিকে খুঁজে পেয়েছে। এই নীরবতা তাৎপর্যপূর্ণ ও লক্ষণীয় এই কারণে যে, এই প্রথম চলচ্চিত্রের কোথাও নিস্তরঙ্গ শব্দহীনতাকে ব্যবহার করা হয়েছে দর্শকের সাথে কথা বলার জন্য।  

        শব্দের পাশপাশি সঙ্গীতের মাধ্যমেও আমেলির জগতের বিস্ময়কে তুলে ধরা হয়েছে। কখনো কখনো দুঃখের অনুভূতি প্রকাশে বিষণ্ণ সুর বাজানো হলেও, ছবির সিংহভাগ অংশে শুনতে পাই মজাদার সুর, যেমনটা শোনা যায় মেলা কিংবা পার্বণে। নড়াচড়ার সাথে সামঞ্জস্য রেখে এরকম বাজনা মিকি মাউসিং বলে পরিচিত। এই ছন্দ দারুণভাবে খাপ খেয়েছে নাম-চরিত্রের কৌতুহলী, কল্পনাপ্রবণ, অথচ সামাজিকভাবে অপটু ব্যক্তিত্বের সাথে। বেশ ঘন ঘন সঙ্গীতকে পাওয়া যাবে এই ছবিতে, যদিও তাকে কখনো বিভ্রান্তিকর বা উৎপীড়ক মনে হয় না, বরং ছবির প্রাকৃতিক বা অন্য যেকোন শব্দের ব্যবহারের সাথে এটি সংযোজক হিসেবে কাজ করে। যে দৃশ্যগুলোতে আমেলি মঙ্গলবার্তা ছড়িয়ে দেয়ার মহৎ উদ্দেশ্যে বের হয়, সেখানে তার ইতিবাচক ও অভিযাত্রীসুলভ মূলভাবের সাথে মিলে যায় হাসিখুশি আনন্দোৎসবের সুর।

মিজ-অঁ-সেন

        'আমেলি'-র অসংস্কারকৃত ছবিগুলিতে লাল-সবুজের প্রাবল্যের বিপরীতে নীলের অনুপস্থিতি দেখলে যেন মনে হয় যেন দুই ফিতার পুরাতন পুরাতন টেকনিকালার পদ্ধতিতে দৃশ্যগুলো ধারণ করা হয়েছে। এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা যেকোন একটি ফিল্মে উষ্ণ কমলা ফিল্টার যুক্ত করে দিলে তা অনেকটাই ‘আমেলি’-র রঙের কাছাকাছি হয়। এই ধরনের কালার কারেকশন সাহায্য করেছে ছবির ভাবকে লঘু করে রোমান্টিক কমেডি জনরার উপযুক্ত করতে।

        যে শটে শহরের আনুভূমিক দৃশ্য দেখানো হয়, পোস্ট প্রোডাকশনে সম্পাদক সেখানে বহিঃস্থ কিছু উপাদান অন্তর্ভুক্ত করেন। প্রযুক্ত লেখা দ্বারা পুরো চলচ্চিত্র জুড়ে নিনো আর আমেলির বাসার অবস্থান বোঝানো হয়। এই ব্যাপারটা বিস্ময়কর যে তারা পরস্পর থেকে মাত্র ৫ মাইলের দূরত্বে ছিল। এই তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপারটি থেকে মনে হয় যেন একে অন্যের মুখোমুখি হওয়া তাদের অদৃষ্টেই ছিল। ছবির অন্যান্য অংশে পরিচালক বিভাজিত পর্দা ব্যবহার করেছেন সমান্তরতার উপাদান হিসেবে। সম্পাদক এই স্টাইলটি যুক্ত করেছেন দুইটি চরিত্রের মধ্যে মিল ও উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গতি তুলে ধরার উদ্দেশ্যে। 

        স্থান এই ছবিতে খুবই কার্যকর। সমসাময়িক শৈল্পিক উপাদানের সাথে ফরাসি অ্যাকোর্ডিয়ন সঙ্গীত ও ফরাসি এলাকার মিশেল এক অদ্ভুত স্বর তৈরি করে। আমেলির সমসাময়িক মেয়েদের হিপস্টার পোশাক ছিল ১৯৬০ ও ৭০-এর দশকের ফ্যাশনের পুনরুত্থান। এটি সম্পূর্ণ বিচ্যুত অথচ কিছুটা আত্মসচেতন খামখেয়ালিপনার ভাব তুলে ধরে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্য সম্ভবত সেই রেল স্টেশন যেখানে আমেলি পরিশেষে নিনোর ছবি অ্যালবাম হাতে পায়। প্রকৃত ফরাসিদেশের দর্শন পেতে হলে যে জায়গায় যেতে হবে তার সমস্ত গুণাবলীই আছে এই জায়গার মধ্যে। একদিকে, লম্বা লম্বা সিঁড়ির ধাপ, ঝর্না, আর কাচের জানালার অনুপস্থিতি তৎকালীন স্থাপত্যের সাধারণ বৈশিষ্ট্য। অপরদিকে, ক্যামেরার অগ্রসরতা, এবং চলচ্চিত্রের অনন্য সুরের কারণে পুরো দৃশ্যটাকে দেখায় উদ্ভটভাবে সাবেকি আমলের। এই দুইয়ের বৈসাদৃশ্য বা বৈপরীত্য দর্শনীয়। 


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

48 LAWS OF POWER by Robert Greene and Joost Elffers

Vladimir Putin The definition of power in 21st century

হারবার্ট স্পেনসারের 'জৈবিক সাদৃশ্যবাদ'

ইংরেজ সমাজতত্ত্ববিদ ও জীববিজ্ঞানী হারবার্ট স্পেনসারকে বলা হয় সমাজবিজ্ঞানের দ্বিতীয় জনক। তিনি 'সামাজিক ডারউইনবাদ'-এর একজন প্রচারক। স্পেনসারের বিখ্যাত 'জৈবিক সাদৃশ্যবাদ' সমাজ ও জীবকে বিশেষ সাদৃশ্যপূর্ণ বলে দাবি করে। হারবার্ট স্পেনসার (১৮২০-১৯০৩) ১। সমাজ ও জীব উভয়েই আকারে বৃদ্ধি পায়। মানবশিশু প্রাপ্তবয়স্ক হয়। মহল্লা থেকে মেট্রোপলিটন হয়, ক্ষুদ্র রাষ্ট্র থেকে সাম্রাজ্য তৈরি হয়।   ২। প্রত্যেকে আকারে যত বড় হয় উভয়ের কাঠামো জটিলতর হতে থাকে। ৩। দুই ক্ষেত্রেই, কাঠামোগত পার্থক্যের কারণে কার্যকারিতায় অনুরূপ পার্থক্য দেখা দেয়। ৪। জীবদেহ ও সমাজ উভয়েই ক্ষুদ্রতর একক দ্বারা গঠিত। জীবের যেমন কোষ রয়েছে তেমন সমাজের রয়েছে ব্যক্তি। একাধিক কোষ মিলে যেভাবে বৃহত্তর অঙ্গ গঠন করে, একইভাবে একাধিক ব্যক্তি মিলে সমাজের বিভিন্ন অংশ গঠন করে। ৫। সমাজ ও জীব উভয়ই মূলত তিন ধরনের তন্ত্র বা ব্যবস্থার ওপর টিকে থাকে। এরা হলো - বিপাক তন্ত্র (sustaining system), সংবহন তন্ত্র (distributor or circulatory system), স্নায়ু তন্ত্র (regulatory system). জীবের জন্য খাদ্য হলো এর চালিকা শক্তি, সমাজের ক্ষেত্রে যা হলো কৃ...

আমার লেখা বই

আমার সর্বশেষ বই বাংলায় শিখি ফরাসি ভাষা শাখা: ভাষাশিক্ষা প্রকাশকাল: ২০২৪ প্রচ্ছদ:  বইটি পড়ুন আমার পঞ্চম বই চিত্রনাট্যচিত্রণ: কাহিনি ও চিত্রনাট্য লেখার কলাকৌশল শাখা: চিত্রনাট্য প্রকাশকাল: ২০২৪ প্রচ্ছদ: পার্থপ্রতিম দাস বইটি পড়ুন আমার সর্বশেষ উপন্যাস অধিনায়ক শাখা: উপন্যাস প্রকাশকাল: ২০২০ প্রচ্ছদ: রাজীব দত্ত বইটি পড়ুন আমার প্রথম উপন্যাস রঙবাহার শাখা: উপন্যাস প্রকাশকাল: ২০১৫ প্রচ্ছদ: তৌহিন হাসান বইটি পড়ুন আমার দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ অপরূপকথা শাখা: গল্প সঙ্কলন প্রকাশকাল: ২০১৩ প্রচ্ছদ: তৌহিন হাসান বইটি পড়ুন আমার প্রথম গল্পগ্রন্থ ভূতলোজি কিংবা চিত্তশুদ্ধি শাখা: গল্প সঙ্কলন প্রকাশকাল: ২০১২ প্রচ্ছদ: বিক্রমাদিত্য বইটি সম্পর্কে জানুন My books on Goodreads রঙবাহার (avg rating 5.00) অপরূপকথা (avg rating 5.00) অধিনায়ক ভূতলোজি কিংবা চিত্তশুদ্ধি বাংলায় শিখি ফরাসি ভাষা

48 Laws of Power in Bangla Free PDF Download

বিনামূল্যে ই-বুক পিডিএফ ডাউনলোড করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন সরাসরি পড়তে এখানে ক্লিক করুন বিক্রমাদিত্য's books on Goodreads রঙবাহার reviews: 1 ratings: 2 (avg rating 5.00) অপরূপকথা ratings: 1 (avg rating 5.00) অধিনায়ক ভূতলোজি কিংবা চিত্তশুদ্ধি বাংলায় শিখি ফরাসি ভাষা Goodreads reviews for রঙবাহার Reviews from Goodreads.com

TFP 415 WORLD CINEMA : Class Notes

Aug 14, 2023 LECTURE 2 Expressionism Reality is distorted Artist’s personal feeling From Northern Europe How did it begin? Effects of WWI  Foreign film banned Horror, insecurity, and paranoia From German romanticism  ENLIGHTENMENT ROMANTICISM Reason Emotion Progress Common good Individuality Unique potential Science and technology Rational, ordered society Nature and imagination Spontaneous, passionate life Social conventions and institutions  Resistance to social conventions and institutions First appeared in poetry and theater “The world is a laboratory” by Gottfried Benn Characteristics of german expressionist theater Distorted and exaggerated sets, props, and costumes Unease and anxiety Symbolism- character might be represented by an animal or object or a particular color Non-linear plot Confusion and disorientation Fragmented nature of the human experience The threepenny opera (1928) by bertolt brecht Characteristics of german expressionism The subjective view of the...

স্বর্গচূড়া

অবশেষে, একদিন, এতবছরের অপেক্ষার পর ট্রেনটা পেলাম আমি। সঙ্গের পোটলা-পুটলিগুলো প্রথমে কামরার ভেতর ছুঁড়ে দিলাম। তারপর নিজের নাম মুখে নিয়ে ঝাঁপিয়ে উঠলাম ট্রেনে। গাড়িটা এক মুহূর্ত থামে না প্লাটফর্মে। জোর গতিতে ছুটে চলে। কারো জন্য অপেক্ষা করতে নারাজ। একজনের জীবনে একবার বই দু’বার কখনো আসে না। পাল্লা দিয়ে ছুটে তাকে ধরতে হয়। নইলে নাই। অন্য গাড়ি ধরতে হবে। কিন্তু সে গাড়ি যাবে আরেক গন্তব্যে। ট্রেনের দরজা দিয়ে বাইরে উঁকি দিলাম। প্লাটফর্মে সাথীকে দেখতে পাই। হাত নেড়ে বিদায় জানাচ্ছে অথচ ঠোঁটে হাসি নাই। শুনতে পেলাম মনে মনে কেবল বলছে, তোমার যাত্রা শুভ হোক। (২) প্রথম কবে সাথীর দেখা পেয়েছিলাম ভালো মনে পড়ে না। মনে পড়ে, মন খারাপ করে প্লাটফর্মে বসে ছিলাম। সাথীকে পেয়ে মন ভালো হয়ে গিয়েছিল। কেন, তা মনে নাই। এরপর কত দিন, কত রাত পাশাপাশি বসে কেটে গেল। আমি আর সাথী। স্টেশন জুড়ে এত এত মুখ। কাউকে মনে ধরে নি। সাথী বাদে। সাথীর স্বজনরা একই স্টেশনে ছিল। তবু ও ছিল একা। কী জানি কেন, কখনো জিগ্যেস করা হয় নি। কিন্তু সাথী অনেক প্রশ্ন করত আমাকে। খুব অবাক হতো যে অন্যদের মতো আমার শরীরে কেন বাঁধন নাই। আমার মা-বাবার কথা জিগ...

THE ART OF SEDUCTION by Robert Greene

রবার্ট গ্রিন এখানে ‘সিডাকশন’ কথাটাকে ব্যবহার করেছেন শুধুমাত্র যৌন প্রলোভন হিসেবে নয়, বরং আরো ব্যাপক অর্থে—রাজনৈতিক, সামাজিক বা অন্যান্য ক্ষেত্রে যেই প্রলোভন প্রযোজ্য। এই প্রলোভনের নীতিগুলো জানলে নিজেকে ও নিজের সম্পর্কগুলোকে আরেকটু ভালোভাবে ঝালাই করা যাবে। সেইসাথে তাদের প্রয়োগ করা যাবে ব্যক্তিগত ও পেশাদার জীবনে।    সারকথা প্রলোভন ব্যাপারটাই মনস্তত্ত্বের খেলা, সৌন্দর্যের না। ফলে এই খেলার একজন ওস্তাদ হয়ে ওঠা যেকোন মানুষেরই আয়ত্ত্বে আছে। এমন নয় যে, একজন প্রলোভনকারী তার ক্ষমতাটাকে একবার চালু আর একবার বন্ধ করেন—প্রতিটা সামাজিক ও ব্যক্তিগত লেনদেনই তার কাছে প্রলোভনের একেকটা সুযোগ। সুযোগের একটা মুহূর্তও নষ্ট করার নাই। প্রলোভনকারীরা কখনো আত্মনিমগ্ন থাকে না। তাদের দৃষ্টি থাকে বাইরের দিকে, ভিতরের দিকে নয়।  প্লেজার বা পুলক হলো আমাদেরকে আমাদের সীমার বাইরে টেনে নিয়ে যাওয়ার অনুভূতি, উদ্বেলিত করে দেওয়ার অনুভূতি—তা হতে পারে মানুষের দ্বারা, বা কোনো ঘটনার দ্বারা।  শেষত, যারা কিনা প্রলোভনকারী, তাদের দুনিয়াদারির সাথে নৈতিকতা ব্যাপারটার সম্পর্ক একদম নাই। প্রতিটা প্রলোভনের দুইটা উপাদান থাকে...

মিডিয়া সাক্ষরতা : আদিপর্ব

মিডিয়া সাক্ষরতা ও এ সংক্রান্ত যাবতীয় জিজ্ঞাসা - মিডিয়া নিজে যতটা প্রাচীন তার চেয়ে কম পুরনো নয়। বর্তমানে তথ্য ও তথ্যপ্রযুক্তির সহজলভ্যতা মিডিয়া সাক্ষরতাকে অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে বেশি প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে সত্য। কিন্তু মিডিয়ার প্রভাব ও মিডিয়া সাক্ষরতার গুরুত্ব নিয়ে নানা প্রশ্ন অনেক অনেক আগে থেকেই আলোচিত হয়ে এসেছে। এটাও লক্ষণীয় যে মিডিয়ার পক্ষে-বিপক্ষে বিভিন্ন বিতর্ক একইসাথে নবাগত প্রযুক্তি, শিল্প (আর্ট ও ইন্ডাস্ট্রি উভয় অর্থে), এমনকি সংস্কৃতির গতিপথকে সময় সময় প্রভাবিত করে এসেছে। তবে ১৯৬০ এর দশক পর্যন্ত পরিভাষা বা গবেষণাক্ষেত্র হিসাবে এর অস্তিত্ব ছিল না। যতদিন না বিষয়টি যোগাযোগ স্কলার ও মিডিয়া প্রফেশনালদের কাজের ক্ষেত্র হয়ে ওঠে তার আগ পর্যন্ত (কিংবা এখনো কিছুসময়) যোগাযোগ সংশ্লিষ্ট ভাবনাসমূহ পরিচালিত হয়/হয়েছে তাত্ত্বিক, দার্শনিক, সমাজবিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী ও ভাষাতত্ত্ববিদদের দ্বারা। এ যাবৎ মিডিয়া সাক্ষরতা নিয়ে যত তত্ত্বীয় চিন্তা হয়েছে তাতে --- প্লেটো থেকে ফ্রয়েড, সসার (১) থেকে সিক্সাস (২) --- প্রত্যেকেরই রয়েছে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। উৎপত্তি ও সংজ্ঞা এই তথ্য মোটেও অভিন...

বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি : প্রাচীন অর্বাচীন তর্ক

এই লেখাটা ২০১৪ সালে প্রকাশিত হয় যোসেফাইট কালচারাল ফোরামের বার্ষিক ক্রোড়পত্র ত্রিলয়-এ। আমি তখন সেন্ট যোসেফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণির ছাত্র প্রাচীন -  ওই অর্বাচীনদের আমি শতবার সতর্ক করেছি, আর যা-ই করো, আত্মপরিচয় কখনো হারাবে না। স্পষ্টই দেখতে পাচ্ছি এদের সামনে যেন ঘোর অন্ধকার। নিজেদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি সবকিছু ভুলে গিয়ে এরা আজ পাশ্চাত্যের অনুকরণে ব্যস্ত। নিজের চশমার 'স্টাইল'টা যতই বাজে হোক না কেন ওটা পরেই তুমি স্বচ্ছ দেখবে। তা না করে যদি অন্যের চশমা চোখে দাও, তোমাকে মানাবে হয়তো ভালো কিন্তু হোঁচট খেতে হবে পদে পদে। অর্বাচীন - তোমার কথায় কেমন যেন ছাপাখানার গন্ধ। তোমার বয়স হয়েছে। তাই চোখে সমস্যা। চোখের পাতা বন্ধ করে তুমি অতীতটাকে সোনালি রঙের মনে করো। আর চোখ মেলে ভবিষ্যৎ দেখতে গেলেই তোমার মনে হয় সেটা বুঝি অন্ধকার। অর্বাচীনদের যতই গালি দাও।পশ্চিমা চিকিৎসার সাহায্য নিয়েই দেখো না চোখটা ভালো হয় কি না। প্রাচীন - বাবা! আজকালকার ছেলেমেয়েরা এক কথার পিঠে একশ কথাকে চাপায়। আমাদের যুগে বড়রা বলত। ছোটরা শুনত। তার থেকেই শিক্ষা নিত। এখনকার ছেলেমেয়দের কথা ...

ইফরিত

মোহাম্মদপুরের এক ভীষণ ব্যস্ত সড়কের পাশে আমাদের দুই বেড-ড্রয়িং-ডাইনিং এর ভাড়া বাসা। বাসাটা যখন নেয়া হয় তখন আমি তিন মাসের প্রেগন্যান্ট। এই এলাকায় ভাড়া তুলনামূলক বেশি। কিন্তু সদ্য তোলা বাড়ি আর তমালের অফিসও কাছেই হয় তাই ভাবলাম - এই ভালো। বাসায় উঠে গোছগাছ তখনো সারিনি। এক মাস গেছে কি যায়নি তখন থেকে সমস্যাটার শুরু। তমাল অফিস করে ফিরতে রাত নয়টা দশটা বাজত। খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়তেও সময় নিত না। আমি কোনদিন ওর সাথে শুয়ে পড়তাম, কোনদিন গল্পের বই পড়তাম অথবা ডায়েরি লিখতাম। এক রাতে টেবিল ল্যাম্প জ্বেলে কিছু একটা পড়ছি হঠাৎ দরজায় টোকা দেয়ার মতো আওয়াজ পেলাম। আমার কান খুব খাড়া। আওয়াজটা বাইরের ঘর থেকে এসেছে বুঝতে অসুবিধা হয় না। রাত্রি একটার সময় কে বড় দরজায় টোকা দিবে? পড়ায় মন ফিরিয়েছি মিনিটও হয়নি আবার... নক নক। খুব স্পষ্ট আওয়াজ। ভাবলাম সত্যিই বুঝি কেউ এসেছে। রাত হয়েছে বলে কলিং বেল টিপছে না। উঠে গিয়ে দরজার ফুটোয় চোখ রাখলাম। সারারাত বাহিরের আলো জ্বলত। কাউকে দেখলাম না। ঘরে ফিরে আসার কিছক্ষণের মধ্যেই আবার... নক নক। এবার আর দেখতে গেলাম না। দরকার হয় বেল বাজাবে। শীত করছিল। আলো নিভিয়ে তমালকে জড়িয়ে শুয়ে পড়ল...