গল্প হলো এক বা একাধিক ঘটনা বা অভিজ্ঞতার বর্ণনা। বলাই বাহুল্য, গল্পের একটি শুরু, মধ্যভাগ, ও সমাপ্তি থাকে। সার্থক গল্প এমন যা একজন পাঠকের মনে ছাপ ফেলে ও সাধারণত এক বসায় শেষ করে ওঠা যায়। আখ্যানের এই উপাদানগুলো গল্পে থাকে:
- সূচনা
- দ্বন্দ্ব
- ঊর্ধ্বমুখী ক্রিয়া (জটিলতা)
- চরমসীমা
- মীমাংসা
গল্পের উপাদান
- পটভূমি
- চরিত্রায়ন
- আখ্যান
- দ্বন্দ্ব
- চরমসীমা
- মীমাংসা
- মূলভাব
- দৃষ্টিকোণ
নিম্নে এদের সবিস্তার বর্ণনা দেয়া হলো:
পটভূমি
- সময়
- স্থান
- পরিসর
- মেজাজ ও আবহ
- চিত্রকল্পের ব্যবহার
সময়
- সাধারণত কোনো দৃশ্যের পটভূমি বিস্তারের অংশ হিসেবে সময় কাঠামো নির্ধারণ করা হয়।
- আখ্যানের অগ্রগতির পাশাপাশি চরিত্রের প্রেক্ষাপট ও হাবভাবের ক্ষেত্রে সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক।
- সাময়িক পটভূমির অংশ হতে পারে নির্দিষ্ট তারিখ অথবা ঘটনা। স্বল্প সময় পরিসরের কাহিনীর ক্ষেত্রে মৌসুম, দিনের কোনো সময়, এমনকি ঘণ্টার হিসাবও বেশি প্রাসঙ্গিক হতে পারে।
স্থান
- গল্পটি কোন জায়গায় ঘটছে সেই তথ্য তুলনামূলকভাবে একটু বেশি সোজাসাপটা।
- রোমিও জুলিয়েটের গল্পে চরিত্ররা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বাড়ি ও জনসমাগমের স্থানে অবস্থান করে। তাই এক্ষেত্রে স্থানিক পটভূমি হিসেবে ক্যাপুলেট বা মন্টাগু পরিবারের বাড়ি উল্লেখ না-করে বরং ভিয়েনা শহরের নাম বলা ভালো।
- যে স্থানে দৃশ্যগুলি সেট করা হয়, তা গল্পের মেজাজ ও সুরের ওপর ভূমিকা রাখে।
পরিসর
পরিসর বলতে বোঝায় না যে, গল্পটা কতক্ষণের অথবা পড়তে কত ঘণ্টা সময় লেগেছে।
পরিসর বলতে বোঝায়, গল্পের শুরু থেকে শেষ অবধি সময়কাল। কিছু গল্পের জন্য এই সময়কাল হতে পারে অল্প কয়েক ঘণ্টা অথবা কয়েক দিন; যেখানে অন্য গল্পগুলির পরিসর থাকে কয়েক দশক থেকে শতক পর্যন্ত।
মেজাজ ও আবহ
- আবহাওয়া, তাপমাত্রা, আলো এবং অন্যান্য বস্তুগত নিয়ামক দ্বারা চরিত্র ও ঘটনাবলী প্রভাবিত হয় যা কিনা পাল্টা প্রভাব রাখে একটি দৃশ্যের আবেগিক বৈশিষ্ট্য, মেজাজ, ও আবহাওয়া সৃষ্টিতে।
- মেজাজ ও আবহ সাহিত্যকর্মের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এরা পাঠককে মানসিক ও আবেগিকভাবে প্রভাবিত করে।
চিত্রকল্পের ব্যবহার
চিত্রকল্প হলো ইন্দ্রিয়জাত অভিজ্ঞতার শাব্দিক উপস্থাপন। আমাদের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয়গুলি হলো -
- দৃশ্য
- শব্দ
- স্পর্শ
- স্বাদ
- ঘ্রাণ
চরিত্রায়ন
কোনো গল্পের চরিত্র মানুষ হতে পারে অথবা কোনো প্রাণীও হতে পারে।
মূল চরিত্র বা প্রোটাগনিস্ট
প্রত্যেক গল্পেরই একজন প্রোটাগনিস্ট থাকে, গল্পের যে প্রধান চরিত্র, সে কাহিনীকে সচল করে, পাঠকের সহানুভূতি ও আগ্রহ জাগিয়ে তুলে পাঠককে গল্পের সাথে সম্পৃক্ত করে। প্রোটাগনিস্ট কখনো হয় গল্পের নায়ক বা নায়িকা, যাকে কেন্দ্র করে সম্পূর্ণ আখ্যান আবর্তিত হয়।
খল চরিত্র বা এন্টাগনিস্ট
ইনি হলেন মূল চরিত্রের প্রধান বিরোধী শক্তি। খল চরিত্র একজন খারাপ ব্যক্তি বা সত্তা। গল্পের ক্রিয়া আরম্ভ হয় মূল চরিত্র ও খল চরিত্রের মধ্যকার সংঘর্ষ থেকে। এন্টাগনিস্ট হতে পারে কোনো ব্যক্তি, পশু, অসাড় বস্তু অথবা প্রকৃতি স্বয়ং।
চরিত্রের ধরন
গতিময় চরিত্র: গল্প বা উপন্যাস চলাকালীন এই ধরনের চরিত্রের মাঝে বদল ঘটে। চরিত্রের দৃষ্টিভঙ্গিতে এই পরিবর্তন স্থায়ী হয়। এজন্য গতিময় চরিত্রকে একই সাথে 'উন্নয়নশীল চরিত্র' বলে।
স্থির চরিত্র: পুরো গল্প জুড়ে এই ধরনের চরিত্র অপরিবর্তনীয় থাকে।গল্প বা উপন্যাসের ঘটনা এই চরিত্রের মনোভাব, দৃষ্টিভঙ্গি, অভ্যাস, ব্যক্তিত্ব, বা অনুপ্রেরণায় কোনো বদল আনতে পারে না।
গোলীয় চরিত্র: গল্পের এই চরিত্রসমূহ সুগঠিত ও জটিল ব্যক্তিত্বসম্পন্ন। তারা বেশি বাস্তবসম্মত এবং এদের ব্যক্তিত্বে গভীরতা দেখা যায় বেশি।
চরিত্রায়ন মূলত দুইভাবে সম্পন্ন হয়।
প্রত্যক্ষ চরিত্রায়ন: যখন লেখক/কথক দর্শকের কাছে একজন চরিত্রের সরাসরি বর্ণনা দেয়। যেমন - অতনু খাওয়ার ব্যাপারে বিরক্তিকর পর্যায়ের খুঁতখুঁতে।
অপ্রত্যক্ষ চরিত্রায়ন: যখন কোনো চরিত্রের ক্রিয়া বা সংলাপের দ্বারা তার ব্যক্তিত্বকে প্রদর্শন করা হয়। যেমন - অতনু টেবিলে খাবার পাওয়ামাত্র বাটিটা উল্টে ফেলে দিল আর ওয়েটারকে চিৎকার করে বলল, 'পেঁয়াজগুলো ভালোভাবে সেদ্ধ হয়নি, এই খাবার আমি কীভাবে খাব?'
আখ্যান
গল্পের আখ্যান হলো কয়েকটি ঘটনা যার মাধ্যমে লেখক ধারণা দেয় কী ঘটছে, কার সাথে, এবং কেন।
আখ্যান লেখ |
দ্বন্দ্ব
- মানুষ বনাম প্রকৃতি
- মানুষ বনাম সমাজ
- মানুষ বনাম মানুষ
- মানুষ বনাম সে নিজে
চরম সীমা
যখন ক্রিয়া তার দ্বন্দ্বের সর্বোচ্চ বিন্দুতে পৌঁছায় এবং যেখান থেকে গল্প যেকোন দিকে মোড় নিতে পারে তাকে চরম সীমা বা ক্লাইম্যাক্স বলে।
মীমাংসা
এটি গল্পের একটি অংশ যেখানে মূল সমস্যা মিটে গেছে বা সমাধান করা হয়েছে। নিম্নমুখী ক্রিয়ার পর মীমাংসা হয় এবং সাধারণত এখানেই গল্প শেষ হয়।
মূলভাব
- গল্প বলার মধ্য দিয়ে লেখক যে 'বার্তা' সরবরাহ করতে চায়।
- গল্পের কেন্দ্রীয় ভাবনা। ছোটগল্পের সাধারণত একটিই মূলভাব বা থিম থাকে, উপন্যাসের ক্ষেত্রে একাধিক থাকতে পারে।
- জীবনপাঠ, অর্থ, নীতিকথা, জীবন অথবা মানবপ্রকৃতি নিয়ে কোনো বার্তা যা সাহিত্যকর্মের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়।
দৃষ্টিকোণ
দৃষ্টিকোণ বলতে বোঝায়, গল্পটি কার ভাষ্যে বলা হচ্ছে। গল্প তিনভাবে বলা যায় - প্রথম পুরুষে, দ্বিতীয় পুরুষে, অথবা তৃতীয় পুরুষে।
দৃষ্টিকোণের সর্বনাম
- আমি, আমাকে, আমার - প্রথম পুরুষ
- সে, তার - তৃতীয় পুরুষ
- তুমি, তোমার - দ্বিতীয় পুরুষ
সমাপ্তি
কীভাবে সমস্যার সমাধান হলো বা নিস্তার পাওয়া গেল তাই হলো গল্পের সমাপ্তি। মনে রাখতে হবে, 'সমাপ্তি' কথাটি বলা ছাড়াই পাঠক যেন বুঝতে পারে যে গল্পটি শেষ হয়ে হয়েছে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন