'কেন?' আমার পা কিন্তু সরে না। অলকানন্দার স্থবির টব থেকে শুরু করে বাতাসের গতিমুখ - সবটাই আমাকে শঙ্কিত করছিল।
'আমাকে একটা ঠেলা দাও আলতো করে।'
'কী বলছেন!' সত্য যে, আমার আঁতকে ওঠায় যতখানি ভয় ছিল ততখানি চমক ছিল না।
'পড়ব না। ভয় নাই। আসো তো আসো। দেখোই না, আমি ভাসব। তারপর উড়ে যাব।'
'না না আমি পারব না।'
দেবী কিছু একটা বলতে গিয়ে অন্যদিকে মুখ সরিয়ে নিলেন। ঈষৎ কালো ছায়া যেন নেমে এল ভিট্রুভিয়াসের বিদ্রূপকারী ওই মুখে। আমি একটা প্রয়োজনীয় ধাক্কা খেলাম। হঠাৎ নিজের ওপর খুব লজ্জা হলো আমার। আমি দেবীকে অবিশ্বাস করছি। দেবীর কথায় সন্দেহ প্রকাশ করছি। আর কত - ছি!! নিজেকে ধিক্কার দিয়ে আমি তার কাছে এগিয়ে গেলাম, 'সত্যিই আপনার কিছু হবে না তো দেবী!'
'এই তোমার প্রেম, তোমার ভক্তি?'
'উঁহু, চোখ বন্ধ করো না বিক্রম। চোখ মেলো। দেখো আমি উড়ব। তোমাকে দেখতে হবে।'
সাহস করে নাকি জেদ ধরে চোখ মেললাম। তারপর দুর্বলভাবে একটা ধাক্কা দিলাম দেবীর কোমরে। হ্যা, প্রথমে উনি পৃথিবীর দিকেই পড়লেন। 'ভালোবাসিইই...' বলছিলেন শুনলাম। প্রায় সাথে সাথে আবার তাকে ক্লেশহীন ভেসে আসতে দেখলাম। যাক, বাঁচলাম। মনে যে ক্ষণস্থায়ী দ্বিধার ঠাঁঁই দিয়েছিলাম তার জন্য ভীষণ অনুতাপ হলো। কতবার না বলেছি, আর কখনো এই বিচ্যুতি ঘটতে দিব না।
আমার দিকে এক টুকরো পৌরাণিক হাসি ছুঁড়ে দিয়ে দেবী মেঘের দিকে চাইলেন। ওনাদের পুরাতন চুক্তিপত্রের ভাষা আমি কখনোই রপ্ত করতে পারিনি। আমার সত্যিকার দাবি ছিল যে হাসিটার ওপর, সেই হাসিটা শুধু বরাবরের মতো এসে লেপটে গেল আমার ঠোঁটে।
তীব্র কোলাহল শুনে যখন নিচে উঁকি দিলাম, তখনো ফুটপাথের ঊর্ধ্বমুখী জটলা থেকে প্রত্যক্ষদর্শীরা আমার অবিচলিত হাসিমুখটাই দেখতে পেয়েছিল।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন