সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

একটি খসড়া গল্প : প্রথম পর্ব

কয়তলায় যাবেন?

আমার নাম মেঘলা

...অজান্তেই বাস্তবের মানুষগুলো লেখার ভেতরে ঢুকে পড়ে...


এমন সময় কলিং বেল বাজল। একটানা অনেকক্ষণ। আমার তখন পাগলপ্রায় অবস্থা। চিন্তার মধ্যে হারিয়ে গিয়েছিলাম। একা বাসায় একটা খ্যাপা গল্প নিয়ে কাজ করছিলাম। তখনি কেউ বেল বাজাল। নাহলে হয়তো আমার পাগল হওয়া আর ঠেকান যেত না। টেবিল ছেড়ে গিয়ে দরজা খুলে বাইরে উঁকি দিলাম। একটা মেয়ে। মেয়ে কি মহিলা তা বলা শক্ত। দেখে তো পরিচিত বলেই মনে হলো। কোথায় দেখেছি এই মুহুর্তে মনে করতে পারলাম না। আমার মায়ের কোনো ছাত্রী?

'কয়তলায় যাবেন?' দরজাটা সামান্য একটু ফাঁক করেছি। শরীর দরজার আড়ালে। কেননা আমার পরনে কেবল একটা হাফ প্যান্ট। মেয়েটা একটু ইততস্ত করে বলল, এটা কি বিক্রমাদিত্যর বাসা?

দরজা পুরো না খুলেই উপরে নিচে মাথা নাড়লাম। 

'উনি কি আছেন?'

আমাকে কেন চাইছে মেয়েটা বুঝতে পারলাম না। চেহারটা এখনো মেলাতে পারছিনা। তবে দরজা পুরোপুরি খুলে আত্মপ্রকাশ করলাম। জানালাম আমিই সেই অধম - ভেতরে আসুন, প্লিজ।

'ইয়ে তুমি... আপনি বিক্রমাদিত্য?' মেয়েটা আমার ওপর দৃষ্টি স্থির রেখে ঘরে ঢুকল। আধা ন্যাংটো অবস্থায় আমাকে দেখবে এমনটা হয়তো সে একেবারেই আশা করেনি। যে কারণে স্যান্ডেল পায়েই বাসার ভেতর ঢুকে পড়ল। কী মুশকিল, সারা বাসার মেঝে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে রেখেছি আমি। 

'জুতা খুলব?' 

'ওইখানে-' আমি হাত তুলে দরজার বাইরে জুতা রাখার জায়গাটা দেখালাম। একটু আগে যে চিন্তাটা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ছটফট করছিলাম এখন বরং আফসোস হচ্ছে চিন্তার খেইটা হারিয়ে ফেললাম বলে। জুতা পায়ে অন্যের মেঝে নোংরা করে দেয়া অতিথির চেয়ে অনেক চমৎকার বিষয় নিয়ে ভাবছিলাম আমি - মেটাফিকশন। বাংলা গল্পে কী করে আরো জটিল 'মিরর ইফেক্ট' আনা যায় তাই ভাবছিলাম। ভাবছিলাম কী উপায়ে লেখক তার চরিত্রগুলোর জীবনে ঢুকে পড়ে। শেষমেশ ভাবনাটা এলোমেলো হয়ে গেল। চরিত্রগুলোই হড়বড় করে লেখকের জীবনে ঢুকে পড়তে লাগল। সবকিছু বিশ্রীভাবে তালগোল পাকিয়ে গেল। আনাড়ি লেখকদের বেলাতেই বোধ করি এমন হয়। 

'তুমি... তুমি করেই বলি। তুমি তো অনেক ছোট দেখছি আমার চেয়ে - মেয়েটা কিংবা মহিলাটা বলল, আমাকে চিনেছ?'

মানুষ চিনতে বরাবরই আমার কষ্ট হয়। মাঝে মধ্যে ভান করি যে, খুব চিনেছি। এবারও একটা দেঁতো হাসি হাসলাম। যার একাধিক, এমনকি চার-পাঁচ রকমের অর্থ থাকতে পারে। আজকাল নতুন এক মুসিবত তৈরি হয়েছে। আজেবাজে প্লট নিয়ে রাতদিন ভাবতে ভাবতে প্রায়ই গুলিয়ে ফেলি কোনটা বাস্তব আর কোনটা কল্পনা। অজান্তেই বাস্তবের মানুষগুলো লেখার ভেতরে ঢুকে পড়ে। আবার আশেপাশের লোকগুলোকে মনে হয় একেক গল্পের একেক চরিত্র। মাঝে মাঝে উপভোগও করি। জানি না এটা কি লেখকদের প্রচলিত সমস্যা? নাকি আমি এখনো লেখক হয়ে উঠতে পারিনি বলেই আমার সাথে এসব গোলমেলে ব্যাপার ঘটে।            

'আমার নাম মেঘলা।' 

'বসুন প্লিজ।' ময়লা সোফাগুলোর দিকে হাত বাড়ালাম আমি। মেয়টা বসে। এক সোফা ছেড়ে পরেরটায় গিয়ে বসলাম আমি। গেঞ্জি গায়ে জড়াতে জড়াতে।

'আম্মু কোথায়?'

'কৃষি মার্কেটে।' বললাম আমি। মেয়েটা মা-বাবার কথা জিজ্ঞাসা করতে থাকল। ততক্ষণ সোফার আশেপাশে উঁকি মেরে চশমাটা খুঁজছিলাম আমি।

'মামণি এখনি ফিরবে। আপনি কি পানি খাবেন?' মা না ফেরা পর্যন্ত কিচ্ছু একটা পরিবেশন করা উচিৎ মেয়েটার জন্য। অথচ তাকে পানি ছাড়া কিছুই দেয়ার সামর্থ্য নেই আমার।

'না না ঠিক আছে। আমি আসলে তোমার সাথে দেখা করতেই এসেছিলাম।'

'আমার সাথে? জি আপনার পরিচয়টা তো ঠিক- '

'বললাম তো। আমি মেঘলা। শুভর বোন।'

'ও আচ্ছা আচ্ছা... অ্যাঁ? - আঁতকে উঠি আমি, কার বোন?'

'শুভর বোন। শুভকে তো চেন? শুভ... রবিন... লিমন?'

সোফার এক পাশে চেপে বসলাম আমি। মেয়েটা কি মজা করছে?  যাদের নাম সে এইমাত্র উচ্চারণ করল তারা প্রত্যেকেই আমার উপন্যাসের একেকজন চরিত্র। কোথাও থেকে উপন্যাসটা পড়ে এসে এখন প্র্যাকটিকাল জোক করার চেষ্টা করছে। বইটা পেল কোথায় সে? বলা বাহুল্য আমার বই বাজারে দুর্লভ কেননা বিক্রি নাই বলে প্রকাশক আজকাল ছাপা বন্ধ করে দিয়েছে। যেন তার কৌতুকটা ধরতে পেরেছি এমনভাবে হাসলাম। মেয়েটা হাসির উত্তরে বলল, হ্যা তোমার বই আমি পড়েছি। তোমার ঠিকানা পেলাম প্রকাশকের কাছে। হুবুহু আমার জীবনের কাহিনী লিখেছ তুমি উপন্যাসটায়। একেবারে হুবুহু। আমি জানতে চাই, এটা কীভাবে সম্ভব?

'একেবারে হুবুহু কাহিনী যে লিখিনি তা তো দেখতেই পাচ্ছি - কাষ্ঠ হাসি হেসে বলি, সেই উপন্যাসের মেঘলা মারা গিয়েছিল। কিন্তু আপনি জীবিত আছেন এবং দিব্যি আছেন।'

'কে বলল তোমাকে যে আমি... জীবিত?' মেঘলার (অন্তত তার দাবি অনুযায়ী এটাই নাম তার) মুখের ভঙ্গিটা আমি ঠিক দেখতে পাচ্ছিনা। সে কি হাসছে? নাকি ভ্রূকুটি করছে? কুশনের পেছন থেকে চশমাটা হাতিয়ে নিয়ে চোখে দিলাম। মেয়েটার চেহারা চশমার কাচের মধ্য দিয়ে ফুটে উঠল। সেই মুহুর্তে আমার মনে হলো, এটা কি হেলুসিনেশন? তাই বুঝি ওকে চেনা চেনা লাগছিল? হ্যা, উপন্যাসের মেঘলার চেহারাটা এরকমই কল্পনা করেছিলাম লেখার সময়।

যেও না প্লিজ

খুব অল্প বয়সে পাগল হয়ে যাচ্ছি আমি

...হয় গল্পটায় আবার ঢুকে পড়েছি নয়ত এখনো বেরই হতে পারিনি...


   
নব্বই শতাংশ বা তারও বেশি সম্ভাবনা আছে যে এতক্ষণ যা ঘটল তার সবই আমার কল্পনা। লেখালেখি নিয়ে বেশিমাত্রায় ভাবতে গিয়ে এসব উল্টোপাল্টা দেখতে শুরু করেছি আমি। ভীষণ বিরক্ত হলাম। খানিক আগেও এরকম একটা গোলক ধাঁধার মধ্যে আটকে গিয়েছিলাম। এভাবেই কানামাছি খেলেছি চিন্তাগুলোর সাথে। বারবার এরকম ঘটে চলেছে। একের পর একবার। 
    
'আমাকে মরতে হলো কেন?' মেঘলা জিজ্ঞাসা করল। আমি বুঝলাম না প্রশ্নটাকে আদৌ গুরুত্ব দেয়ার প্রয়োজন আছে কিনা। ওর দিকে তাকালাম না পর্যন্ত। ও যদি স্রেফ একটা ছায়াই হয়ে থাকে তাহলে প্রশ্নই ওঠে না ওর সাথে কথা বলার। প্রশ্নের উত্তর দেয়াটাও নিতান্তই বোকামি হবে। কেননা ওর সাথে কথা বলার মানে নিজের সাথেই কথা বলা। যদিও আমি আবিষ্কার করেছি যে নিজের তৈরি চরিত্রদের সাথে কথপোকথন লেখালেখির জন্য খুবই কার্যকরী। তবে তার ওপর লেখকের নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিৎ। মেঘলা অতীতের একটা চরিত্র। ওকে নিয়ে আমার চিন্তা করার প্রয়োজন তো নাই-ই, চিন্তা করতেও চাই না। আমার চেষ্টা হবে ভবিষ্যতের কাজগুলো নিয়ে। যেখানে ভূতের অনুপ্রবেশ ঘটতে দিব না। 
     
'কী ব্যাপার?'
    
প্রশ্ন শুনে মেঘলার দিকে তাকালাম। এখনো দ্বিধা কাটেনি - ও কি সত্যিই এখানে আছে? একটু থেমে ওর প্রশ্নের জবাব দিলাম, কাউকে মরতেই হতো। আর মেঘলার চরিত্রটাই সবচেয়ে সংবেদনশীল... পাঠকের দিক থেকে। 
   
মেঘলার মুখে কালো ছায়া পড়ল। বুঝতে পারি ও প্রাণপণ চেষ্টা করছে কান্না আটকানর। ওর প্রতিটা মুখভঙ্গি আমার চেনা। প্রতিটা মুখভঙ্গি আমি আগে থেকে দেখেছি। অনুমানে ভুল না হলে, যতদূর সম্ভব আমিই ওর মাঝে 'রুহ' ফুঁকে দিয়েছি। মেঘলা কান্না জড়ান কণ্ঠে বলল, নিজেই জানিনা কীভাবে মারা গেলাম। আত্মহত্যা করেছিলাম? দুর্ঘটনা? নাকি খুন হয়েছিলাম?
   
ও বাস্তবে উপস্থিত থাকুক আর না থাকুক এই মুহূর্তে এখানে বসে বসে ওর বিলাপ আমার সহ্য হচ্ছেনা। 'একটু বসুন আমি আসছি' বলে সোফা ছেড়ে উঠলাম। সন্ধ্যা নেমে আসছে। আলো জ্বালান দরকার। পড়ার ঘরে (যেটা একইসাথে খাওয়া ও ঘুমানর জায়গা) ঢুকে থমকে গেলাম। সন্ধ্যা ছয়টার সময় এত জোছনা! জানালা দিয়ে চাঁদের আলো ঢুকে সারা ঘরে ছড়িয়ে পড়েছে। শৈশব পেরনর পর এত বড় চাঁদ আমি আর দেখছি বলে মনে পড়ে না। কান্নার মতো আওয়াজে খাটের কোণায় চোখ গেল। হয় হেলুসিনেশনের প্রভাবে ওখানে একটা মেয়েকে হাঁটুতে মুখ গুঁজে বসে থাকতে দেখছি নয়ত চাঁদের আলোয় ওরকম একটা আবছায়া তৈরি হয়েছে। দুটোই সম্ভব। 
   
সুইচ টিপে আলো জ্বালানমাত্র সবকিছু উবে গেল। রোখ চেপে গেছিল। ইচ্ছা করে আবার আলো নেভালাম। জোছনায় দেখলাম বুক শেলফের সামনে দাঁড়িয়ে একটা খালি গা, হাফপ্যান্ট পরা ছেলে বই নাড়াচাড়া করছে। ছেলেটা ঘাড় ঘুরিয়ে আমার চোখে চোখ রাখল। এ তো আমি!
   
আবার আলো জ্বালালাম। কেউ নাই। ধপ করে মাটিতে পড়ল একটা বই। ঘামতে শুরু করেছি। একটু আগে যে গল্পটা লিখছিলাম সেখানে ঠিক এমনি একজন লেখক চাঁদের আলোয় নিজের মতো আরেকজনকে দেখতে পায়। সেই লেখক নিজেও একটা গল্প লিখছিল যেখানে লেখক নিজেকে নিজের সামনে দেখতে পায়। 
   
আমি কি আবার গল্পটায় ঢুকে পড়েছি, নাকি এখনো বেরই হতে পারিনি? 

'কী হলো, এখানে দাঁড়িয়ে সুইচ টিপাটিপি করছ কেন?' মেঘলা কখন পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে।

'তুমি কি একটু চুপ করবে!' ধমকে উঠলাম।

'এরকম ব্যবহার করছ কেন?'

'করছি কারণ তুমি... তুমি কিছুই না। একটা ছায়া কেবলমাত্র। এখানে সবই আমার কল্পনা কিংবা স্বপ্নের ঘোর। আমার বাসার পর্দা কখনোই রক্তলাল ছিল না। ছাদ এতটা উঁচু ছিল না (বস্তুত আমি কোনো ছাদ দেখতেই পাচ্ছিনা। দেয়ালগুলো যেন অনন্ত উচ্চতায় গিয়ে পৌঁছেছে)। আমি আসলে আমার চিন্তার ভেতর হারিয়ে গেছি। আরেকবার।'

মেঘলা একটুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকল। তারপর সেই পরিচিত ভঙ্গিতে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বলল, আরেকদিন দেখা হবে। আজ আসি।

ওর চেহারাটা দেখে করুণা হলো। আমার ব্যবহার কি রূঢ় হয়ে গেছে? খুব অল্প বয়সে পাগল হয়ে যাচ্ছি আমি। সবকিছু আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। মেঘলা দরজার দিকে হাত বাড়াতেই বললাম, যেও না প্লিজ।'

মেঘলা ফিরে তাকাল। অভিব্যক্তিতে বোঝা যাচ্ছে সে যথেষ্ট বিরক্ত ও অপমানিত। বললাম, মামণি না আসা পর্যন্ত যাবেন না প্লিজ। আরেকটু থাকুন।

মেঘলা দরজার হাতল ছেড়ে দিয়ে বলল, তোমার সমস্যাটা কী?

একটা শাদা বিড়াল 

হয়ত তোমার সমস্ত কল্পনাই বাস্তবে রূপ নিচ্ছে

...আঠারো বছরের জন্মদিনের আগেই বদ্ধ উন্মাদ হয়ে যাব আমি...

'আপনাকে বলে বোঝাতে পারব না - তবু প্রাণপণে বোঝাতে চেষ্টা করলাম অনেকটা নিজেকে বোঝানর তাগিদ থেকেই, ফিস্ফিসিয়ে বললাম - আমার একটা জগৎ আছে। একেবারে আমার। সেখানকার মহাপরাক্রমশালী রাজা আমি। যা ইচ্ছা করার অসীম ক্ষমতা আমার। বুঝতে পারছেন তো, তাই না? মুশকিল হলো সেই জগতে আটকা পড়ে গেছি আমি। এই যেমন, আমার বুঝতে খুব কষ্ট হচ্ছে যে,আপনি সত্যিই এখানে দাঁড়িয়ে কি না। বিগত কয়েক মাস যাবৎ কেবল ভুল দেখছি আর ভুল শুনছি... আপনি বসুন না। যা বলছিলাম, আপনি পাগল মনে করতে পারেন আমাকে। তাতে কোনো ভুল নাই। আমি জানি আমি ধীরে ধীরে বদ্ধ উন্মাদে পরিণত হচ্ছি।'

মেঘলাকে দেখলাম গুরুত্ব দিয়ে আমার কথা শুনতে। তারপর হঠাৎ ফিক করে হেসে ফেলে মাফ চাওয়ার ভঙ্গি করল। বুঝতে পারলাম না কথাগুলো ও বিশ্বাস করেছে কি না। আমার অনুকরণ করে সে গলা নামিয়ে বলল, এমনও তো হতে পারে আসলে তুমি চিন্তার জগতে হারাওনি। হতে পারে তোমার চিন্তাগুলোই বাস্তবে রূপ নিচ্ছে।

কথাটার মধ্যে কোনো গোপন রসিকতা যদিও থাকে আমি সেটাকে পাত্তা না দিয়ে বললাম, এটা তো অসম্ভব। কিছুই অসম্ভব না। তুমি জানো না? - সৃষ্টি যতটা স্রষ্টার দ্বারা প্রভাবিত হয়, স্রষ্টাও ঠিক ততটাই হয় সৃষ্টির দ্বারা। কখনো কখনো নিয়ন্ত্রিতও হয়।'

কথাগুলো কি মেঘলার মুখ থেকেই শুনলাম? নাকি উত্তরটা আমি নিজে নিজেই বানিয়েছি? অসংলগ্ন কথাবার্তা, খাপছাড়া। সুস্থ মানুষকে পাগল করে তোলার জন্য যথেষ্ট। আমি পাগল হতে চাই না - এত অল্প বয়সে!    

এখান থেকেই দেখতে পাই রান্নাঘরের সামনে রক্তাক্ত একটা লোক পড়ে আছে। ডান পায়ের হাঁটুর নিচের অংশ ৩৬০ ডিগ্রি কোণে ঘুরে গেছে; শরীর থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন অবস্থায়। রক্তে ভেসে যাচ্ছে রান্নাঘর। লোকটার চোখ দুটো প্রাণহীন। অনেক ছোটবেলায় লোকটাকে নিয়ে একটা গল্প লিখেছিলাম মনে পড়ে। সেই গল্পে লোকটা ট্রাকের ধাক্কায় মারা যায়।

'আপনি নিশ্চয়ই ওয়িদিকে কিছুই দেখতে পাচ্ছেন না?' রান্নাঘরের দিকে আঙুল তুললাম। মেঘলা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় সেদিকে, 'ওই রক্তাক্ত লোকটার কথা বলছ? হ্যা, কেন দেখতে পাব না?

'সত্যি! লোকটাকে আপনি দেখতে পাচ্ছেন?'

মেঘলা ঘাড় নেড়ে বলল, অবশ্যই দেখতে পাচ্ছি। 

আমি সরু চোখে মেঘলার চোখের দিকে তাকালাম। সাত তলার ওপরে এরকম একটা দৃশ্য সে কীভাবে ব্যাখ্যা করবে? বুঝতে পারছি গুরুতর জটিলতা তৈরি হয়েছে আমাকে ঘিরে। দেখলাম আমার ঘর থেকে একটা বিড়াল বেরিয়ে এসে মেঘলার পায়ে মাথা ঘষতে লাগল। এটা কোথা থেকে এলো? আমার বাসার বিড়ালটা তো ছাই রঙা। শাদা তো নয়! নাকি এটাই আমার বিড়াল?

'একে মনে নাই? - নিচু হয়ে বিড়ালটাকে কোলে তুলে নেয় মেঘলা, পাকিশায় একে দেখেছিলে মনে আছে?'

বিড়ালটাকে নিয়ে একটা গল্প লিখেছিলাম বটে তবে বাস্তবে এরকম কোনো বিড়ালের অস্তিত্ব নাই। শাদা রঙের বিড়ালটা ছিল আমার কল্পনা। মেঘলার কথাগুলো কানে বাজল... 'হয়তো তোমার সকল কল্পনাই বাস্তবে রূপ নিচ্ছে'...। কিন্তু সেটা তো কোনদিনও সম্ভব নয়। একেবারে যুক্তিহীন, দুনিয়া ছাড়া ব্যাপার। 

সামনে একটা শাদা বিড়াল। রান্নাঘরে বইয়ের পাতা থেকে বেরিয়ে আসা একজন দুর্ঘটনাহত মানুষ। বারান্দায় দাঁড়িয়ে রূপকথার একজন দুখী রাজকুমার। আর এদের মধ্যে মেঘলাকেও ফেলতে হচ্ছে। ও কোনভাবেই রক্ত-মাংসের মানুষ হতে পারেনা। ও স্বপ্ন। ও কল্পনা। এক ঘণ্টা আগেই ও নিজমুখে বলেছে, 'কে বলল তোমাকে যে আমি জীবিত?' অর্থাৎ কিনা মেঘলাও একটা ধোঁয়া। আমার উর্বর মস্তিষ্ক প্রসূত। মা এখনো ফিরলেন না কেন? 

এইটুকু সময়ের জন্যও এসেবের হাত থেকে কোনো নিস্তার নাই। গল্পের বইয়ের দিকে মনোযোগ দেয়া যেত হয়ত। কিন্তু আমি দেখেছি গল্পের বই বিষয়গুলোকে আরো বাড়িয়েই তোলে। আমার দুর্বল খুলির ভেতরকার দেয়ালগুলোতে বোর্হেসের শক্তিশালী (বাংলায় অনূদিত আর একটু ঝিম ধরান) চিন্তাগুলো এদিক-ওদিক টক্কর খেতে খেতে আমাকে পাগলামির চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে চলে। প্রথম প্রথম একটা ঘোর লাগান পরিবেশ তৈরি হত যেটাতে আমি খুব মজা পেতাম। ধীরে ধীরে আমাকে একরকম নেশায় পেয়ে বসল।নিজে নিজে চেষ্টা করলাম ইন্দ্রজাল সৃষ্টির। জালের মধ্যে পুরোপুরি নিজেকে জড়িয়ে নিয়ে লিখতে চেষ্টা করলাম। একসময় শিখে গেলাম স্বশরীর থেকে পুরো বিচ্ছিন্ন হয়ে অন্য জগতে পা দেওয়া। সুফিরা যেভাবে ভাবের মধ্যে চলে যায়। কিন্তু আমার অবস্থান ছিল আমার সৃষ্ট জগতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। 

দুর্ভাগ্যজনক এই যে, আমার মাথায় যা খেলত তার কিছুই আমার কলমে আসত না। ফলে বিরামহীনভাবে লিখে চলা আমার গল্পগুলো হয়ে উঠল একেকটা নিখাদ আবর্জনা। বুঝিনি আমার কলম ধরার যোগ্যতাই হয়নি। আমি যে এখনো কাঁচা। আজ চেতনার উপর সামান্যতম নিয়ন্ত্রণও হারিয়ে ফেলেছি। এসব ছেলেখেলা তো নয়। মাথাতেই ঢোকে না কখন কোন জগতে থাকি। কখনো মনে হয় একসাথে দুই জায়গায় আছি।

গল্পের বই না পড়লেও বন্ধুদের সাথে ফোনে আড্ডা দিয়ে সময়টা দিব্যি কাটান যেত। একা বাসায় এরকম অসহায় পরিস্থিতি অন্তত এড়াতে পারতাম। কিন্তু ওরাও বিরক্ত আমার উপর। আমার অসংলগ্ন আচরণ আর অমার্জিত সততার উপর। 'সুস্থ' জীবনযাপনের প্রতি বৈরী মনোভাবের কারণে। ওরা আমাকে ভালবাসছে তবু পছন্দ করছে না। এই শহরেই আমার শ'য়ের ওপর আত্মীয় অথচ কারো সাথে আত্মীয়তা নাই। মা আর বোন যতক্ষণ থাকে নিজেকে নিরাপদ মনে হয়। অথচ একাকী নানান ভয় এসে ঘিরে ধরে। ভয় হয়, আঠারোতম জন্মদিনের আগেই বদ্ধ উন্মাদ হয়ে যাব আমি। নয়ত আত্মীয়-বান্ধব বিবর্জিত একজন নেশাখোর। কিংবা তার চেয়েও খারাপ...





                                                                                                                       

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

48 LAWS OF POWER by Robert Greene and Joost Elffers

Vladimir Putin The definition of power in 21st century

হারবার্ট স্পেনসারের 'জৈবিক সাদৃশ্যবাদ'

ইংরেজ সমাজতত্ত্ববিদ ও জীববিজ্ঞানী হারবার্ট স্পেনসারকে বলা হয় সমাজবিজ্ঞানের দ্বিতীয় জনক। তিনি 'সামাজিক ডারউইনবাদ'-এর একজন প্রচারক। স্পেনসারের বিখ্যাত 'জৈবিক সাদৃশ্যবাদ' সমাজ ও জীবকে বিশেষ সাদৃশ্যপূর্ণ বলে দাবি করে। হারবার্ট স্পেনসার (১৮২০-১৯০৩) ১। সমাজ ও জীব উভয়েই আকারে বৃদ্ধি পায়। মানবশিশু প্রাপ্তবয়স্ক হয়। মহল্লা থেকে মেট্রোপলিটন হয়, ক্ষুদ্র রাষ্ট্র থেকে সাম্রাজ্য তৈরি হয়।   ২। প্রত্যেকে আকারে যত বড় হয় উভয়ের কাঠামো জটিলতর হতে থাকে। ৩। দুই ক্ষেত্রেই, কাঠামোগত পার্থক্যের কারণে কার্যকারিতায় অনুরূপ পার্থক্য দেখা দেয়। ৪। জীবদেহ ও সমাজ উভয়েই ক্ষুদ্রতর একক দ্বারা গঠিত। জীবের যেমন কোষ রয়েছে তেমন সমাজের রয়েছে ব্যক্তি। একাধিক কোষ মিলে যেভাবে বৃহত্তর অঙ্গ গঠন করে, একইভাবে একাধিক ব্যক্তি মিলে সমাজের বিভিন্ন অংশ গঠন করে। ৫। সমাজ ও জীব উভয়ই মূলত তিন ধরনের তন্ত্র বা ব্যবস্থার ওপর টিকে থাকে। এরা হলো - বিপাক তন্ত্র (sustaining system), সংবহন তন্ত্র (distributor or circulatory system), স্নায়ু তন্ত্র (regulatory system). জীবের জন্য খাদ্য হলো এর চালিকা শক্তি, সমাজের ক্ষেত্রে যা হলো কৃ...

আমার লেখা বই

আমার সর্বশেষ বই বাংলায় শিখি ফরাসি ভাষা শাখা: ভাষাশিক্ষা প্রকাশকাল: ২০২৪ প্রচ্ছদ:  বইটি পড়ুন আমার পঞ্চম বই চিত্রনাট্যচিত্রণ: কাহিনি ও চিত্রনাট্য লেখার কলাকৌশল শাখা: চিত্রনাট্য প্রকাশকাল: ২০২৪ প্রচ্ছদ: পার্থপ্রতিম দাস বইটি পড়ুন আমার সর্বশেষ উপন্যাস অধিনায়ক শাখা: উপন্যাস প্রকাশকাল: ২০২০ প্রচ্ছদ: রাজীব দত্ত বইটি পড়ুন আমার প্রথম উপন্যাস রঙবাহার শাখা: উপন্যাস প্রকাশকাল: ২০১৫ প্রচ্ছদ: তৌহিন হাসান বইটি পড়ুন আমার দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ অপরূপকথা শাখা: গল্প সঙ্কলন প্রকাশকাল: ২০১৩ প্রচ্ছদ: তৌহিন হাসান বইটি পড়ুন আমার প্রথম গল্পগ্রন্থ ভূতলোজি কিংবা চিত্তশুদ্ধি শাখা: গল্প সঙ্কলন প্রকাশকাল: ২০১২ প্রচ্ছদ: বিক্রমাদিত্য বইটি সম্পর্কে জানুন My books on Goodreads রঙবাহার (avg rating 5.00) অপরূপকথা (avg rating 5.00) অধিনায়ক ভূতলোজি কিংবা চিত্তশুদ্ধি বাংলায় শিখি ফরাসি ভাষা

48 Laws of Power in Bangla Free PDF Download

বিনামূল্যে ই-বুক পিডিএফ ডাউনলোড করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন সরাসরি পড়তে এখানে ক্লিক করুন বিক্রমাদিত্য's books on Goodreads রঙবাহার reviews: 1 ratings: 2 (avg rating 5.00) অপরূপকথা ratings: 1 (avg rating 5.00) অধিনায়ক ভূতলোজি কিংবা চিত্তশুদ্ধি বাংলায় শিখি ফরাসি ভাষা Goodreads reviews for রঙবাহার Reviews from Goodreads.com রাজাদের রাজ্যে রাষ্ট্ররা by রিফু My rating: 5 of 5 stars ডেস্কে বই জমছেই, ছোটগল্পের বই বাদে, পাই না, লেখে না কেউ—জানি কী লেখে—গাছ মারে শুধু শুধু। রিফুর বই আব্বা অল স্টার রেকমেন্ডেশনসহ দিয়ে গেল। গল্প-কবিতা-ক্যাপশনে ‘রাষ্ট্র’ ‘রাষ্ট্র’ ‘রাষ্ট্র’ লিখতে লিখতে ছাবাছাবা করে ফেলেছে সবাই, তারপরও, এই নামকরণটায় বাড়তি মাথা খাটানোর ইঙ্গিত আছে। এক ঘণ্টায় বইয়ের অর্ধেক পড়েছি, চোখের আন...

TFP 415 WORLD CINEMA : Class Notes

Aug 14, 2023 LECTURE 2 Expressionism Reality is distorted Artist’s personal feeling From Northern Europe How did it begin? Effects of WWI  Foreign film banned Horror, insecurity, and paranoia From German romanticism  ENLIGHTENMENT ROMANTICISM Reason Emotion Progress Common good Individuality Unique potential Science and technology Rational, ordered society Nature and imagination Spontaneous, passionate life Social conventions and institutions  Resistance to social conventions and institutions First appeared in poetry and theater “The world is a laboratory” by Gottfried Benn Characteristics of german expressionist theater Distorted and exaggerated sets, props, and costumes Unease and anxiety Symbolism- character might be represented by an animal or object or a particular color Non-linear plot Confusion and disorientation Fragmented nature of the human experience The threepenny opera (1928) by bertolt brecht Characteristics of german expressionism The subjective view of the...

স্বর্গচূড়া

অবশেষে, একদিন, এতবছরের অপেক্ষার পর ট্রেনটা পেলাম আমি। সঙ্গের পোটলা-পুটলিগুলো প্রথমে কামরার ভেতর ছুঁড়ে দিলাম। তারপর নিজের নাম মুখে নিয়ে ঝাঁপিয়ে উঠলাম ট্রেনে। গাড়িটা এক মুহূর্ত থামে না প্লাটফর্মে। জোর গতিতে ছুটে চলে। কারো জন্য অপেক্ষা করতে নারাজ। একজনের জীবনে একবার বই দু’বার কখনো আসে না। পাল্লা দিয়ে ছুটে তাকে ধরতে হয়। নইলে নাই। অন্য গাড়ি ধরতে হবে। কিন্তু সে গাড়ি যাবে আরেক গন্তব্যে। ট্রেনের দরজা দিয়ে বাইরে উঁকি দিলাম। প্লাটফর্মে সাথীকে দেখতে পাই। হাত নেড়ে বিদায় জানাচ্ছে অথচ ঠোঁটে হাসি নাই। শুনতে পেলাম মনে মনে কেবল বলছে, তোমার যাত্রা শুভ হোক। (২) প্রথম কবে সাথীর দেখা পেয়েছিলাম ভালো মনে পড়ে না। মনে পড়ে, মন খারাপ করে প্লাটফর্মে বসে ছিলাম। সাথীকে পেয়ে মন ভালো হয়ে গিয়েছিল। কেন, তা মনে নাই। এরপর কত দিন, কত রাত পাশাপাশি বসে কেটে গেল। আমি আর সাথী। স্টেশন জুড়ে এত এত মুখ। কাউকে মনে ধরে নি। সাথী বাদে। সাথীর স্বজনরা একই স্টেশনে ছিল। তবু ও ছিল একা। কী জানি কেন, কখনো জিগ্যেস করা হয় নি। কিন্তু সাথী অনেক প্রশ্ন করত আমাকে। খুব অবাক হতো যে অন্যদের মতো আমার শরীরে কেন বাঁধন নাই। আমার মা-বাবার কথা জিগ...

THE ART OF SEDUCTION by Robert Greene

রবার্ট গ্রিন এখানে ‘সিডাকশন’ কথাটাকে ব্যবহার করেছেন শুধুমাত্র যৌন প্রলোভন হিসেবে নয়, বরং আরো ব্যাপক অর্থে—রাজনৈতিক, সামাজিক বা অন্যান্য ক্ষেত্রে যেই প্রলোভন প্রযোজ্য। এই প্রলোভনের নীতিগুলো জানলে নিজেকে ও নিজের সম্পর্কগুলোকে আরেকটু ভালোভাবে ঝালাই করা যাবে। সেইসাথে তাদের প্রয়োগ করা যাবে ব্যক্তিগত ও পেশাদার জীবনে।    সারকথা প্রলোভন ব্যাপারটাই মনস্তত্ত্বের খেলা, সৌন্দর্যের না। ফলে এই খেলার একজন ওস্তাদ হয়ে ওঠা যেকোন মানুষেরই আয়ত্ত্বে আছে। এমন নয় যে, একজন প্রলোভনকারী তার ক্ষমতাটাকে একবার চালু আর একবার বন্ধ করেন—প্রতিটা সামাজিক ও ব্যক্তিগত লেনদেনই তার কাছে প্রলোভনের একেকটা সুযোগ। সুযোগের একটা মুহূর্তও নষ্ট করার নাই। প্রলোভনকারীরা কখনো আত্মনিমগ্ন থাকে না। তাদের দৃষ্টি থাকে বাইরের দিকে, ভিতরের দিকে নয়।  প্লেজার বা পুলক হলো আমাদেরকে আমাদের সীমার বাইরে টেনে নিয়ে যাওয়ার অনুভূতি, উদ্বেলিত করে দেওয়ার অনুভূতি—তা হতে পারে মানুষের দ্বারা, বা কোনো ঘটনার দ্বারা।  শেষত, যারা কিনা প্রলোভনকারী, তাদের দুনিয়াদারির সাথে নৈতিকতা ব্যাপারটার সম্পর্ক একদম নাই। প্রতিটা প্রলোভনের দুইটা উপাদান থাকে...

মিডিয়া সাক্ষরতা : আদিপর্ব

মিডিয়া সাক্ষরতা ও এ সংক্রান্ত যাবতীয় জিজ্ঞাসা - মিডিয়া নিজে যতটা প্রাচীন তার চেয়ে কম পুরনো নয়। বর্তমানে তথ্য ও তথ্যপ্রযুক্তির সহজলভ্যতা মিডিয়া সাক্ষরতাকে অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে বেশি প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে সত্য। কিন্তু মিডিয়ার প্রভাব ও মিডিয়া সাক্ষরতার গুরুত্ব নিয়ে নানা প্রশ্ন অনেক অনেক আগে থেকেই আলোচিত হয়ে এসেছে। এটাও লক্ষণীয় যে মিডিয়ার পক্ষে-বিপক্ষে বিভিন্ন বিতর্ক একইসাথে নবাগত প্রযুক্তি, শিল্প (আর্ট ও ইন্ডাস্ট্রি উভয় অর্থে), এমনকি সংস্কৃতির গতিপথকে সময় সময় প্রভাবিত করে এসেছে। তবে ১৯৬০ এর দশক পর্যন্ত পরিভাষা বা গবেষণাক্ষেত্র হিসাবে এর অস্তিত্ব ছিল না। যতদিন না বিষয়টি যোগাযোগ স্কলার ও মিডিয়া প্রফেশনালদের কাজের ক্ষেত্র হয়ে ওঠে তার আগ পর্যন্ত (কিংবা এখনো কিছুসময়) যোগাযোগ সংশ্লিষ্ট ভাবনাসমূহ পরিচালিত হয়/হয়েছে তাত্ত্বিক, দার্শনিক, সমাজবিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী ও ভাষাতত্ত্ববিদদের দ্বারা। এ যাবৎ মিডিয়া সাক্ষরতা নিয়ে যত তত্ত্বীয় চিন্তা হয়েছে তাতে --- প্লেটো থেকে ফ্রয়েড, সসার (১) থেকে সিক্সাস (২) --- প্রত্যেকেরই রয়েছে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। উৎপত্তি ও সংজ্ঞা এই তথ্য মোটেও অভিন...

বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি : প্রাচীন অর্বাচীন তর্ক

এই লেখাটা ২০১৪ সালে প্রকাশিত হয় যোসেফাইট কালচারাল ফোরামের বার্ষিক ক্রোড়পত্র ত্রিলয়-এ। আমি তখন সেন্ট যোসেফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণির ছাত্র প্রাচীন -  ওই অর্বাচীনদের আমি শতবার সতর্ক করেছি, আর যা-ই করো, আত্মপরিচয় কখনো হারাবে না। স্পষ্টই দেখতে পাচ্ছি এদের সামনে যেন ঘোর অন্ধকার। নিজেদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি সবকিছু ভুলে গিয়ে এরা আজ পাশ্চাত্যের অনুকরণে ব্যস্ত। নিজের চশমার 'স্টাইল'টা যতই বাজে হোক না কেন ওটা পরেই তুমি স্বচ্ছ দেখবে। তা না করে যদি অন্যের চশমা চোখে দাও, তোমাকে মানাবে হয়তো ভালো কিন্তু হোঁচট খেতে হবে পদে পদে। অর্বাচীন - তোমার কথায় কেমন যেন ছাপাখানার গন্ধ। তোমার বয়স হয়েছে। তাই চোখে সমস্যা। চোখের পাতা বন্ধ করে তুমি অতীতটাকে সোনালি রঙের মনে করো। আর চোখ মেলে ভবিষ্যৎ দেখতে গেলেই তোমার মনে হয় সেটা বুঝি অন্ধকার। অর্বাচীনদের যতই গালি দাও।পশ্চিমা চিকিৎসার সাহায্য নিয়েই দেখো না চোখটা ভালো হয় কি না। প্রাচীন - বাবা! আজকালকার ছেলেমেয়েরা এক কথার পিঠে একশ কথাকে চাপায়। আমাদের যুগে বড়রা বলত। ছোটরা শুনত। তার থেকেই শিক্ষা নিত। এখনকার ছেলেমেয়দের কথা ...

ইফরিত

মোহাম্মদপুরের এক ভীষণ ব্যস্ত সড়কের পাশে আমাদের দুই বেড-ড্রয়িং-ডাইনিং এর ভাড়া বাসা। বাসাটা যখন নেয়া হয় তখন আমি তিন মাসের প্রেগন্যান্ট। এই এলাকায় ভাড়া তুলনামূলক বেশি। কিন্তু সদ্য তোলা বাড়ি আর তমালের অফিসও কাছেই হয় তাই ভাবলাম - এই ভালো। বাসায় উঠে গোছগাছ তখনো সারিনি। এক মাস গেছে কি যায়নি তখন থেকে সমস্যাটার শুরু। তমাল অফিস করে ফিরতে রাত নয়টা দশটা বাজত। খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়তেও সময় নিত না। আমি কোনদিন ওর সাথে শুয়ে পড়তাম, কোনদিন গল্পের বই পড়তাম অথবা ডায়েরি লিখতাম। এক রাতে টেবিল ল্যাম্প জ্বেলে কিছু একটা পড়ছি হঠাৎ দরজায় টোকা দেয়ার মতো আওয়াজ পেলাম। আমার কান খুব খাড়া। আওয়াজটা বাইরের ঘর থেকে এসেছে বুঝতে অসুবিধা হয় না। রাত্রি একটার সময় কে বড় দরজায় টোকা দিবে? পড়ায় মন ফিরিয়েছি মিনিটও হয়নি আবার... নক নক। খুব স্পষ্ট আওয়াজ। ভাবলাম সত্যিই বুঝি কেউ এসেছে। রাত হয়েছে বলে কলিং বেল টিপছে না। উঠে গিয়ে দরজার ফুটোয় চোখ রাখলাম। সারারাত বাহিরের আলো জ্বলত। কাউকে দেখলাম না। ঘরে ফিরে আসার কিছক্ষণের মধ্যেই আবার... নক নক। এবার আর দেখতে গেলাম না। দরকার হয় বেল বাজাবে। শীত করছিল। আলো নিভিয়ে তমালকে জড়িয়ে শুয়ে পড়ল...