সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

চলচ্চিত্রের দশ দিকপাল

এডয়ার্ড ময়ব্রিজ

স্থির আলোকচিত্র থেকে চলচ্চিত্রের দিকে অগ্রযাত্রায় প্রথম সফল পদক্ষেপ রাখেন যে ব্যক্তি তার নাম এডয়ার্ড ময়ব্রিজ। একজন ভীষণ প্রতিভাবান পাগলাটে অ্যাংলো আমেরিকান, যিনি তার সিনেম্যাটিক বৈচিত্র্যময় জীবনে ওয়াশিং মেশিন উদ্ভাবন করেছেন এবং খুনের দায়ে কাঠগড়াতেও দাঁড়িয়েছেন। যদিও তাকে নিয়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো রেসের বাজি আর চলন্ত ঘোড়ার ছবি তোলার গল্প। ১৮৭২ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার প্রাক্তন গভর্নর লিলেন স্ট্যানফোর্ড এক অদ্ভুত বাজি ধরে তা প্রমাণের জন্য চিত্রগ্রাহক ময়ব্রিজের শরণাপন্ন হন। বাজিটা ছিল, একটি ঘোড়া দৌড়কালীন কোনো সময়ে মাটি থেকে তার সবগুলো খুর শূন্যে তোলে কিনা। প্রায় পাঁচ বছর নিরন্তর প্রচেষ্টার পর ১৮৭৮ সালের জুন মাসে ময়ব্রিজ এই দাবি পুরোপুরি প্রমাণ করতে সফল হন এবং একইসাথে আবিষ্কার করেন চলমান ছবি তোলার নতুন প্রযুক্তি। এই বিশেষ কায়দায় রেসের ট্র্যাকে এক ডজন ক্যামেরা পরপর এমনভাবে রাখা হয়েছিল যাতে করে ছুটন্ত ঘোড়ার শরীরের স্পর্শে একেকটা ক্যামেরার শাটার চালু হয়ে যায়। ফলাফল চমকপ্রদ। এই সিরিজটি ‘দি হর্স ইন মোশন’ নামে প্রকাশিত হয়ে অচিরেই শিল্পী, সমালোচক ও প্রাণীবিদদের ভেতরে সাড়া ফেলে দেয়। ময়ব্রিজ কিন্তু থেমে থাকেননি। তিনি এই ছবিগুলি গতিময়ভাবে প্রদর্শনের জন্য উদ্ভাবন করেন জুপ্র্যাক্সিস্কোপ নামের এক যন্ত্র। তবে ময়ব্রিজের সবচেয়ে প্রভাবশালী কীর্তি সম্ভবত পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ‘অ্যানিমেল লোকোমোশন’ শিরোনামের কাজগুলি। স্টুডিওতে মানুষ ও ফিলাডেলফিয়া চিড়িয়াখানায় পশুপাখির প্রায় লক্ষাধিক ছবি তোলেন ময়ব্রিজ। ময়ব্রিজের গবেষণা তাকে চলচ্চিত্রের দিকে অনেক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যায় যখন তিনি মোটরযুক্ত ক্যামেরা উদ্ভাবন করেন। ফলে আর ছবি তোলার জন্য সাবজেক্টের সংস্পর্শের প্রয়োজন থাকল না। জুপ্র্যাক্সিস্কোপে সেসব ছবি প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে উনি পৃথিবীর প্রথম বাণিজ্যিক সিনে প্রদর্শনী শুরু করেন।

টমাস এডিসন 

যদিও বড় পরিসরে চলচ্চিত্র প্রদর্শন, এমনকি চলচ্চিত্রের উদ্ভাবনের কৃতিত্ব দেয়া হয় যাকে তার নাম টমাস আলভা এডিসন। ১৮৮৮ সালে তিনি তার উদ্ভাবিত ফনোগ্রাফের একটি দৃশ্যগত সঙ্গী নির্মাণের দায়িত্ব দেন সহকারী ডব্লিউ কে এল ডিকসনকে। ময়ব্রিজের মৌলিক কলাকৌশল থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই ডিকসন উদ্ভাবন করেন চলমান চিত্র গ্রহণের যন্ত্র কিনেটোগ্রাফ। তবে ধারণকৃত ছবি দেখানর জন্য এডিসন তাকে প্রজেক্টর তৈরির বদলে উঁকি দিয়ে দেখার মতো একটা যন্ত্র নির্মাণ করতে বলেন। ১৮৯১ সালে যন্ত্রটির পেটেন্ট নেয়া হয়, যার নাম কিনেটোস্কোপ। এডিসন কোম্পানি স্থাপন করে তার নিজস্ব কিনেটোগ্রাফি স্টুডিও বিখ্যাত ব্ল্যাক মারিয়া। প্রথমদিকে পার্ক ও অন্যান্য স্থানে চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী চলছিল। অচিরেই নিউ ইয়র্কের একটি স্টোরকে কিনেটোস্কোপ পার্লারে পরিণত এডিসন করে জোরদার ব্যবসা চালাতে থাকেন এডিসন। তার এই যন্ত্রের আন্তর্জাতিক স্বত্ব না থাকায় ইউরোপে অনেকেই এর নানারকম সংস্করণ ব্যবহার করতে থাকে। ১৮৯৬ থেকে কয়েক বছর এডিসন কর্তৃক বাজারে আনা ভিটাস্কোপ মার্কিন চলচ্চিত্র প্রদর্শনের একরকম ফরম্যাট দাঁড় করিয়ে দেয়। এমনকি সিনেমার বিজ্ঞাপনে ছবির নামের চাইতে গুরুত্ব পেত ভিটাস্কোপের নাম। এডিসন শুধুমাত্র সিনেমা দেখিয়েই নয়, এ সংশ্লিষ্ট যাবতীয় পেটেন্ট নিয়েও ব্যবসা শুরু করেন। তার কড়াকড়িতে চলচ্চিত্রকর্মীদের সুদূর ক্যালিফোর্নিয়ার পাড়ি জমাতে হয়, যেখানে গড়ে ওঠে আজকের শিল্পাঞ্চল হলিউড।

লুমিয়ের ভার্তৃদ্বয়

এদিকে ইউরোপে যখন এডিসনের কিনেটোস্কোপের দেদার নকল হচ্ছে, তখনি কেউ কেউ এর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েই তৈরি করে ফেলেন আরো উন্নতমানের যন্ত্র। ফ্রান্সের মঁসিও লুমিয়ের কিনেটোস্কোপের একটি প্রদর্শনী দেখে তার দুই পুত্র অগস্ত ও লুই লুমিয়েরকে পরামর্শ দেন অনুরূপ যন্ত্র নির্মাণের। তাদের তৈরি ‘সিনেমাতোঘাফ’ ছিল একাধারে একটি ক্যামেরা, প্রিন্টার ও প্রজেক্টর। বড় ভাইয়ের চেয়ে দুই বছরের ছোট লুইয়ের মাথায় ছিদ্রযুক্ত ফিল্ম স্ট্রিপের আইডিয়াটি এসেছিল সেলাই যন্ত্র থেকে। ডিজিটাল বিপ্লবের আগ পর্যন্ত চিত্রগ্রহণের মৌলিক কর্মপদ্ধতি এই আইডিয়ার ওপরই নির্ভরশীল ছিল। প্যারিসে ১৮৯৫ সালে লুমিয়ের ভাতৃদ্বয় প্রদর্শন করেন তাদের প্রথম চলচ্চিত্র ‘ওয়ার্কার্স লিভিং দ্য লুমিয়ের ফ্যাক্টরি’। প্রথমদিকে এডিসন স্থির ক্যামেরার সাহায্যে শুধুমাত্র মঞ্চের পরিবেশনাই ধারণ ও প্রদর্শন করতে পারতেন। কিন্তু লুমিয়েরদের বিষয়বস্তু ছিল প্রাত্যহিক জীবন, যাকে বলে ‘আকচুয়ালিতে’। এদের মধ্যে ‘অ্যারাইভাল অফ অ্যা ট্রেন’ বহুল পরিচিত, প্রথম দিককার তথ্যচিত্র হিসাবে। একইসাথে ‘দ্য গার্ডেনারকে বলা হয় প্রথম কমেডি চলচ্চিত্র। প্রকৌশলী জুলস কার্পেন্টিয়ারের তার কারখানায় সিনেমাতোঘাফের ১০টি যন্ত্র তৈরি করে দিয়েছিলেন। তুলনামূলক হালকা ও সহজে বহনযোগ্য হওয়ায় এই যন্ত্র সিনেমাকে দেশ-বিদেশে ছড়াতে সাহায্য করে। ১৮৯৮ সালে ঢাকার ক্রাউন থিয়েটারেও সিনেমাতোঘাফের একটি প্রদর্শনী হয়। লুমিয়ের ভাইরা সব মিলিয়ে প্রায় দেড় হাজার চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। তারা এমনকি রঙিন চলচ্চিত্র নিয়েও গবেষণা করেন লিপম্যান পদ্ধতি ও বাইক্রোমাটিড গ্লু পদ্ধতি ব্যবহার করে। লুমিয়ের ভাইরাই চলচ্চিত্রকে অভিজাত শ্রেণির গণ্ডি থেকে বের করে আনেন সাধারণের বিনোদন মাধ্যম হিসেবে।

জর্জ মেলিয়ে

লুমিয়েরদের প্রথম চলচ্চিত্র প্রদর্শনীতে উপস্থিত ছিলেন ফ্রান্সেরই একজন জাদুকর যার হাত ধরে চলচ্চিত্র এক বিরাট মোড় নেয় প্রামাণ্য থেকে কাহিনীচিত্রের দিকে। নাম তার জর্জ মেলিয়ে। উনি লুমিয়ের ভাইদের অনুষ্ঠান দেখে এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে সিনেমাতোঘাফ কেনার প্রস্তাব দেন। যদিও তার এই প্রস্তাব প্রত্যাখাত হয়েছিল। তিনি নিজের জাদুর ব্যবসা গুটিয়ে নিয়ে সর্বস্ব বাজি রেখে ১৮৯৭ সালে তৈরি করেন তার নিজস্ব স্টার ফিল্ম কোম্পানি। উনি যে ক্যামেরাটা ব্যবহার করতেন সেটাও তার নিজেরই তৈরি, একটা প্রজেক্টরের বিপরীত কর্মকৌশল অনুসরণের মাধ্যমে। তিনি নিজেই তার চলচ্চিত্র পরিচালনা করতেন, সম্পাদনা করতেন এবং অভিনয়ও করতেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগ পর্যন্ত এরকম প্রায় ৫০০ চলচ্চিত্রের জনক ছিলেন মেলিয়ে। চিত্রগ্রহণ চলাকালীন ক্যামেরা চালু-বন্ধ করার মধ্য দিয়ে উনি ‘ট্রিক ফটোগ্রাফি’ আবিষ্কার করেন। ১৯০২ সালে মুক্তি পায় তার ৩০ দৃশ্যের কাহিনীচিত্র ‘লো ভোয়াজ দঁ লা লুন’। এই ছবি তাকে আন্তর্জাতিক জনপ্রিয়তা এনে দেয়। দ্রুতই লুমিয়ের ভাইদের 'আকচুয়ালিতে'র দিন শেষ হয় এবং কাহিনীচিত্রের জয়জয়কার আরম্ভ হয়।

এডউইন এস পোর্টার

আমেরিকাতে মেলিয়ের ‘লো ভোয়াজ দঁ লা লুন’ ছবির অনুলিপি করে সেসবের অবৈধ প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেন আর কেউ নন টমাস আলভা এডিসন। এবং এই নকল করার দায়িত্ব তিনি দেন তারই কোম্পানির এক মেধাবী প্রকৌশলী এডউইন এস পোর্টারকে। মেলিয়ে দ্বারা প্রভাবিত এবং এডিসন দ্বারা আদিষ্ট হয়ে ১৯০২ সালেই পোর্টার তৈরি করেন ‘দি লাইফ অফ অ্যান আমেরিকান ফায়ারম্যান’। তার ছবিতেই আমরা দেখতে পাই পৃথক পৃথক শট ব্যবহার করে কাহিনীর ধারাবাহিকতা নির্মাণ করতে। ১৯০৩ সালে, পর্দায় অরৈখিক গল্প বলার সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত নির্মাণ করেন পোর্টার, তার ‘দা গ্রেট ট্রেইন রবারি’ চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে। মেলিয়ের দেখানো পথ ছেড়েও তিনি অনেকখানি এগিয়ে গেলেন সিনেমায় সমান্তরাল কাহিনী বিন্যাস, ক্যামেরা প্যানিং আর ক্রস কাটিং ব্যবহার করে। প্রথমবারের মতো আমরা দেখলাম যে, পর্দায় একটি গল্প বলার জন্য একটানা একই সময় একই জায়গার কাহিনী না দেখালেও চলে। ‘দা গ্রেট ট্রেইন রবারি’ এত দর্শকপ্রিয় হয় যে পরবর্তীতে স্থায়ী প্রেক্ষাগৃহ খোলা কিংবা চলচ্চিত্রের একটি বাণিজ্যিক শিল্প হিসাবে গড়ে ওঠায় এটি সরাসরি প্রভাব রাখে। ১৯০৯ সালে এডউইন এস পোর্টার এডিসনের কোম্পানি ছেড়ে দেন এবং স্বাধীনভাবে চলচ্চিত্র নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু করেন। ১৯১৫ সালে মুক্তি পাওয়া তার সর্বশেষ ছায়াছবি ‘নায়াগ্রা ফলস’ ছিল বিশ্বের প্রথম অ্যানাগ্লিফ ত্রিমাত্রিক চলচ্চিত্র।

ডেভিড ওয়র্ক গ্রিফিথ

পোর্টার যখন এডিসন কোম্পানি ছাড়বেন, তার আগ দিয়ে তার কাছে একজন তরুণ আসেন সিনেমায় অভিনয় করতে। খুব সাধারণ একটা চলচ্চিত্রে তাকে সুযোগও দেয়া হয়। অভিনয় করতে করতেই তিনি এক সময় হাত দেন চলচ্চিত্র নির্মাণে। তার পরিচালিত ১৯১৪ সালের ‘দি বার্থ অফ অ্যা নেশন’ আজ অবধি চলচ্চিত্র জগতের অন্যতম বিতর্কিত ছবি। একইসাথে একে বলা হয় ধ্রুপদী চলচ্চিত্রের সূচনা। প্রচলিত দুই রিলের সিনেমা থেকে বেরিয়ে উনি নির্মাণ করেছিলেন প্রথম পূর্ণ দৈর্ঘ্য ছবি। তাছাড়া লং শট, ফুল শট, ওয়াইড শটের ব্যবহারও তিনিই শুরু করেন। সোভিয়েত তাত্ত্বিকদের নামকরণের ১০ বছর আগেই তিনি ফিল্ম মন্তাজের প্রয়োগ করেন। 'দি বার্থ অফ অ্যা নেশন' তার বর্ণবাদিতার জন্য যতটা আলোচিত-সমালোচিত হয়েছিল, সামাজিক-রাজনৈতিক প্রভাব রেখেছিল, সে তুলনায় পরবর্তী চলচ্চিত্র 'ইনটলারেন্স' ততটা সাড়া ফেলতে পারেনি। পূর্বসূরির বিপরীতে ১৯১৫ সালে মুক্তি পাওয়া ছায়াছবিটি ছিল অত্যন্ত উদার। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এটি ব্যবসাসফল হয়নি। অথচ তার শত্রুরাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নে ছবিটি এমন প্রভাব রাখে যে চলচ্চিত্রের শিল্পরূপকে তা স্থায়ীভাবে বদলে দেয়।

লেভ কুলেশভ

রুশ বিপ্লবের পর সোভিয়েত ইউনিয়ন বিশ্বের ইতিহাসে প্রথমবার সিনেমাকে পড়াশোনার একটি বিষয় হিসেবে উপলব্ধি করে। বিপ্লবের পরপরই সদ্য সংগঠিত রাষ্ট্রের নায়ক ভি. আই. লেলিন ঘোষণা দেন, সমস্ত শিল্পমাধ্যমের মধ্যে চলচ্চিত্রই সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার। ভি.জি.আই.কে. বা মস্কো ফিল্ম স্কুলে শুরু হয় 'সেলুলয়েডবিহীন ফিল্ম' তৈরির চর্চা। এই চর্চার পুরোভাগে ছিলেন সিনেমার শিক্ষক লেভ কুলেশভ। কোনভাবে তার হাতে আসে গ্রিফিথের 'ইনটলারেন্স' ছবির একটি কপি। কুলেশভের কর্মশালায় একেই নানাভাবে কেটেকুটে, শট অদলবদল করে বসিয়ে, পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে তিনি কুলেশভ ইফেক্ট আবিষ্কার করেন। যদিও 'বাই দ্য ল' (১৯২৬)-এর মতো ছবি তিনি পরিচালনা করেছেন তবুও তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান চলচ্চিত্র শিক্ষার একজন গুরু হিসাবেই।

আইজেনস্টাইন ও পুদোভকিন

কুশেলভের দুই কৃতী শিক্ষার্থীদের মধ্যে সের্গেই আইজেনস্টাইন চলচ্চিত্র নির্মাণের আগেই 'মনতাজ অব অ্যাট্রাকশন' লেখার দ্বারা তাত্ত্বিক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন। ১৯২৪ সালে মুক্তি পায় তার প্রথম ছবি 'স্ট্রাচকা'। ১৯০৫ সালের বিপ্লবকে উপজীব্য করে আইজেনস্টাইন নির্মাণ করেন 'দি ব্যাটেলশিপ পটেমকিন' (১৯২৫)। যার বিখ্যাত ওডেসা স্টেপ সিকোয়েন্স চলচ্চিত্র ইতিহাসের সর্বকালের সবচেয়ে বিখ্যাত সিকোয়েন্স। আইজেনস্টাইনের মন্তাজ তত্ত্বের - বিশেষ করে ইন্টেলেকচুয়াল মন্তাজের - সফল প্রয়োগ দেখা যায় তাঁর ছবিতে।

কুশেলভের আরেক শিষ্য সভেদলভ পুদোভকিন চলচ্চিত্রের তত্ত্বীয় জগতের বাইরে স্বল্প পরিচিত। তিনি চলচ্চিত্র সম্পাদনার পাঁচটি কৌশল বর্ণনা করেন: বৈপরীত্য, সমান্তরবাদ, প্রতীকবাদ, যুগপততা (ক্রস কাটিং), ও লেইট মোটিফ। নির্মাতা হিসাবে পুদোভকিনের হাতেখড়ি হয় 'মাত' (১৯২৬) সিনেমা দিয়ে। পরের বছর মুক্তি পায় 'দি এন্ড অব সেন্ট পিটার্সবার্গ'। আইজেনস্টাইনের ছবিতে যেরকম বৃহৎ প্রেক্ষাপটের রাজনৈতিক-ঐতিহাসিক আখ্যান গুরুত্ব পেয়েছে তার বিপরীতে পুদোভকিনের চলচ্চিত্র অনেকটাই ব্যক্তিকেন্দ্রিক। ১৯২৮ সালে অক্টোবর বিপ্লবের এক দশক পূর্তিতে দুইজনকেই দায়িত্ব দেয়া হয় চলচ্চিত্র নির্মাণের। তার প্রেক্ষিতে আইজেনস্টাইন ও পুদোভকিন যথাক্রমে 'অক্টোবর' ও 'স্টর্ম ওভার রাশিয়া' তৈরি করেন। স্তালিন প্রশাসনের আমলে তারা উভয়ই নানারকম বিধি নিষেধের সম্মুখীন হন। তাদের ছবিকে শুদ্ধবাদী বলে আখ্যাও দেয়া হয়। ১৯৩২ সালে 'আ সিম্পল কেস' ছিল পুদোভকিনের তৈরি প্রথম সবাক চলচ্চিত্র, সোভিয়েত সেন্সর বোর্ড যার শব্দ কর্তন করে দেয়। পরে তিনি আরো কিছু সবাক ছবি বানিয়েছিলেন।

দোভজেঙ্কো

ইউক্রেনের এক কৃষক পরিবারে জন্ম নেন অলিয়েক্সন্দর পেত্রোভিচ দোভজেঙ্কো। তাঁর ছবিতে উঠে এসেছে একেবারেই প্রান্তিক জনের কথা। তাঁর ইউক্রেন ত্রয়ী 'যোয়ানেহোরা' (১৯২৮), 'আর্সেনাল' (১৯২৯), ও 'যেমলিয়া' (১৯৩০) নির্বাক যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র। এর মধ্যে শেষ দুইটি যথাক্রমে 'আর্সেনাল' ও 'আর্থ' নামে পশ্চিমে বিখ্যাত হয়। মূলত তাঁকে দিয়েই তিরিশের দশকে সোভিয়েত চলচ্চিত্র শিল্প আন্তর্জাতিক পরিচিতি পায়। যদিও তাঁর বেশিরভাগ চলচ্চিত্র সোভিয়েত কর্তৃপক্ষের অপ্রিয় হয়। চরম উত্থান-পতন ও ঘটনাবহুল জীবনে দোভজেঙ্কো নিজে হাতে ছবি নির্মাণ করেন মাত্র সাতটি। ছবি ও চিত্রনাট্যের বিষয়বস্তুর জন্য এই মেধাবী পরিচালককে যেমন রাষ্ট্রের সাথে বিরোধে দেখা গেছে, আবার 'অর্ডার অব লেলিন'-সহ একাধিকবার তিনি ভূষিত হয়েছেন 'স্তালিন পুরস্কারে'। নির্মাতা হিসাবে তাঁর শেষ কাজ ছিল জীবনী চলচ্চিত্র 'মিচুরিন'

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

48 LAWS OF POWER by Robert Greene and Joost Elffers

Vladimir Putin The definition of power in 21st century

হারবার্ট স্পেনসারের 'জৈবিক সাদৃশ্যবাদ'

ইংরেজ সমাজতত্ত্ববিদ ও জীববিজ্ঞানী হারবার্ট স্পেনসারকে বলা হয় সমাজবিজ্ঞানের দ্বিতীয় জনক। তিনি 'সামাজিক ডারউইনবাদ'-এর একজন প্রচারক। স্পেনসারের বিখ্যাত 'জৈবিক সাদৃশ্যবাদ' সমাজ ও জীবকে বিশেষ সাদৃশ্যপূর্ণ বলে দাবি করে। হারবার্ট স্পেনসার (১৮২০-১৯০৩) ১। সমাজ ও জীব উভয়েই আকারে বৃদ্ধি পায়। মানবশিশু প্রাপ্তবয়স্ক হয়। মহল্লা থেকে মেট্রোপলিটন হয়, ক্ষুদ্র রাষ্ট্র থেকে সাম্রাজ্য তৈরি হয়।   ২। প্রত্যেকে আকারে যত বড় হয় উভয়ের কাঠামো জটিলতর হতে থাকে। ৩। দুই ক্ষেত্রেই, কাঠামোগত পার্থক্যের কারণে কার্যকারিতায় অনুরূপ পার্থক্য দেখা দেয়। ৪। জীবদেহ ও সমাজ উভয়েই ক্ষুদ্রতর একক দ্বারা গঠিত। জীবের যেমন কোষ রয়েছে তেমন সমাজের রয়েছে ব্যক্তি। একাধিক কোষ মিলে যেভাবে বৃহত্তর অঙ্গ গঠন করে, একইভাবে একাধিক ব্যক্তি মিলে সমাজের বিভিন্ন অংশ গঠন করে। ৫। সমাজ ও জীব উভয়ই মূলত তিন ধরনের তন্ত্র বা ব্যবস্থার ওপর টিকে থাকে। এরা হলো - বিপাক তন্ত্র (sustaining system), সংবহন তন্ত্র (distributor or circulatory system), স্নায়ু তন্ত্র (regulatory system). জীবের জন্য খাদ্য হলো এর চালিকা শক্তি, সমাজের ক্ষেত্রে যা হলো কৃ...

আমার লেখা বই

আমার সর্বশেষ বই বাংলায় শিখি ফরাসি ভাষা শাখা: ভাষাশিক্ষা প্রকাশকাল: ২০২৪ প্রচ্ছদ:  বইটি পড়ুন আমার পঞ্চম বই চিত্রনাট্যচিত্রণ: কাহিনি ও চিত্রনাট্য লেখার কলাকৌশল শাখা: চিত্রনাট্য প্রকাশকাল: ২০২৪ প্রচ্ছদ: পার্থপ্রতিম দাস বইটি পড়ুন আমার সর্বশেষ উপন্যাস অধিনায়ক শাখা: উপন্যাস প্রকাশকাল: ২০২০ প্রচ্ছদ: রাজীব দত্ত বইটি পড়ুন আমার প্রথম উপন্যাস রঙবাহার শাখা: উপন্যাস প্রকাশকাল: ২০১৫ প্রচ্ছদ: তৌহিন হাসান বইটি পড়ুন আমার দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ অপরূপকথা শাখা: গল্প সঙ্কলন প্রকাশকাল: ২০১৩ প্রচ্ছদ: তৌহিন হাসান বইটি পড়ুন আমার প্রথম গল্পগ্রন্থ ভূতলোজি কিংবা চিত্তশুদ্ধি শাখা: গল্প সঙ্কলন প্রকাশকাল: ২০১২ প্রচ্ছদ: বিক্রমাদিত্য বইটি সম্পর্কে জানুন My books on Goodreads রঙবাহার (avg rating 5.00) অপরূপকথা (avg rating 5.00) অধিনায়ক ভূতলোজি কিংবা চিত্তশুদ্ধি বাংলায় শিখি ফরাসি ভাষা

48 Laws of Power in Bangla Free PDF Download

বিনামূল্যে ই-বুক পিডিএফ ডাউনলোড করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন সরাসরি পড়তে এখানে ক্লিক করুন বিক্রমাদিত্য's books on Goodreads রঙবাহার reviews: 1 ratings: 2 (avg rating 5.00) অপরূপকথা ratings: 1 (avg rating 5.00) অধিনায়ক ভূতলোজি কিংবা চিত্তশুদ্ধি বাংলায় শিখি ফরাসি ভাষা Goodreads reviews for রঙবাহার Reviews from Goodreads.com রাজাদের রাজ্যে রাষ্ট্ররা by রিফু My rating: 5 of 5 stars ডেস্কে বই জমছেই, ছোটগল্পের বই বাদে, পাই না, লেখে না কেউ—জানি কী লেখে—গাছ মারে শুধু শুধু। রিফুর বই আব্বা অল স্টার রেকমেন্ডেশনসহ দিয়ে গেল। গল্প-কবিতা-ক্যাপশনে ‘রাষ্ট্র’ ‘রাষ্ট্র’ ‘রাষ্ট্র’ লিখতে লিখতে ছাবাছাবা করে ফেলেছে সবাই, তারপরও, এই নামকরণটায় বাড়তি মাথা খাটানোর ইঙ্গিত আছে। এক ঘণ্টায় বইয়ের অর্ধেক পড়েছি, চোখের আন...

TFP 415 WORLD CINEMA : Class Notes

Aug 14, 2023 LECTURE 2 Expressionism Reality is distorted Artist’s personal feeling From Northern Europe How did it begin? Effects of WWI  Foreign film banned Horror, insecurity, and paranoia From German romanticism  ENLIGHTENMENT ROMANTICISM Reason Emotion Progress Common good Individuality Unique potential Science and technology Rational, ordered society Nature and imagination Spontaneous, passionate life Social conventions and institutions  Resistance to social conventions and institutions First appeared in poetry and theater “The world is a laboratory” by Gottfried Benn Characteristics of german expressionist theater Distorted and exaggerated sets, props, and costumes Unease and anxiety Symbolism- character might be represented by an animal or object or a particular color Non-linear plot Confusion and disorientation Fragmented nature of the human experience The threepenny opera (1928) by bertolt brecht Characteristics of german expressionism The subjective view of the...

THE ART OF SEDUCTION by Robert Greene

রবার্ট গ্রিন এখানে ‘সিডাকশন’ কথাটাকে ব্যবহার করেছেন শুধুমাত্র যৌন প্রলোভন হিসেবে নয়, বরং আরো ব্যাপক অর্থে—রাজনৈতিক, সামাজিক বা অন্যান্য ক্ষেত্রে যেই প্রলোভন প্রযোজ্য। এই প্রলোভনের নীতিগুলো জানলে নিজেকে ও নিজের সম্পর্কগুলোকে আরেকটু ভালোভাবে ঝালাই করা যাবে। সেইসাথে তাদের প্রয়োগ করা যাবে ব্যক্তিগত ও পেশাদার জীবনে।    সারকথা প্রলোভন ব্যাপারটাই মনস্তত্ত্বের খেলা, সৌন্দর্যের না। ফলে এই খেলার একজন ওস্তাদ হয়ে ওঠা যেকোন মানুষেরই আয়ত্ত্বে আছে। এমন নয় যে, একজন প্রলোভনকারী তার ক্ষমতাটাকে একবার চালু আর একবার বন্ধ করেন—প্রতিটা সামাজিক ও ব্যক্তিগত লেনদেনই তার কাছে প্রলোভনের একেকটা সুযোগ। সুযোগের একটা মুহূর্তও নষ্ট করার নাই। প্রলোভনকারীরা কখনো আত্মনিমগ্ন থাকে না। তাদের দৃষ্টি থাকে বাইরের দিকে, ভিতরের দিকে নয়।  প্লেজার বা পুলক হলো আমাদেরকে আমাদের সীমার বাইরে টেনে নিয়ে যাওয়ার অনুভূতি, উদ্বেলিত করে দেওয়ার অনুভূতি—তা হতে পারে মানুষের দ্বারা, বা কোনো ঘটনার দ্বারা।  শেষত, যারা কিনা প্রলোভনকারী, তাদের দুনিয়াদারির সাথে নৈতিকতা ব্যাপারটার সম্পর্ক একদম নাই। প্রতিটা প্রলোভনের দুইটা উপাদান থাকে...

স্বর্গচূড়া

অবশেষে, একদিন, এতবছরের অপেক্ষার পর ট্রেনটা পেলাম আমি। সঙ্গের পোটলা-পুটলিগুলো প্রথমে কামরার ভেতর ছুঁড়ে দিলাম। তারপর নিজের নাম মুখে নিয়ে ঝাঁপিয়ে উঠলাম ট্রেনে। গাড়িটা এক মুহূর্ত থামে না প্লাটফর্মে। জোর গতিতে ছুটে চলে। কারো জন্য অপেক্ষা করতে নারাজ। একজনের জীবনে একবার বই দু’বার কখনো আসে না। পাল্লা দিয়ে ছুটে তাকে ধরতে হয়। নইলে নাই। অন্য গাড়ি ধরতে হবে। কিন্তু সে গাড়ি যাবে আরেক গন্তব্যে। ট্রেনের দরজা দিয়ে বাইরে উঁকি দিলাম। প্লাটফর্মে সাথীকে দেখতে পাই। হাত নেড়ে বিদায় জানাচ্ছে অথচ ঠোঁটে হাসি নাই। শুনতে পেলাম মনে মনে কেবল বলছে, তোমার যাত্রা শুভ হোক। (২) প্রথম কবে সাথীর দেখা পেয়েছিলাম ভালো মনে পড়ে না। মনে পড়ে, মন খারাপ করে প্লাটফর্মে বসে ছিলাম। সাথীকে পেয়ে মন ভালো হয়ে গিয়েছিল। কেন, তা মনে নাই। এরপর কত দিন, কত রাত পাশাপাশি বসে কেটে গেল। আমি আর সাথী। স্টেশন জুড়ে এত এত মুখ। কাউকে মনে ধরে নি। সাথী বাদে। সাথীর স্বজনরা একই স্টেশনে ছিল। তবু ও ছিল একা। কী জানি কেন, কখনো জিগ্যেস করা হয় নি। কিন্তু সাথী অনেক প্রশ্ন করত আমাকে। খুব অবাক হতো যে অন্যদের মতো আমার শরীরে কেন বাঁধন নাই। আমার মা-বাবার কথা জিগ...

মিডিয়া সাক্ষরতা : আদিপর্ব

মিডিয়া সাক্ষরতা ও এ সংক্রান্ত যাবতীয় জিজ্ঞাসা - মিডিয়া নিজে যতটা প্রাচীন তার চেয়ে কম পুরনো নয়। বর্তমানে তথ্য ও তথ্যপ্রযুক্তির সহজলভ্যতা মিডিয়া সাক্ষরতাকে অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে বেশি প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে সত্য। কিন্তু মিডিয়ার প্রভাব ও মিডিয়া সাক্ষরতার গুরুত্ব নিয়ে নানা প্রশ্ন অনেক অনেক আগে থেকেই আলোচিত হয়ে এসেছে। এটাও লক্ষণীয় যে মিডিয়ার পক্ষে-বিপক্ষে বিভিন্ন বিতর্ক একইসাথে নবাগত প্রযুক্তি, শিল্প (আর্ট ও ইন্ডাস্ট্রি উভয় অর্থে), এমনকি সংস্কৃতির গতিপথকে সময় সময় প্রভাবিত করে এসেছে। তবে ১৯৬০ এর দশক পর্যন্ত পরিভাষা বা গবেষণাক্ষেত্র হিসাবে এর অস্তিত্ব ছিল না। যতদিন না বিষয়টি যোগাযোগ স্কলার ও মিডিয়া প্রফেশনালদের কাজের ক্ষেত্র হয়ে ওঠে তার আগ পর্যন্ত (কিংবা এখনো কিছুসময়) যোগাযোগ সংশ্লিষ্ট ভাবনাসমূহ পরিচালিত হয়/হয়েছে তাত্ত্বিক, দার্শনিক, সমাজবিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী ও ভাষাতত্ত্ববিদদের দ্বারা। এ যাবৎ মিডিয়া সাক্ষরতা নিয়ে যত তত্ত্বীয় চিন্তা হয়েছে তাতে --- প্লেটো থেকে ফ্রয়েড, সসার (১) থেকে সিক্সাস (২) --- প্রত্যেকেরই রয়েছে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। উৎপত্তি ও সংজ্ঞা এই তথ্য মোটেও অভিন...

বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি : প্রাচীন অর্বাচীন তর্ক

এই লেখাটা ২০১৪ সালে প্রকাশিত হয় যোসেফাইট কালচারাল ফোরামের বার্ষিক ক্রোড়পত্র ত্রিলয়-এ। আমি তখন সেন্ট যোসেফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণির ছাত্র প্রাচীন -  ওই অর্বাচীনদের আমি শতবার সতর্ক করেছি, আর যা-ই করো, আত্মপরিচয় কখনো হারাবে না। স্পষ্টই দেখতে পাচ্ছি এদের সামনে যেন ঘোর অন্ধকার। নিজেদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি সবকিছু ভুলে গিয়ে এরা আজ পাশ্চাত্যের অনুকরণে ব্যস্ত। নিজের চশমার 'স্টাইল'টা যতই বাজে হোক না কেন ওটা পরেই তুমি স্বচ্ছ দেখবে। তা না করে যদি অন্যের চশমা চোখে দাও, তোমাকে মানাবে হয়তো ভালো কিন্তু হোঁচট খেতে হবে পদে পদে। অর্বাচীন - তোমার কথায় কেমন যেন ছাপাখানার গন্ধ। তোমার বয়স হয়েছে। তাই চোখে সমস্যা। চোখের পাতা বন্ধ করে তুমি অতীতটাকে সোনালি রঙের মনে করো। আর চোখ মেলে ভবিষ্যৎ দেখতে গেলেই তোমার মনে হয় সেটা বুঝি অন্ধকার। অর্বাচীনদের যতই গালি দাও।পশ্চিমা চিকিৎসার সাহায্য নিয়েই দেখো না চোখটা ভালো হয় কি না। প্রাচীন - বাবা! আজকালকার ছেলেমেয়েরা এক কথার পিঠে একশ কথাকে চাপায়। আমাদের যুগে বড়রা বলত। ছোটরা শুনত। তার থেকেই শিক্ষা নিত। এখনকার ছেলেমেয়দের কথা ...

ইফরিত

মোহাম্মদপুরের এক ভীষণ ব্যস্ত সড়কের পাশে আমাদের দুই বেড-ড্রয়িং-ডাইনিং এর ভাড়া বাসা। বাসাটা যখন নেয়া হয় তখন আমি তিন মাসের প্রেগন্যান্ট। এই এলাকায় ভাড়া তুলনামূলক বেশি। কিন্তু সদ্য তোলা বাড়ি আর তমালের অফিসও কাছেই হয় তাই ভাবলাম - এই ভালো। বাসায় উঠে গোছগাছ তখনো সারিনি। এক মাস গেছে কি যায়নি তখন থেকে সমস্যাটার শুরু। তমাল অফিস করে ফিরতে রাত নয়টা দশটা বাজত। খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়তেও সময় নিত না। আমি কোনদিন ওর সাথে শুয়ে পড়তাম, কোনদিন গল্পের বই পড়তাম অথবা ডায়েরি লিখতাম। এক রাতে টেবিল ল্যাম্প জ্বেলে কিছু একটা পড়ছি হঠাৎ দরজায় টোকা দেয়ার মতো আওয়াজ পেলাম। আমার কান খুব খাড়া। আওয়াজটা বাইরের ঘর থেকে এসেছে বুঝতে অসুবিধা হয় না। রাত্রি একটার সময় কে বড় দরজায় টোকা দিবে? পড়ায় মন ফিরিয়েছি মিনিটও হয়নি আবার... নক নক। খুব স্পষ্ট আওয়াজ। ভাবলাম সত্যিই বুঝি কেউ এসেছে। রাত হয়েছে বলে কলিং বেল টিপছে না। উঠে গিয়ে দরজার ফুটোয় চোখ রাখলাম। সারারাত বাহিরের আলো জ্বলত। কাউকে দেখলাম না। ঘরে ফিরে আসার কিছক্ষণের মধ্যেই আবার... নক নক। এবার আর দেখতে গেলাম না। দরকার হয় বেল বাজাবে। শীত করছিল। আলো নিভিয়ে তমালকে জড়িয়ে শুয়ে পড়ল...