সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

মুক্ত বনাম আবদ্ধ ফ্রেমিং

কোনো চলচ্চিত্রের গল্প বলার জন্য মূলগতভাবে যে দুই ধরনের কাঠামো  বা বিন্যাস অনুসরণ করা হয়, তার একটি হলো ওপেন ফর্ম, যার সাথে ফরাসি চলচ্চিত্রকার জাঁ রেনোয়ার নাম সংশ্লিষ্ট রাখা হয়। দ্বিতীয়টি হলো ক্লোজড ফর্ম, যার সাথে যুক্ত আছে জার্মান নির্মাতা ফ্রিৎজ লাং এর নাম। এই দুই কাঠামো থেকেই ওপেন ফ্রেমিং আর ক্লোজড ফ্রেমিং-এর উৎপত্তি। আমরা নিম্নোক্ত আলোচনায় এই দুইয়ের জন্য চলনসই পরিভাষা গ্রহণ করব - মুক্ত ফ্রেমিং আর আবদ্ধ ফ্রেমিং। মুক্ত ফ্রেমিং চিলড্রেন অব মেন (২০০৬) যে ফ্রেমিং পদ্ধতি দর্শককে ছবির অভ্যন্তরীণ বাস্তবতা সম্বন্ধে পূর্ণ ধারণা দেয় না তাকে বলে মুক্ত বা বিস্তীর্ণ ফ্রেমিং।  মুক্ত ফ্রেমিং-এ ছবিতে যা কিছু ঘটছে অথবা ছবিতে যা কিছু অবস্থান করছে তার ব্যাপারে দর্শক পুরোপুরি অবগত থাকে না। কেউ কেউ সহজেই বলে ফেলে যে, ক্লোজআপ হলো মুক্ত ফ্রেমিং এর যোগ্যতম উদাহরণ। আবার কেউ কেউ উল্টোটা বলে যে, আবদ্ধ ফ্রেমিং-এর আদর্শ উদাহরণ হলো ক্লোজ-আপ। আদতে এটি অতিসরলীকরণ। একটি ফ্রেম মুক্ত না আবদ্ধ তা নির্ভর করছে কতটুকু তথ্য সে দর্শককে সরবরাহ করছে তার ওপর। মুক্ত ফ্রেম সবসময় কিছু তথ্য (বলা যায়, বেশিরভাগ তথ্য) দর্শকের...

অগ্রিম প্রত্যাখ্যান পত্র

নবাগতা,  বোধ হয় একটা কথা তোমার জানা দরকার যে কথা  যে কথা এমনকি ভুয়োদর্শী চাঁদটা পর্যন্ত ভুলে গেছে আমি তোমাকে বলতে চাই। হাসতে পারো, কাঁদতে পারো, অবাক হতে পারো আমি তো বুঝি  ঘটনাটা পুতুল খেলার মতো হালকা আর এস্থেটিক, তারপরও-- আমাদের মতো যারা, এক দিন, এক বার, এক মুহূর্তই আমাদের জন্য যথেষ্ট।  আর একটাবার বাজি রাখার মতো কোনো সম্বল নাই আমার নিঃস্ব, বিশ্বাস করো, তোমাকে আশীর্বাদ ছাড়া আর কী দিতে পারি। চেয়ো না, আমি তো আমার নিজের কাছেই নাই। কী বলব--  ক্রমশ লাল হতে থাকা আকাশ লাল টিপ আর ত্রস্ত হাতে আড়াল করা একটা সিঁথির লালে আমি যে জন্মের নামে বন্ধকী পড়ে গেছি নবাগতা!

ধলু, এক অসহায় ছাগল

কসাই 'আল্লাহু আকবর' বলে চেঁচিয়ে উঠতেই শেষ চেষ্টা করল ধলু। তার চেষ্টা সফলও হলো, ছুটে বেরিয়ে এল দড়ি ছিঁড়ে। তারপর সোজা বেড়ার বাইরে। বেরিয়ে এসেও স্বস্তি নেই। বাড়ির কর্তা সহ আরও চাকর-বাকর, কসাই সবাই ছুটে এল। ধলু প্রাণপণে দৌড়াচ্ছে। এ পাড়ার মানুষেরা বড় সাংঘাতিক। ফি-বছরই এ সময় তারা খুব আনন্দ করে পশুপাখির গলা কাটে। কী মজা পায় কে জানে! তেমনই এ পাড়ার এক লোকের পাল্লায় পড়েছে সে। এর আগে সে যে বাড়িতে থাকত তারা খুবই ভালো ছিল। রোজ পেট ভরে খাবার খাওয়াতে পারত না তাও সে চিৎকার করত না। খুব ক্ষিদে পেলে নিঃশব্দে কাঁদত। সেই বাড়িতেই তার জন্ম হয়। তার মা ছিল কালো। তার ভাইবোনেরাও মিশমিশে কালো। দু'জন আবার সাদাকালোও ছিল। কেবল সেই ছিল ধবধবে সাদা। মালিকের ছোট্ট ছেলে মানিক আদর করে নাম রেখেছিল ধলু। বাকিদের কারো নাম তার মনে নেই। তবে এক ভাইয়ের নাম ছিল বোধ হয় কালু। মানিক তাকে যেমন খুব ভালোবাসত তেমনি সেও। তার মালিক মিজান সাহেবও তাকে খুব ভালোবাসত। কিন্তু এই মানুষটি টাকার জন্য কেমন নিষ্ঠুর হয়ে গেলেন। অভাবে পড়ে তাকে বিক্রি করে দিলেন হাটে। তার খুব মন খারাপ হয়েছিল। সবচেয়ে বেশি কষ্ট লাগল মানিকের কান্না দেখে। হাট থেকে...

---

…Mais oui, je t'aime, lui dit la fleur. Tu n'en as rien su, par ma faute… হ্যাঁ, রত্না ঠিকই সন্দেহ করেছে যে আমি পরকীয়া করছি।  ও চিরকাল সন্দেহপ্রবণ ছিলই। তবে এই প্রবণতায় প্রথম দিকের সেই মাধুর্য নাই, যখন ওর সন্দেহের পেছনে ওর রক্ষণাত্মক প্রেমকে দেখতে পেতাম। আজকে দেখি কেবলই চাপা বিদ্বেষ। রত্না, তুমি আমাকে হারিয়েছ। কিন্তু আমার থেকে হারিয়েছ আরো আগে। এক সময় আটপৌরে জীবন থেকে রেহাই পেতে যে মানুষটাকে আঁকড়ে ধরেছিলাম, একদিন আবার সেই মানুষটাকে এড়ানর জন্য ওই একই জীবনের কাছে মরিয়া হয়ে ফিরতে চেয়েছি। রূঢ় জীবনকে সহনীয় করত যে কণ্ঠস্বর, আজকে সেই কণ্ঠস্বর থেকে পালাতে জীবনের চাপের মধ্যে মুখ ডুবিয়ে শান্তি খুঁজি। অফিস, টাউন-হল-বাজার আর শুক্রবারের আসরে অতিরিক্ত সময় দেই শুধুমাত্র যেন রত্নার মুখোমুখি কম হতে হয়। ও হয়তো আমাকে আরো বেশি চায়। সে কথা বলতে পারেনি বলেই হয়তো দিন দিন আগ্রাসী হয়ে উঠেছে। তারপর ধীরে ধীরে নিজেই ভুলে গেছে কী চায়। আমার টক শো দেখা নিয়ে ও বিরক্ত। অথচ আমি জোর করে টক শো’র ঘ্যানঘ্যানানি শুনি যাতে ও ততক্ষণে ঘুমিয়ে পড়ে। বোঝে না ও? আমাকে দখল করতে গিয়ে আমাকে ক-ত দূরে ঠেলে দিয়েছ দেখো রত্না।  রত্...

প্রবর্তনা

এই ভূমিতে একদিন দণ্ডকারণ্য ছিল। আমি তাকে পাই পতিত অবস্থায়। দাবানল না কী একটা লাগিয়ে ভূমির রক্ষক সটকে পড়েছিল। নামেই রক্ষক। শুনেছি সে ব্যাটা ঘোর অনাচারী। প্রকৃতির স্রেফ পূজা করলেই হয় না, তাকে রক্ষাও করতে হয় - এমনটা সে বিশ্বাস করত না। অরণ্যের আবার যত্ন কীসের। আমার নিজের ভেতর সংস্কারের খুব অভাব থাকলেও, কীভাবে আর কী ভেবে যেন এই এক টুকরো বসুন্ধরার সংস্কারে নেমে পড়েছিলাম। প্রথমে কিছুটা মায়ায় পড়ে, কিছুটা কি কর্তব্যের খাতিরে। তারপর নিজের ভালো লাগা থেকে। এত অল্প তাও আবার এমন স্বার্থপর খাটুনিতেই বসুমতি তার মালিকানা সঁপে দিবে আমার তো জানা ছিল না। সবাইকে দেয়ও না বোধ হয়। সে জঙ্গল দিনে দিনে সাফ করেছি। মাটির আজ্ঞা বয়েই মাটি থেকে অবাঞ্ছিত সব উপড়েছি একে একে। তার ব্যাথা হয়েছে কিনা বলতে পারিনা। লজ্জাজনক হলেও সত্যি যে, তার সব কান্নাকে আমি জানি না। জেনেছি বনটা কেমন প্রকাণ্ড আর ঘন ছিল। শ্বাপদও ছিল, সাপও ছিল। ছবিতে কিন্তু আমার সুন্দরই লেগেছে সেসব। বনদেবী নিজে অবশ্য এককালের বনটাকে শাপশাপান্ত করেই চলে। অনবরত। আচ্ছা... কেন? আমি তো শুনতে চাই না। কাকে শোনায় তবে? সুন্দরের কথা সে কদাচিৎ বলে। সে বলে লকলকে লালসার কথা,...

উড়ো চর্চা ২

দেবী প্রাচীরের ওপর দাঁড়িয়ে একে একে দু'টো স্যান্ডেল খসিয়ে ফেললেন পা থেকে। আমার বুক ঢিপঢিপ করছিল, উনি টাল সামলাতে না পেরে পড়ে-টড়ে যান কিনা। কোন জন্মের উচ্চতা ভীতি আমার মন থেকে দূর হলো না এখনো। কফির মগটা সাবধানে নামিয়ে কাতর গলায় অনুরোধ করলাম, 'নেমে আসুন দেবী। আমি যে ভয় পাই।' 'আরে বোকাচন্দ্র ভয়ের কিচ্ছু নাই। এদিকে এসো। কাছে এসো।' 'কেন?' আমার পা কিন্তু সরে না। অলকানন্দার স্থবির টব থেকে শুরু করে বাতাসের গতিমুখ - সবটাই আমাকে শঙ্কিত করছিল। 'আমাকে একটা ঠেলা দাও আলতো করে।'  'কী বলছেন!' সত্য যে, আমার আঁতকে ওঠায় যতখানি ভয় ছিল ততখানি চমক ছিল না।  'পড়ব না। ভয় নাই। আসো তো আসো। দেখোই না, আমি ভাসব। তারপর উড়ে যাব।' 'না না আমি পারব না।' দেবী কিছু একটা বলতে গিয়ে অন্যদিকে মুখ সরিয়ে নিলেন। ঈষৎ কালো ছায়া যেন নেমে এল ভিট্রুভিয়াসের বিদ্রূপকারী ওই মুখে। আমি একটা প্রয়োজনীয় ধাক্কা খেলাম। হঠাৎ নিজের ওপর খুব লজ্জা হলো আমার। আমি দেবীকে অবিশ্বাস করছি। দেবীর কথায় সন্দেহ প্রকাশ করছি। আর কত - ছি!! নিজেকে ধিক্কার দিয়ে আমি তার কাছে এগিয়ে গেলাম, 'সত্যিই আপনার ...

মন

শুক আমাকে হুঁশিয়ার করেই চলেছে সুবিনয়ের ব্যাপারে। আমি ধৈর্য হারিয়ে ওকে বকা দিলাম। কেন রে বাপু, এতবার বলতে হচ্ছে কেন? আমি নিজে তো চোখের ওপর দেখতে পাচ্ছি এই সুবিনয় আমার আরাধ্য নয়। আরাধ্যের ধারেকাছে কেউ নয়, কিছু নয় সে। না আমি মন্দ বলছি না ছেলেটাকে। সবই ঠিক আছে। সব ঠিকই আছে। তবুও ঠিক আমার সাথে যাচ্ছে না। সবকিছুর পরও আমার আরাধ্য তো সে নয়। তাই না?  এক যুগ হলো আরাধ্যকে দেখি আমি প্রায় রাতে। ঘুমানর আগে আরশি আমায় দেখাত। তারপর এখন ঘুমিয়ে দেখি স্বপ্নে। দু’জনেরই অভ্যাস হয়ে গেছিল এভাবে দেখা করার। অনেকদিন বাদে আরশিকে আবার দেখাতে বলেছি, সুবিনয় আর আরাধ্যকে পাশাপাশি মেলানর জন্য। আরশি আমাকে আরেকবার আশ্বস্ত করেছে, দুইটা মানুষ কোনো দিক থেকেই এক নয়। তার পরপরই স্বপ্নে একবার ডেকেছি সুবিনয়কে। আরাধ্য রাগ করবে না জানতাম। আরাধ্য সেরকম মানুষ নয়। তাছাড়া একটা রাতের জন্যই তো। সুবিনয় অবশ্য ঘাবড়ে গিয়েছিল। স্বপ্নে যাতায়াতের অভিজ্ঞতা ছিল না বোধ হয়। আমি দু’জনকেই খুব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলাম। নাহ, আমার আরাধ্য সব দিক থেকেই অন্যরকম। চলন বলন সব আলাদা।  অন্যান্য দিন আরাধ্য টাংস্টেনের জাদু আলোতে আরামকেদারায় বসে আলোচ...