সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

ধলু, এক অসহায় ছাগল

কসাই 'আল্লাহু আকবর' বলে চেঁচিয়ে উঠতেই শেষ চেষ্টা করল ধলু। তার চেষ্টা সফলও হলো, ছুটে বেরিয়ে এল দড়ি ছিঁড়ে। তারপর সোজা বেড়ার বাইরে। বেরিয়ে এসেও স্বস্তি নেই। বাড়ির কর্তা সহ আরও চাকর-বাকর, কসাই সবাই ছুটে এল। ধলু প্রাণপণে দৌড়াচ্ছে। এ পাড়ার মানুষেরা বড় সাংঘাতিক। ফি-বছরই এ সময় তারা খুব আনন্দ করে পশুপাখির গলা কাটে। কী মজা পায় কে জানে! তেমনই এ পাড়ার এক লোকের পাল্লায় পড়েছে সে। এর আগে সে যে বাড়িতে থাকত তারা খুবই ভালো ছিল। রোজ পেট ভরে খাবার খাওয়াতে পারত না তাও সে চিৎকার করত না। খুব ক্ষিদে পেলে নিঃশব্দে কাঁদত। সেই বাড়িতেই তার জন্ম হয়। তার মা ছিল কালো। তার ভাইবোনেরাও মিশমিশে কালো। দু'জন আবার সাদাকালোও ছিল। কেবল সেই ছিল ধবধবে সাদা। মালিকের ছোট্ট ছেলে মানিক আদর করে নাম রেখেছিল ধলু। বাকিদের কারো নাম তার মনে নেই। তবে এক ভাইয়ের নাম ছিল বোধ হয় কালু। মানিক তাকে যেমন খুব ভালোবাসত তেমনি সেও। তার মালিক মিজান সাহেবও তাকে খুব ভালোবাসত। কিন্তু এই মানুষটি টাকার জন্য কেমন নিষ্ঠুর হয়ে গেলেন। অভাবে পড়ে তাকে বিক্রি করে দিলেন হাটে। তার খুব মন খারাপ হয়েছিল। সবচেয়ে বেশি কষ্ট লাগল মানিকের কান্না দেখে। হাট থেকে...

---

…Mais oui, je t'aime, lui dit la fleur. Tu n'en as rien su, par ma faute… হ্যাঁ, রত্না ঠিকই সন্দেহ করেছে যে আমি পরকীয়া করছি।  ও চিরকাল সন্দেহপ্রবণ ছিলই। তবে এই প্রবণতায় প্রথম দিকের সেই মাধুর্য নাই, যখন ওর সন্দেহের পেছনে ওর রক্ষণাত্মক প্রেমকে দেখতে পেতাম। আজকে দেখি কেবলই চাপা বিদ্বেষ। রত্না, তুমি আমাকে হারিয়েছ। কিন্তু আমার থেকে হারিয়েছ আরো আগে। এক সময় আটপৌরে জীবন থেকে রেহাই পেতে যে মানুষটাকে আঁকড়ে ধরেছিলাম, একদিন আবার সেই মানুষটাকে এড়ানর জন্য ওই একই জীবনের কাছে মরিয়া হয়ে ফিরতে চেয়েছি। রূঢ় জীবনকে সহনীয় করত যে কণ্ঠস্বর, আজকে সেই কণ্ঠস্বর থেকে পালাতে জীবনের চাপের মধ্যে মুখ ডুবিয়ে শান্তি খুঁজি। অফিস, টাউন-হল-বাজার আর শুক্রবারের আসরে অতিরিক্ত সময় দেই শুধুমাত্র যেন রত্নার মুখোমুখি কম হতে হয়। ও হয়তো আমাকে আরো বেশি চায়। সে কথা বলতে পারেনি বলেই হয়তো দিন দিন আগ্রাসী হয়ে উঠেছে। তারপর ধীরে ধীরে নিজেই ভুলে গেছে কী চায়। আমার টক শো দেখা নিয়ে ও বিরক্ত। অথচ আমি জোর করে টক শো’র ঘ্যানঘ্যানানি শুনি যাতে ও ততক্ষণে ঘুমিয়ে পড়ে। বোঝে না ও? আমাকে দখল করতে গিয়ে আমাকে ক-ত দূরে ঠেলে দিয়েছ দেখো রত্না।  রত্...

প্রবর্তনা

এই ভূমিতে একদিন দণ্ডকারণ্য ছিল। আমি তাকে পাই পতিত অবস্থায়। দাবানল না কী একটা লাগিয়ে ভূমির রক্ষক সটকে পড়েছিল। নামেই রক্ষক। শুনেছি সে ব্যাটা ঘোর অনাচারী। প্রকৃতির স্রেফ পূজা করলেই হয় না, তাকে রক্ষাও করতে হয় - এমনটা সে বিশ্বাস করত না। অরণ্যের আবার যত্ন কীসের। আমার নিজের ভেতর সংস্কারের খুব অভাব থাকলেও, কীভাবে আর কী ভেবে যেন এই এক টুকরো বসুন্ধরার সংস্কারে নেমে পড়েছিলাম। প্রথমে কিছুটা মায়ায় পড়ে, কিছুটা কি কর্তব্যের খাতিরে। তারপর নিজের ভালো লাগা থেকে। এত অল্প তাও আবার এমন স্বার্থপর খাটুনিতেই বসুমতি তার মালিকানা সঁপে দিবে আমার তো জানা ছিল না। সবাইকে দেয়ও না বোধ হয়। সে জঙ্গল দিনে দিনে সাফ করেছি। মাটির আজ্ঞা বয়েই মাটি থেকে অবাঞ্ছিত সব উপড়েছি একে একে। তার ব্যাথা হয়েছে কিনা বলতে পারিনা। লজ্জাজনক হলেও সত্যি যে, তার সব কান্নাকে আমি জানি না। জেনেছি বনটা কেমন প্রকাণ্ড আর ঘন ছিল। শ্বাপদও ছিল, সাপও ছিল। ছবিতে কিন্তু আমার সুন্দরই লেগেছে সেসব। বনদেবী নিজে অবশ্য এককালের বনটাকে শাপশাপান্ত করেই চলে। অনবরত। আচ্ছা... কেন? আমি তো শুনতে চাই না। কাকে শোনায় তবে? সুন্দরের কথা সে কদাচিৎ বলে। সে বলে লকলকে লালসার কথা,...

উড়ো চর্চা ২

দেবী প্রাচীরের ওপর দাঁড়িয়ে একে একে দু'টো স্যান্ডেল খসিয়ে ফেললেন পা থেকে। আমার বুক ঢিপঢিপ করছিল, উনি টাল সামলাতে না পেরে পড়ে-টড়ে যান কিনা। কোন জন্মের উচ্চতা ভীতি আমার মন থেকে দূর হলো না এখনো। কফির মগটা সাবধানে নামিয়ে কাতর গলায় অনুরোধ করলাম, 'নেমে আসুন দেবী। আমি যে ভয় পাই।' 'আরে বোকাচন্দ্র ভয়ের কিচ্ছু নাই। এদিকে এসো। কাছে এসো।' 'কেন?' আমার পা কিন্তু সরে না। অলকানন্দার স্থবির টব থেকে শুরু করে বাতাসের গতিমুখ - সবটাই আমাকে শঙ্কিত করছিল। 'আমাকে একটা ঠেলা দাও আলতো করে।'  'কী বলছেন!' সত্য যে, আমার আঁতকে ওঠায় যতখানি ভয় ছিল ততখানি চমক ছিল না।  'পড়ব না। ভয় নাই। আসো তো আসো। দেখোই না, আমি ভাসব। তারপর উড়ে যাব।' 'না না আমি পারব না।' দেবী কিছু একটা বলতে গিয়ে অন্যদিকে মুখ সরিয়ে নিলেন। ঈষৎ কালো ছায়া যেন নেমে এল ভিট্রুভিয়াসের বিদ্রূপকারী ওই মুখে। আমি একটা প্রয়োজনীয় ধাক্কা খেলাম। হঠাৎ নিজের ওপর খুব লজ্জা হলো আমার। আমি দেবীকে অবিশ্বাস করছি। দেবীর কথায় সন্দেহ প্রকাশ করছি। আর কত - ছি!! নিজেকে ধিক্কার দিয়ে আমি তার কাছে এগিয়ে গেলাম, 'সত্যিই আপনার ...

মন

শুক আমাকে হুঁশিয়ার করেই চলেছে সুবিনয়ের ব্যাপারে। আমি ধৈর্য হারিয়ে ওকে বকা দিলাম। কেন রে বাপু, এতবার বলতে হচ্ছে কেন? আমি নিজে তো চোখের ওপর দেখতে পাচ্ছি এই সুবিনয় আমার আরাধ্য নয়। আরাধ্যের ধারেকাছে কেউ নয়, কিছু নয় সে। না আমি মন্দ বলছি না ছেলেটাকে। সবই ঠিক আছে। সব ঠিকই আছে। তবুও ঠিক আমার সাথে যাচ্ছে না। সবকিছুর পরও আমার আরাধ্য তো সে নয়। তাই না?  এক যুগ হলো আরাধ্যকে দেখি আমি প্রায় রাতে। ঘুমানর আগে আরশি আমায় দেখাত। তারপর এখন ঘুমিয়ে দেখি স্বপ্নে। দু’জনেরই অভ্যাস হয়ে গেছিল এভাবে দেখা করার। অনেকদিন বাদে আরশিকে আবার দেখাতে বলেছি, সুবিনয় আর আরাধ্যকে পাশাপাশি মেলানর জন্য। আরশি আমাকে আরেকবার আশ্বস্ত করেছে, দুইটা মানুষ কোনো দিক থেকেই এক নয়। তার পরপরই স্বপ্নে একবার ডেকেছি সুবিনয়কে। আরাধ্য রাগ করবে না জানতাম। আরাধ্য সেরকম মানুষ নয়। তাছাড়া একটা রাতের জন্যই তো। সুবিনয় অবশ্য ঘাবড়ে গিয়েছিল। স্বপ্নে যাতায়াতের অভিজ্ঞতা ছিল না বোধ হয়। আমি দু’জনকেই খুব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলাম। নাহ, আমার আরাধ্য সব দিক থেকেই অন্যরকম। চলন বলন সব আলাদা।  অন্যান্য দিন আরাধ্য টাংস্টেনের জাদু আলোতে আরামকেদারায় বসে আলোচ...

জোকার: উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন?

চলচ্চিত্র: জোকার।।  পরিচালনা: টড ফিলিপস ।। প্রযোজক-পরিবেশক: ডিসি ফিল্মস, ওয়ার্নার ব্রাদার্স।। অভিনয়: হোয়াকিন ফিনিক্স।।  মুক্তি: অক্টোবর ৪, ২০১৯।। দৈর্ঘ্য: ১২২ মিনিট।। ভাষা: ইংরেজি।।  “বুর্জোয়া সমাজ এখন আড়াআড়ি রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে, হয় তার উত্তরণ হতে হবে সমাজতন্ত্রে অথবা ফিরতে হবে বর্বরতায়।” রোসা লুক্সেমবার্গ, ১৯১৬ উদারপন্থীরা সমালোচকরা অনেকেই ‘জোকার’কে দেখেছেন সমাজে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে এমন এক চলচ্চিত্র হিসাবে। এও বলা হয়েছে যে, এই ছবির সাথে স্তালিনীয় প্রোপাগান্ডার কোনো পার্থক্য নাই। সুপারহিরোর প্রেক্ষাপট আশ্রয় করে মূলত বিশ্বকে এক গুরুগম্ভীর বার্তা দিতে চেয়েছেন এর নির্মাতারা। আবার কারো মতে, ‘জোকার’ আদতে সমাজকে কোনো দিকনির্দেশনা দেয় না, স্রেফ সমাজের প্রতিচ্ছবি ধারণ করে।  কাহিনী সংক্ষেপ কমিক ও জনপ্রিয় সংস্কৃতির বিখ্যাত-কুখ্যাত খল চরিত্র ‘জোকার’। সেই চরিত্রের উত্থানের পেছনে এক নতুন আখ্যান আমরা পাই, টড ফিলিপ নির্মিত একই নামের চলচ্চিত্রটিতে। ছবিতে আর্থার ফ্লেক (হোয়াকিন ফিনিক্স) একজন নিম্নবিত্ত শ্রেণীর ব্যক্তি যিনি মানসিকভাবে অসুস্থ...

সিদ্ধার্থর দেওয়া আইডিয়া থেকে লেখা গল্প

রোহিতের বই পড়ার অভ্যাস ছিল না কোনকালে। তন্মনা ছিল ভীষণ পড়ুয়া। পাড়ার লাইব্রেরিটা রোহিতের কখনো দেখা হয়নি। তন্মনা ঘরের বাইরে বের হলে লাইব্রেরিতেই কাটাত বেশিরভাগ সময়। অথচ রোহিতের লাইব্রেরিতে ঢোকার প্রশ্নই উঠত না যদিনা সেদিন হঠাৎ সে তন্মনার পিছু নিত। তন্মনা লাইব্রেরিতে ঢুকেই ব্যাগ জমা রেখে চলে গিয়েছিল বইয়ের তাকের কাছে। রোহিত তড়িঘড়ি করে বাইরে সিগারেটটা ফেলে তন্মনাকে অনুরসরণ করে ভেতরে গিয়েছিল। এত সুন্দর একটা মেয়েকে সে আরো আগে কেন খেয়াল করল না তাই ভেবে নিজেকে খুব তিরস্কার করেছিল। ভেতরে পা রেখে তন্মনা প্রথমেই বেশ খানিকক্ষণ সময় নিয়ে পছন্দসই বই খুঁজেছিল। তাক থেকে নামিয়ে এক-দুইটা নেড়েচেড়েও দেখছিল। এদিকে রোহিতও মুখোমুখি আরেকটা আলমারির কাছে গিয়ে বই-টই নামিয়ে দেখার ভান করছিল। তারপর যখন তন্মনা তার মনঃপুত একটা বই নিয়ে টেবিলের কাছে গেল, তখন রোহিতকেও বাধ্য হয়ে হাতের কাছের কিছু একটা নিয়ে যেতে হলো সেখানে। কাছাকাছি একটা চেয়ার টেনে সেও বসেছিল। মেয়েটাকে একটানা দেখে গিয়েছিল সে প্রথমদিনই। আর মাথার ওপর ঘড়ির কাঁটাটা কেউ যেন ফাস্ট ফরোয়ার্ড করে দিয়েছিল। তন্মনা উঠেছিল তার বইখানা পুরো শেষ করে। তখন দুপুর গড়িয়ে বি...