সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

জোকার: উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন?

চলচ্চিত্র: জোকার।। পরিচালনা: টড ফিলিপস ।।প্রযোজক-পরিবেশক: ডিসি ফিল্মস, ওয়ার্নার ব্রাদার্স।। অভিনয়: হোয়াকিন ফিনিক্স।।  মুক্তি: অক্টোবর ৪, ২০১৯।। দৈর্ঘ্য: ১২২ মিনিট।। ভাষা: ইংরেজি।। 


“বুর্জোয়া সমাজ এখন আড়াআড়ি রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে, হয় তার উত্তরণ হতে হবে
সমাজতন্ত্রে অথবা ফিরতে হবে বর্বরতায়।”
  • রোসা লুক্সেমবার্গ, ১৯১৬


উদারপন্থীরা সমালোচকরা অনেকেই ‘জোকার’কে দেখেছেন সমাজে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে এমন এক চলচ্চিত্র হিসাবে। এও বলা হয়েছে যে, এই ছবির সাথে স্তালিনীয় প্রোপাগান্ডার কোনো পার্থক্য নাই। সুপারহিরোর প্রেক্ষাপট আশ্রয় করে মূলত বিশ্বকে এক গুরুগম্ভীর বার্তা দিতে চেয়েছেন এর নির্মাতারা। আবার কারো মতে, ‘জোকার’ আদতে সমাজকে কোনো দিকনির্দেশনা দেয় না, স্রেফ সমাজের প্রতিচ্ছবি ধারণ করে। 
কাহিনী সংক্ষেপ
কমিক ও জনপ্রিয় সংস্কৃতির বিখ্যাত-কুখ্যাত খল চরিত্র ‘জোকার’। সেই চরিত্রের উত্থানের পেছনে এক নতুন আখ্যান আমরা পাই, টড ফিলিপ নির্মিত একই নামের চলচ্চিত্রটিতে। ছবিতে আর্থার ফ্লেক (হোয়াকিন ফিনিক্স) একজন নিম্নবিত্ত শ্রেণীর ব্যক্তি যিনি মানসিকভাবে অসুস্থ। ৮০-র দশকের কাল্পনিক গথাম শহরে আর্থারের আপন বলতে আছে শুধু তার মা (ফ্রান্সেস কনরয়)। জীবিকার জন্য আর্থারকে সঙ সেজে প্ল্যাকার্ড হাতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে নানা বিজ্ঞাপন প্রচার করতে হয়। পাশাপাশি তার চেষ্টা একজন স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান হওয়ার। এই দুর্বল, আপাত নিরীহ, বঞ্চিত আর্থার ফ্লেকই একদিন হয়ে ওঠে এক ভয়াবহ ক্রমিক খুনি।     
বিতর্ক
ট্রেলার মুক্তি থেকে আরম্ভ করে, ভেনিস চলচ্চিত্রে উৎসবে প্রদর্শন ও গেল বছরের অক্টোবরে বিশ্বজুড়ে প্রায় একযোগে মুক্তি পাওয়ার পর কম সমালোচনার জন্ম দেয়নি ‘জোকার’। বিতর্কিত হয়েছে এর বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গি, নারীবিদ্বেষ, বীভৎসতা, দাঙ্গাচিত্র প্রভৃতির জন্য। যদিও সেসব অভিযোগ ইতোমধ্যে খণ্ডিত হয়ে গেছে খুব সহজেই। এর বাইরে অন্যান্য প্রধান যে বিষয়গুলো নিয়ে উদ্বেগ দেখিয়েছেন বোদ্ধারা, তা হলো -
এক, আর্থারের মতো মানসিক রোগীদেরকে বিপজ্জনকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
দুই, আর্থারের যে পশ্চাদপট দেখানো হয়েছে তা পশ্চিমা বিশ্বের বেশিরভাগ ক্রমিক খুনীর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে পারে। এইভাবে অপরাধীদের প্রতি এক ধরনের সহমর্মিতা প্রদর্শিত হয়েছে।
তিন, অতিমাত্রায় নৃশংসতার দৃশ্যায়ন হয়েছে এবং তা নেতিবাচকভাবে দেখান হয়নি।  
চার, সহিংসতাকে সমর্থনযোগ্য হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে। এই ছবি সহিংসতা উসকে দিতে পারে এমন আশঙ্কায় বিভিন্ন প্রদর্শনীর স্থানে বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছিল। এক্ষেত্রে ‘দি ডার্ক নাইট’ প্রদর্শনকালে অরোরা হত্যাকাণ্ডের কথা স্মরণ করেছিলেন অনেকে। যদিও ‘জোকার’-কে উপলক্ষ করে কোনো ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি।
শ্রেণী সংঘর্ষ
গথাম শহরে আমরা তিন স্তরের প্রতিনিধি দেখতে পাই। অভিজাত ও শাসক শ্রেণীর প্রতীক এখানে টমাস ওয়েইন (ব্রেট কালেন); তার গড়ে তোলা ওয়েইন সাম্রাজ্যই নিয়ন্ত্রণ করে শহরের প্রায় সমস্ত উৎপাদন ও বণ্টন। তাদের রাজসিক প্রাসাদ সুউচ্চ প্রাচীর দিয়ে নিজেদের পৃথক করে রেখেছে শহরের অন্ধকার অংশ থেকে। দ্বিতীয়ত, আমরা দেখি ওয়েইন এন্টারপ্রাইজের তিন দালাল (ওয়াল স্ট্রিট কর্মকর্তাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যারা); চোখ বুঁজে কাজ করে তারা ওয়েইনের সম্পদের পাহাড়ে আরো জোগান দিয়ে যাচ্ছে দিনকে দিন। নিজেদের ভাগ্যকে একভাবে গড়ে নিতে পেরেছে বলে তাদের ধারণা। এই দুই শ্রেণীই আর্থারের মতো বঞ্চনার শিকার মানুষদের থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে। সুবিধাবঞ্চিতদের দুর্ভোগকে তারা সমাজের সামগ্রিক দায় নয়, বরং ওই শ্রেণীরই ব্যর্থতা হিসেবে দেখে। আর্থার যখন সাবওয়েতে তিন যুবককে হত্যা করে তখন ওয়েইন এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার দাবি করেন, যারা পরিশ্রমের দ্বারা অর্থবিত্ত গড়ে তুলতে পারেনি, তারা ঈর্ষা থেকেই এ ধরনের কাপুরুষোচিত হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।  
আর্থার সেইসব একাকী, দুর্বল, পরিচয়হীন মানুষের প্রতিনিধি। সমাজ তাদের চাহিদার দিকে তাকায় না। তাদের ঘৃণা করে। চাকরিচ্যুত, প্রেমহীন, বান্ধববর্জিত তারা পড়ে থাকে অন্ধকার গলিতে, স্যাঁতস্যাঁতে এপার্টমেন্টে। তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়ানর কোনো প্রয়োজনীয়তা বোধ করি না আমরা। এই ধরনের মানুষ সমাজে থাকা বা না থাকায় আমাদের কিছু যায় আসেনা। 
স্বীকৃতি আদায়
অথচ আর্থারের মতো এই মানুষগুলো ঠিকই এক এক সময় মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। ক্রমাগত নিপীড়ন, চিকিৎসাসেবা স্থগিত, অতীত নিয়ে আকস্মিক উপলব্ধি আর্থারকে সব ধরনের বন্ধন থেকে মুক্ত করে দেয়। ফলে যে নিষ্ঠুর গথাম এই মানুষটার টুটি চেপে ধরেছিল তার দিকেই একদিন পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বসে সে। আর্থার অপরাধী হলেও প্রাথমিকভাবে সে নিজেই একজন ভিকটিম। যা হয়তো প্রত্যেক অপরাধীর ক্ষেত্রেই কোনো না কোনভাবে সত্য।
আর্থারের উদ্ধত খুনি হয়ে ওঠার পেছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রণোদনা ছিল পরিচয় সঙ্কট। স্করসেসির ‘ট্যাক্সি ড্রাইভার’ (১৯৭৬) ছবিতে আমরা দেখেছি স্বীকৃতির জন্য মরিয়া মানুষ কতটা বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে। বাস্তব বিশ্বেও একই ধরনের পরিচয়হীনতা মানুষকে সন্ত্রাসের পথে ধাবিত করেছে।
আজীবন উপেক্ষিত হয়ে আসা আর্থার আত্মতৃপ্তি বোধ করে, যখন দেখতে পায় যে সে গণমাধ্যমের আলোচ্য। দাঙ্গাকারীদের মধ্যে দাঁড়িয়ে সে একাত্মতা বোধ করে। জোকারের আড়ালে থেকে আর্থার অনুভব করে যে, সে একটা পরিচয় অর্জন করতে পেরেছে। ভীতি ও নৈরাজ্যের মাধ্যমে হলেও একসময় আর্থার মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়।
বিচ্ছিন্ন দুর্ঘটনা থেকে সংঘবদ্ধ অভ্যুত্থান  
এই ছবিতে জোকারের উদ্দেশ্য কখনোই সামাজিক বিশৃঙ্খলা বা নৈরাজ্য সৃষ্টি ছিল না। সাবওয়ের প্রথম দু’টি খুন সে করে আত্মরক্ষার্থে। পরবর্তী খুনগুলো ছিল ব্যক্তিগত আক্রোশ অথবা প্রতিশোধ। আর্থারের আচরণ ছিল অনেকটা নিহিলিস্টিক। পরবর্তীতে দেখা গেছে, নিজের পরিকল্পনার বাইরে থেকেই আর্থার এক সামষ্টিক বিদ্রোহের জন্ম দেয়।
প্রথম তিনটি খুন এবং সে সংক্রান্ত ওয়েইন তথা শাসক শ্রেণীর প্রতিক্রিয়া এখানে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। গথামের মেয়র পদপ্রার্থী টমাস ওয়েইন খুনিকে অবজ্ঞা সহকারে একটি শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত করে দেন। তিনি বলেন, এই ধরনের মানুষ তার কাছে সঙ ছাড়া কিছু নয় এবং তাদের প্রতি ওনার কোনো সহানুভূতি নাই। এই বক্তব্যেই নগ্নভাবে ধরা পড়ে যায়, আর্থারদের প্রতি উচ্চবিত্তের দৃষ্টিভঙ্গি। যা নিপীড়িত মানুষের মনে তীব্র ক্ষোভ ও ক্ষোভ থেকে দাঙ্গার জন্ম দেয়। মানুষ সঙের মুখোশ পরে নেমে যায় রাস্তায়। আর্থারের খুনের অভিষেক একইসাথে জন্ম দেয় ‘ধনীদের হত্যা করো’ নামের এক আন্দোলনকে। যে আন্দোলন অবধারিতভাবে বর্বর রূপ নেয়। এক্ষেত্রে ফরাসি বিপ্লবের পটভূমিকায় রচিত ‘আ টেল অব টু সিটিজ’ (১৮৫৯) ধ্রুপদী উপন্যাসের কথা মনে পড়ে। সেখানেও ডিকেন্স দেখিয়েছেন কীভাবে সামাজিক বৈষম্য নৃশংসতার জোয়ার ডেকে আনতে পারে।
সহিংসতার স্বরূপ
রিচার্ড উইকিলসনের অপরাধবিজ্ঞান সম্পর্কিত গবেষণায় দেখা গেছে, যে সমাজে নানারকম বৈষম্য ও আর্থিক অসমতা বেশি থাকে সেখানে খুনখারাবির পরিমাণ সমানুপাতিক। আয় বৈষম্যের কারণে বঞ্চিত শ্রেণীর মানুষের মধ্যে মানসিক চাপ ও হতাশার প্রাদুর্ভাব থাকে। তার কারণ, সমাজ স্বীকৃত কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানর ক্ষেত্রে বাড়তি প্রতিবন্ধকতা, সামাজিক জীবনের নিম্নমান ও সামাজিক সম্পর্কের অবনতি ইত্যাদি। গথাম শহরে আমরা অনুরূপ চিত্রই দেখতে পাই। অর্থাৎ, সিস্টেমের মধ্যেই আমরা সিস্টেমকে ধ্বংসকারী উপাদান জিইয়ে রাখি। ভাবা দরকার, আজ যেই দুর্দশাগ্রস্ত লোকটাকে আমরা সবদিক থেকে বয়কট করছি, কাল সে-ই সহিংস হয়ে উঠতে পারে কিনা। 
‘জোকার’ ছবির সমালোচকরা বিশেষ করে কেন্দ্রীয় চরিত্রটিকে এরকম ঠাণ্ডা মাথার খুনি হিসাবে উপস্থাপন করাকে সমর্থন জানাতে পারেননি। মজার ব্যাপার, অপর এক ‘আর’ রেটেড সুপারহিরো চলচ্চিত্র ‘ডেডপুল’ (২০১৬) পর্দায় এর চেয়ে ঢের বেশি নৃশংস খুনাখুনি দেখালেও তা নিয়ে আমাদের মাথাব্যাথা ছিল না। কারণটা খুব সহজ। ‘ডেডপুলে’র উপস্থাপন এতটা সিরিয়াস ছিল না। তার চেয়েও বড় কথা, সহিংসতার শিকার কারা হচ্ছে এটা নিয়ে দর্শক বেশ স্পর্শকাতর। এ বিষয়টা হিথ লেজারের জোকারও ধরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছিল। যখন একজন ছেলেধরা গণপিটুনিতে মারা যায় তখন সেটাকে আমরা নায্যতা দেই। অথচ যখন যদি পারি, সে ছিল একজন নির্দোষ মা তখন আমাদের তীব্র অনুতাপ হয়। আমাদের এই দোষী-নির্দোষ সাব্যস্ত করার কম্পাসটিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে জোকার।
সহিংসতা সম্পর্কে আমাদের ধারণাও একইরকম। দাঙ্গায় যখন শহর পুড়ছে তখন সপরিবারে প্রেক্ষাগৃহে গেছে ওয়েইন। ফিরতি পথে যখন সেই দম্পতি নিহত হলো, সেটা দর্শকের চোখে নিষ্ঠুরতা। উদ্ধত চলচ্চিত্রবোদ্ধারা এখানে প্রশ্ন রাখছেন, সমাজে বিদ্যমান শ্রেণিবৈষম্য কি তবে সহিংসতা নয়? স্বাস্থ্যসেবার সঙ্কট, কৃত্রিম বেকারত্ব, পুঁজিপতিদের জবরদখল কি সহিংসতা নয়?  
প্রকৃত খলনায়ক
‘জোকার’ ছবির সময়রেখা চল্লিশ বছর আগেকার হলেও এখানে যেন ইঙ্গিত রয়েছে হয়েছে সম্ভাব্য ভয়াবহ ভবিষ্যতের। তাই একে আখ্যা দেয়া হয়েছে ‘সামাজিক হরর’ হিসাবে।
৮০-র দশকেই থ্যাচার ও রিগ্যানের রক্ষণশীল প্রশাসন নিওলিবারেল নীতির বহুল প্রয়োগ ঘটান ইংরেজিভাষী অর্থনীতিতে। তখনকার মুক্ত বাজার পুঁজিবাদ, রাষ্ট্রীয় ব্যয় সংকোচন, বেসরকারিকরণ প্রভৃতি সুস্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে ‘জোকার’-এ। যেমন, শহরে ওয়েইন পরিবারের আধিপত্য ও রাজনীতিতে তার বলপ্রয়োগপূর্বক অংশ নেওয়া। আবার দেখি, একজন মানুষের চাকরি চলে যাওয়া কতটা সহজ অথচ ফিরে পাওয়া কতটা কঠিন। আচমকা বাজেট কর্তনের কারণে আর্থারের ওষুধপত্র ও চিকিৎসাসেবা বন্ধ হয়ে যায়। একই কারণে শহরের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ধর্মঘটের ডাক দেয়। ফলে আমরা গথামকে দ্রুতই আবর্জনায় ভরে যেতে দেখি। শহরে একচেটিয়া শোষণের বিরুদ্ধে একটা প্রতিক্রিয়া এমনিতেই মাথা ছাড়া দিচ্ছিল। যা উন্মত্ত হয় আর্থারের অনুদ্দেশ্যমূলক অবদানে।
ছবির শুরুতেই দেখতে পাই, আর্থার ফ্লেক একজন মানসিক রোগী যার একাকিত্ব ও হতাশা তার হিংস্র বা নেতিবাচক চিন্তাকে উসকে দিয়ে থাকে। এ ধরনের একজন মানুষের প্রতি সমাজ বা রাষ্ট্রের কী দায়বদ্ধতা ছিল? আর্থারের প্রয়োজন ছিল নিয়মিত কাউন্সেলিং ও ওষুধ। বেশি প্রয়োজন ছিল একটি চাকরির। তার মায়ের জন্য নিরাপত্তা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু না, গথাম সবার আগে দেখে ভোক্তাদের লাভ, বিত্তশালীদের সুবিধা-অসুবিধা। আর্থারকে তারা ছুঁড়ে দেয় আস্তাকুড়ে। টেলিভিশনে তাকে নিয়ে ঠাট্টা করে তারকা উপস্থাপক (রবার্ট ডি নিরো)। 

বলতে চাচ্ছি, ‘জোকার’ চলচ্চিত্রের প্রকৃত খল চরিত্র আর্থার নয়, তার মা, টমাস, মুরে, দাঙ্গাকারী কিংবা শহরের পুলিশ নয়। বরং এখানে খলনায়ক হলো মানুষের মধ্যকার নৃশংসতাকে জাগিয়ে তোলার জন্য দায়ী সেই নিওলিবারেল ব্যবস্থা।



লেখাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ত্রৈমাসিক 'সাইরেন' এর ৫ম সংখ্যায় প্রকাশিত হয়

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

48 LAWS OF POWER by Robert Greene and Joost Elffers

Vladimir Putin The definition of power in 21st century

হারবার্ট স্পেনসারের 'জৈবিক সাদৃশ্যবাদ'

ইংরেজ সমাজতত্ত্ববিদ ও জীববিজ্ঞানী হারবার্ট স্পেনসারকে বলা হয় সমাজবিজ্ঞানের দ্বিতীয় জনক। তিনি 'সামাজিক ডারউইনবাদ'-এর একজন প্রচারক। স্পেনসারের বিখ্যাত 'জৈবিক সাদৃশ্যবাদ' সমাজ ও জীবকে বিশেষ সাদৃশ্যপূর্ণ বলে দাবি করে। হারবার্ট স্পেনসার (১৮২০-১৯০৩) ১। সমাজ ও জীব উভয়েই আকারে বৃদ্ধি পায়। মানবশিশু প্রাপ্তবয়স্ক হয়। মহল্লা থেকে মেট্রোপলিটন হয়, ক্ষুদ্র রাষ্ট্র থেকে সাম্রাজ্য তৈরি হয়।   ২। প্রত্যেকে আকারে যত বড় হয় উভয়ের কাঠামো জটিলতর হতে থাকে। ৩। দুই ক্ষেত্রেই, কাঠামোগত পার্থক্যের কারণে কার্যকারিতায় অনুরূপ পার্থক্য দেখা দেয়। ৪। জীবদেহ ও সমাজ উভয়েই ক্ষুদ্রতর একক দ্বারা গঠিত। জীবের যেমন কোষ রয়েছে তেমন সমাজের রয়েছে ব্যক্তি। একাধিক কোষ মিলে যেভাবে বৃহত্তর অঙ্গ গঠন করে, একইভাবে একাধিক ব্যক্তি মিলে সমাজের বিভিন্ন অংশ গঠন করে। ৫। সমাজ ও জীব উভয়ই মূলত তিন ধরনের তন্ত্র বা ব্যবস্থার ওপর টিকে থাকে। এরা হলো - বিপাক তন্ত্র (sustaining system), সংবহন তন্ত্র (distributor or circulatory system), স্নায়ু তন্ত্র (regulatory system). জীবের জন্য খাদ্য হলো এর চালিকা শক্তি, সমাজের ক্ষেত্রে যা হলো কৃ...

আমার লেখা বই

আমার সর্বশেষ বই বাংলায় শিখি ফরাসি ভাষা শাখা: ভাষাশিক্ষা প্রকাশকাল: ২০২৪ প্রচ্ছদ:  বইটি পড়ুন আমার পঞ্চম বই চিত্রনাট্যচিত্রণ: কাহিনি ও চিত্রনাট্য লেখার কলাকৌশল শাখা: চিত্রনাট্য প্রকাশকাল: ২০২৪ প্রচ্ছদ: পার্থপ্রতিম দাস বইটি পড়ুন আমার সর্বশেষ উপন্যাস অধিনায়ক শাখা: উপন্যাস প্রকাশকাল: ২০২০ প্রচ্ছদ: রাজীব দত্ত বইটি পড়ুন আমার প্রথম উপন্যাস রঙবাহার শাখা: উপন্যাস প্রকাশকাল: ২০১৫ প্রচ্ছদ: তৌহিন হাসান বইটি পড়ুন আমার দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ অপরূপকথা শাখা: গল্প সঙ্কলন প্রকাশকাল: ২০১৩ প্রচ্ছদ: তৌহিন হাসান বইটি পড়ুন আমার প্রথম গল্পগ্রন্থ ভূতলোজি কিংবা চিত্তশুদ্ধি শাখা: গল্প সঙ্কলন প্রকাশকাল: ২০১২ প্রচ্ছদ: বিক্রমাদিত্য বইটি সম্পর্কে জানুন My books on Goodreads রঙবাহার (avg rating 5.00) অপরূপকথা (avg rating 5.00) অধিনায়ক ভূতলোজি কিংবা চিত্তশুদ্ধি বাংলায় শিখি ফরাসি ভাষা

48 Laws of Power in Bangla Free PDF Download

বিনামূল্যে ই-বুক পিডিএফ ডাউনলোড করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন সরাসরি পড়তে এখানে ক্লিক করুন বিক্রমাদিত্য's books on Goodreads রঙবাহার reviews: 1 ratings: 2 (avg rating 5.00) অপরূপকথা ratings: 1 (avg rating 5.00) অধিনায়ক ভূতলোজি কিংবা চিত্তশুদ্ধি বাংলায় শিখি ফরাসি ভাষা Goodreads reviews for রঙবাহার Reviews from Goodreads.com রাজাদের রাজ্যে রাষ্ট্ররা by রিফু My rating: 5 of 5 stars ডেস্কে বই জমছেই, ছোটগল্পের বই বাদে, পাই না, লেখে না কেউ—জানি কী লেখে—গাছ মারে শুধু শুধু। রিফুর বই আব্বা অল স্টার রেকমেন্ডেশনসহ দিয়ে গেল। গল্প-কবিতা-ক্যাপশনে ‘রাষ্ট্র’ ‘রাষ্ট্র’ ‘রাষ্ট্র’ লিখতে লিখতে ছাবাছাবা করে ফেলেছে সবাই, তারপরও, এই নামকরণটায় বাড়তি মাথা খাটানোর ইঙ্গিত আছে। এক ঘণ্টায় বইয়ের অর্ধেক পড়েছি, চোখের আন...

TFP 415 WORLD CINEMA : Class Notes

Aug 14, 2023 LECTURE 2 Expressionism Reality is distorted Artist’s personal feeling From Northern Europe How did it begin? Effects of WWI  Foreign film banned Horror, insecurity, and paranoia From German romanticism  ENLIGHTENMENT ROMANTICISM Reason Emotion Progress Common good Individuality Unique potential Science and technology Rational, ordered society Nature and imagination Spontaneous, passionate life Social conventions and institutions  Resistance to social conventions and institutions First appeared in poetry and theater “The world is a laboratory” by Gottfried Benn Characteristics of german expressionist theater Distorted and exaggerated sets, props, and costumes Unease and anxiety Symbolism- character might be represented by an animal or object or a particular color Non-linear plot Confusion and disorientation Fragmented nature of the human experience The threepenny opera (1928) by bertolt brecht Characteristics of german expressionism The subjective view of the...

THE ART OF SEDUCTION by Robert Greene

রবার্ট গ্রিন এখানে ‘সিডাকশন’ কথাটাকে ব্যবহার করেছেন শুধুমাত্র যৌন প্রলোভন হিসেবে নয়, বরং আরো ব্যাপক অর্থে—রাজনৈতিক, সামাজিক বা অন্যান্য ক্ষেত্রে যেই প্রলোভন প্রযোজ্য। এই প্রলোভনের নীতিগুলো জানলে নিজেকে ও নিজের সম্পর্কগুলোকে আরেকটু ভালোভাবে ঝালাই করা যাবে। সেইসাথে তাদের প্রয়োগ করা যাবে ব্যক্তিগত ও পেশাদার জীবনে।    সারকথা প্রলোভন ব্যাপারটাই মনস্তত্ত্বের খেলা, সৌন্দর্যের না। ফলে এই খেলার একজন ওস্তাদ হয়ে ওঠা যেকোন মানুষেরই আয়ত্ত্বে আছে। এমন নয় যে, একজন প্রলোভনকারী তার ক্ষমতাটাকে একবার চালু আর একবার বন্ধ করেন—প্রতিটা সামাজিক ও ব্যক্তিগত লেনদেনই তার কাছে প্রলোভনের একেকটা সুযোগ। সুযোগের একটা মুহূর্তও নষ্ট করার নাই। প্রলোভনকারীরা কখনো আত্মনিমগ্ন থাকে না। তাদের দৃষ্টি থাকে বাইরের দিকে, ভিতরের দিকে নয়।  প্লেজার বা পুলক হলো আমাদেরকে আমাদের সীমার বাইরে টেনে নিয়ে যাওয়ার অনুভূতি, উদ্বেলিত করে দেওয়ার অনুভূতি—তা হতে পারে মানুষের দ্বারা, বা কোনো ঘটনার দ্বারা।  শেষত, যারা কিনা প্রলোভনকারী, তাদের দুনিয়াদারির সাথে নৈতিকতা ব্যাপারটার সম্পর্ক একদম নাই। প্রতিটা প্রলোভনের দুইটা উপাদান থাকে...

স্বর্গচূড়া

অবশেষে, একদিন, এতবছরের অপেক্ষার পর ট্রেনটা পেলাম আমি। সঙ্গের পোটলা-পুটলিগুলো প্রথমে কামরার ভেতর ছুঁড়ে দিলাম। তারপর নিজের নাম মুখে নিয়ে ঝাঁপিয়ে উঠলাম ট্রেনে। গাড়িটা এক মুহূর্ত থামে না প্লাটফর্মে। জোর গতিতে ছুটে চলে। কারো জন্য অপেক্ষা করতে নারাজ। একজনের জীবনে একবার বই দু’বার কখনো আসে না। পাল্লা দিয়ে ছুটে তাকে ধরতে হয়। নইলে নাই। অন্য গাড়ি ধরতে হবে। কিন্তু সে গাড়ি যাবে আরেক গন্তব্যে। ট্রেনের দরজা দিয়ে বাইরে উঁকি দিলাম। প্লাটফর্মে সাথীকে দেখতে পাই। হাত নেড়ে বিদায় জানাচ্ছে অথচ ঠোঁটে হাসি নাই। শুনতে পেলাম মনে মনে কেবল বলছে, তোমার যাত্রা শুভ হোক। (২) প্রথম কবে সাথীর দেখা পেয়েছিলাম ভালো মনে পড়ে না। মনে পড়ে, মন খারাপ করে প্লাটফর্মে বসে ছিলাম। সাথীকে পেয়ে মন ভালো হয়ে গিয়েছিল। কেন, তা মনে নাই। এরপর কত দিন, কত রাত পাশাপাশি বসে কেটে গেল। আমি আর সাথী। স্টেশন জুড়ে এত এত মুখ। কাউকে মনে ধরে নি। সাথী বাদে। সাথীর স্বজনরা একই স্টেশনে ছিল। তবু ও ছিল একা। কী জানি কেন, কখনো জিগ্যেস করা হয় নি। কিন্তু সাথী অনেক প্রশ্ন করত আমাকে। খুব অবাক হতো যে অন্যদের মতো আমার শরীরে কেন বাঁধন নাই। আমার মা-বাবার কথা জিগ...

মিডিয়া সাক্ষরতা : আদিপর্ব

মিডিয়া সাক্ষরতা ও এ সংক্রান্ত যাবতীয় জিজ্ঞাসা - মিডিয়া নিজে যতটা প্রাচীন তার চেয়ে কম পুরনো নয়। বর্তমানে তথ্য ও তথ্যপ্রযুক্তির সহজলভ্যতা মিডিয়া সাক্ষরতাকে অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে বেশি প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে সত্য। কিন্তু মিডিয়ার প্রভাব ও মিডিয়া সাক্ষরতার গুরুত্ব নিয়ে নানা প্রশ্ন অনেক অনেক আগে থেকেই আলোচিত হয়ে এসেছে। এটাও লক্ষণীয় যে মিডিয়ার পক্ষে-বিপক্ষে বিভিন্ন বিতর্ক একইসাথে নবাগত প্রযুক্তি, শিল্প (আর্ট ও ইন্ডাস্ট্রি উভয় অর্থে), এমনকি সংস্কৃতির গতিপথকে সময় সময় প্রভাবিত করে এসেছে। তবে ১৯৬০ এর দশক পর্যন্ত পরিভাষা বা গবেষণাক্ষেত্র হিসাবে এর অস্তিত্ব ছিল না। যতদিন না বিষয়টি যোগাযোগ স্কলার ও মিডিয়া প্রফেশনালদের কাজের ক্ষেত্র হয়ে ওঠে তার আগ পর্যন্ত (কিংবা এখনো কিছুসময়) যোগাযোগ সংশ্লিষ্ট ভাবনাসমূহ পরিচালিত হয়/হয়েছে তাত্ত্বিক, দার্শনিক, সমাজবিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী ও ভাষাতত্ত্ববিদদের দ্বারা। এ যাবৎ মিডিয়া সাক্ষরতা নিয়ে যত তত্ত্বীয় চিন্তা হয়েছে তাতে --- প্লেটো থেকে ফ্রয়েড, সসার (১) থেকে সিক্সাস (২) --- প্রত্যেকেরই রয়েছে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। উৎপত্তি ও সংজ্ঞা এই তথ্য মোটেও অভিন...

বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি : প্রাচীন অর্বাচীন তর্ক

এই লেখাটা ২০১৪ সালে প্রকাশিত হয় যোসেফাইট কালচারাল ফোরামের বার্ষিক ক্রোড়পত্র ত্রিলয়-এ। আমি তখন সেন্ট যোসেফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণির ছাত্র প্রাচীন -  ওই অর্বাচীনদের আমি শতবার সতর্ক করেছি, আর যা-ই করো, আত্মপরিচয় কখনো হারাবে না। স্পষ্টই দেখতে পাচ্ছি এদের সামনে যেন ঘোর অন্ধকার। নিজেদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি সবকিছু ভুলে গিয়ে এরা আজ পাশ্চাত্যের অনুকরণে ব্যস্ত। নিজের চশমার 'স্টাইল'টা যতই বাজে হোক না কেন ওটা পরেই তুমি স্বচ্ছ দেখবে। তা না করে যদি অন্যের চশমা চোখে দাও, তোমাকে মানাবে হয়তো ভালো কিন্তু হোঁচট খেতে হবে পদে পদে। অর্বাচীন - তোমার কথায় কেমন যেন ছাপাখানার গন্ধ। তোমার বয়স হয়েছে। তাই চোখে সমস্যা। চোখের পাতা বন্ধ করে তুমি অতীতটাকে সোনালি রঙের মনে করো। আর চোখ মেলে ভবিষ্যৎ দেখতে গেলেই তোমার মনে হয় সেটা বুঝি অন্ধকার। অর্বাচীনদের যতই গালি দাও।পশ্চিমা চিকিৎসার সাহায্য নিয়েই দেখো না চোখটা ভালো হয় কি না। প্রাচীন - বাবা! আজকালকার ছেলেমেয়েরা এক কথার পিঠে একশ কথাকে চাপায়। আমাদের যুগে বড়রা বলত। ছোটরা শুনত। তার থেকেই শিক্ষা নিত। এখনকার ছেলেমেয়দের কথা ...

ইফরিত

মোহাম্মদপুরের এক ভীষণ ব্যস্ত সড়কের পাশে আমাদের দুই বেড-ড্রয়িং-ডাইনিং এর ভাড়া বাসা। বাসাটা যখন নেয়া হয় তখন আমি তিন মাসের প্রেগন্যান্ট। এই এলাকায় ভাড়া তুলনামূলক বেশি। কিন্তু সদ্য তোলা বাড়ি আর তমালের অফিসও কাছেই হয় তাই ভাবলাম - এই ভালো। বাসায় উঠে গোছগাছ তখনো সারিনি। এক মাস গেছে কি যায়নি তখন থেকে সমস্যাটার শুরু। তমাল অফিস করে ফিরতে রাত নয়টা দশটা বাজত। খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়তেও সময় নিত না। আমি কোনদিন ওর সাথে শুয়ে পড়তাম, কোনদিন গল্পের বই পড়তাম অথবা ডায়েরি লিখতাম। এক রাতে টেবিল ল্যাম্প জ্বেলে কিছু একটা পড়ছি হঠাৎ দরজায় টোকা দেয়ার মতো আওয়াজ পেলাম। আমার কান খুব খাড়া। আওয়াজটা বাইরের ঘর থেকে এসেছে বুঝতে অসুবিধা হয় না। রাত্রি একটার সময় কে বড় দরজায় টোকা দিবে? পড়ায় মন ফিরিয়েছি মিনিটও হয়নি আবার... নক নক। খুব স্পষ্ট আওয়াজ। ভাবলাম সত্যিই বুঝি কেউ এসেছে। রাত হয়েছে বলে কলিং বেল টিপছে না। উঠে গিয়ে দরজার ফুটোয় চোখ রাখলাম। সারারাত বাহিরের আলো জ্বলত। কাউকে দেখলাম না। ঘরে ফিরে আসার কিছক্ষণের মধ্যেই আবার... নক নক। এবার আর দেখতে গেলাম না। দরকার হয় বেল বাজাবে। শীত করছিল। আলো নিভিয়ে তমালকে জড়িয়ে শুয়ে পড়ল...