তন্মনা লাইব্রেরিতে ঢুকেই ব্যাগ জমা রেখে চলে গিয়েছিল বইয়ের তাকের কাছে। রোহিত তড়িঘড়ি করে বাইরে সিগারেটটা ফেলে তন্মনাকে অনুরসরণ করে ভেতরে গিয়েছিল। এত সুন্দর একটা মেয়েকে সে আরো আগে কেন খেয়াল করল না তাই ভেবে নিজেকে খুব তিরস্কার করেছিল।
ভেতরে পা রেখে তন্মনা প্রথমেই বেশ খানিকক্ষণ সময় নিয়ে পছন্দসই বই খুঁজেছিল। তাক থেকে নামিয়ে এক-দুইটা নেড়েচেড়েও দেখছিল। এদিকে রোহিতও মুখোমুখি আরেকটা আলমারির কাছে গিয়ে বই-টই নামিয়ে দেখার ভান করছিল। তারপর যখন তন্মনা তার মনঃপুত একটা বই নিয়ে টেবিলের কাছে গেল, তখন রোহিতকেও বাধ্য হয়ে হাতের কাছের কিছু একটা নিয়ে যেতে হলো সেখানে। কাছাকাছি একটা চেয়ার টেনে সেও বসেছিল। মেয়েটাকে একটানা দেখে গিয়েছিল সে প্রথমদিনই। আর মাথার ওপর ঘড়ির কাঁটাটা কেউ যেন ফাস্ট ফরোয়ার্ড করে দিয়েছিল।
ওর জন্য রোহিত দিনের পর দিন অপেক্ষা করেছে একই সময় একই জায়গায়। প্রতিদিন কোনো না কোনো বই বেছে নিয়েছে। তারপর পড়ার অভিনয় করতে করতে তাকিয়ে দেখেছে তন্মনাকে। ততদিনে সে আবিষ্কার করে ফেলেছে যে, এই মেয়েটাকে সবচেয়ে সুন্দর লাগে এই লাইব্রেরির ভেতরেই। তাকে সব থেকে ভালো দেখায় যখন সে বইয়ের পাতায় ডুবে থাকে। যখন সে আনমনে চুল সরিয়ে কানের পিছনে নেয়। যখন সে বই পড়তে পড়তে হঠাৎ ওপর দিকে তাকিয়ে কোনো একটা ভাবনায় হারিয়ে যায়। এক এক সময় তন্মনার মুখে মৃদু হাসি ফুটে উঠতে দেখত। কখনো পাঠমগ্ন তার চেহারায় দুঃখবোধ স্পষ্ট হয়ে উঠত। কখনো গভীর চিন্তায় তার ভ্রূ কুঁচকে থাকত। কখনো উদ্বেগে দাঁত দিয়ে নখ কাটতেও দেখা গেছে মেয়েটাকে।
কোনো কোনো দিন তন্মনা আসত না। আসতই না। এই নিয়ে রোহিতের খুব যে একটা হতাশা কাজ করত তা নয়। বরং সে খুশিই হতো একটা বাড়তি দিন পেয়ে পড়াটুকু এগিয়ে রাখা যাবে ভেবে। এর বাইরে অন্যান্য বইও সে পড়ত।
পড়ার মধ্যে এতটাই ডুবে গিয়েছিল যে, ছেলেটা এক পর্যায়ে খেয়ালই করল না, এক দুপুরে যেই মেয়েটার পিছু সে নিয়েছিল, সে আজ আর এখানে আসে না।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন