সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

কাহিনীকৌশল ও চিত্রনাট্য লিখন সিরিজ - পর্ব ২ [গল্পের উপাদান]

গল্প কী গল্প হলো এক বা একাধিক ঘটনা বা অভিজ্ঞতার বর্ণনা। বলাই বাহুল্য, গল্পের একটি শুরু, মধ্যভাগ, ও সমাপ্তি থাকে। সার্থক গল্প এমন যা একজন পাঠকের মনে ছাপ ফেলে ও সাধারণত এক বসায় শেষ করে ওঠা যায়। আখ্যানের এই উপাদানগুলো গল্পে থাকে: সূচনা দ্বন্দ্ব ঊর্ধ্বমুখী ক্রিয়া (জটিলতা) চরমসীমা মীমাংসা গল্পের উপাদান পটভূমি চরিত্রায়ন    আখ্যান দ্বন্দ্ব চরমসীমা মীমাংসা মূলভাব দৃষ্টিকোণ নিম্নে এদের সবিস্তার বর্ণনা দেয়া হলো: পটভূমি - সেই পরিবেশ যেখানে চরিত্রগুলো অবস্থান করে। - পাঠককে জানায়, কখন ও কোথায় গল্পের অবস্থান। - নিচের বিষয়গুলোর সমন্বয়ে তৈরি হয়: সময় স্থান পরিসর মেজাজ ও আবহ চিত্রকল্পের ব্যবহার সময়   সাধারণত কোনো দৃশ্যের পটভূমি বিস্তারের অংশ হিসেবে সময় কাঠামো নির্ধারণ করা হয়। আখ্যানের অগ্রগতির পাশাপাশি চরিত্রের প্রেক্ষাপট ও হাবভাবের ক্ষেত্রে সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। সাময়িক পটভূমির অংশ হতে পারে নির্দিষ্ট তারিখ অথবা ঘটনা। স্বল্প সময় পরিসরের কাহিনীর ক্ষেত্রে মৌসুম, দিনের কোনো সময়, এমনকি ঘণ্টার হিসাবও বেশি প্রাসঙ্গিক হতে পারে।  স্থান গল্পটি কোন জায়গায় ঘটছে সেই তথ্য তুলনামূলকভাবে...

কাহিনীকৌশল ও চিত্রনাট্য লিখন সিরিজ - পর্ব ১ [পরিচিতি]

কাহিনীকৌশল কী কাহিনী হলো এক বা একাধিক ঘটনার বর্ণনা। কাহিনী কাল্পনিক হতে পারে, অথবা বাস্তবভিত্তিক হতে পারে। কাহিনীকৌশল হলো কিছু পদ্ধতি যা অনুসরণ করে লেখকরা গল্প বলে থাকে। এই কৌশলে নিম্নোক্ত বিষয় বিবেচনায় রাখতে হয় -  দৃষ্টিকোণ দর্শকশ্রোতা চরিত্রায়ন আখ্যান (গল্পে যা ঘটে/ঘটবে) কাঠামো জনরা শব্দচয়ন  কাহিনী  কাহিনী  : একটি কাল্পনিক গল্প যেখানে সব ঘটনা লেখকের কল্পনাপ্রসূত। ব্যক্তিগত কাহিনী  :   লেখকের জীবনের ঘটেছে এমন একটি ঘটনা নিয়ে লেখা সত্য গল্প। কাহিনী ক্রম শুরু  - স্থান, কাল ও চরিত্রের পরিচয় - সংঘর্ষের সূচনা মধ্যভাগ  - ঘটনা শুরু হয় (ঊর্ধ্বমুখী ক্রিয়া) - মুখ্য চরিত্রের সামনে লক্ষ্য ও বাধা থাকবে - ঘটনা সামনের দিকে এগিয়ে যাবে শেষ - পরিণতি (নিম্নগামী ক্রিয়া) চিত্রনাট্য গল্প, পটভূমি, ও সংলাপের বিবরণসহ লিখিতকর্মের জন্য একটি সাধারণ পরিভাষা হলো চিত্রনাট্য। এটি সচরাচর একটি স্বাধীন পেশা। একজন চিত্রনাট্যকার বা স্ক্রিপ্ট লেখকের যে ধরনের কাজ থাকে তা হলো - গবেষণার মাধ্যমে কাহিনী ও গল্পের উন্নতিসাধন; চিত্রনাট্য ও সংলাপ লেখা; সঠিক ফরম্যাট অনুসরণ করে এটিকে কোম্পা...

চলচ্চিত্রের দশ দিকপাল

এডয়ার্ড ময়ব্রিজ স্থির আলোকচিত্র থেকে চলচ্চিত্রের দিকে অগ্রযাত্রায় প্রথম সফল পদক্ষেপ রাখেন যে ব্যক্তি তার নাম এডয়ার্ড ময়ব্রিজ। একজন ভীষণ প্রতিভাবান পাগলাটে অ্যাংলো আমেরিকান, যিনি তার সিনেম্যাটিক বৈচিত্র্যময় জীবনে ওয়াশিং মেশিন উদ্ভাবন করেছেন এবং খুনের দায়ে কাঠগড়াতেও দাঁড়িয়েছেন। যদিও তাকে নিয়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো রেসের বাজি আর চলন্ত ঘোড়ার ছবি তোলার গল্প। ১৮৭২ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার প্রাক্তন গভর্নর লিলেন স্ট্যানফোর্ড এক অদ্ভুত বাজি ধরে তা প্রমাণের জন্য চিত্রগ্রাহক ময়ব্রিজের শরণাপন্ন হন। বাজিটা ছিল, একটি ঘোড়া দৌড়কালীন কোনো সময়ে মাটি থেকে তার সবগুলো খুর শূন্যে তোলে কিনা। প্রায় পাঁচ বছর নিরন্তর প্রচেষ্টার পর ১৮৭৮ সালের জুন মাসে ময়ব্রিজ এই দাবি পুরোপুরি প্রমাণ করতে সফল হন এবং একইসাথে আবিষ্কার করেন চলমান ছবি তোলার নতুন প্রযুক্তি। এই বিশেষ কায়দায় রেসের ট্র্যাকে এক ডজন ক্যামেরা পরপর এমনভাবে রাখা হয়েছিল যাতে করে ছুটন্ত ঘোড়ার শরীরের স্পর্শে একেকটা ক্যামেরার শাটার চালু হয়ে যায়। ফলাফল চমকপ্রদ। এই সিরিজটি ‘দি হর্স ইন মোশন’ নামে প্রকাশিত হয়ে অচিরেই শিল্পী, সমালোচক ও প্রাণীবিদদের ভেতরে সাড়া ফেলে দেয়। ময়ব্...

হারবার্ট স্পেনসারের 'জৈবিক সাদৃশ্যবাদ'

ইংরেজ সমাজতত্ত্ববিদ ও জীববিজ্ঞানী হারবার্ট স্পেনসারকে বলা হয় সমাজবিজ্ঞানের দ্বিতীয় জনক। তিনি 'সামাজিক ডারউইনবাদ'-এর একজন প্রচারক। স্পেনসারের বিখ্যাত 'জৈবিক সাদৃশ্যবাদ' সমাজ ও জীবকে বিশেষ সাদৃশ্যপূর্ণ বলে দাবি করে। হারবার্ট স্পেনসার (১৮২০-১৯০৩) ১। সমাজ ও জীব উভয়েই আকারে বৃদ্ধি পায়। মানবশিশু প্রাপ্তবয়স্ক হয়। মহল্লা থেকে মেট্রোপলিটন হয়, ক্ষুদ্র রাষ্ট্র থেকে সাম্রাজ্য তৈরি হয়।   ২। প্রত্যেকে আকারে যত বড় হয় উভয়ের কাঠামো জটিলতর হতে থাকে। ৩। দুই ক্ষেত্রেই, কাঠামোগত পার্থক্যের কারণে কার্যকারিতায় অনুরূপ পার্থক্য দেখা দেয়। ৪। জীবদেহ ও সমাজ উভয়েই ক্ষুদ্রতর একক দ্বারা গঠিত। জীবের যেমন কোষ রয়েছে তেমন সমাজের রয়েছে ব্যক্তি। একাধিক কোষ মিলে যেভাবে বৃহত্তর অঙ্গ গঠন করে, একইভাবে একাধিক ব্যক্তি মিলে সমাজের বিভিন্ন অংশ গঠন করে। ৫। সমাজ ও জীব উভয়ই মূলত তিন ধরনের তন্ত্র বা ব্যবস্থার ওপর টিকে থাকে। এরা হলো - বিপাক তন্ত্র (sustaining system), সংবহন তন্ত্র (distributor or circulatory system), স্নায়ু তন্ত্র (regulatory system). জীবের জন্য খাদ্য হলো এর চালিকা শক্তি, সমাজের ক্ষেত্রে যা হলো কৃ...

মুক্ত বনাম আবদ্ধ ফ্রেমিং

কোনো চলচ্চিত্রের গল্প বলার জন্য মূলগতভাবে যে দুই ধরনের কাঠামো  বা বিন্যাস অনুসরণ করা হয়, তার একটি হলো ওপেন ফর্ম, যার সাথে ফরাসি চলচ্চিত্রকার জাঁ রেনোয়ার নাম সংশ্লিষ্ট রাখা হয়। দ্বিতীয়টি হলো ক্লোজড ফর্ম, যার সাথে যুক্ত আছে জার্মান নির্মাতা ফ্রিৎজ লাং এর নাম। এই দুই কাঠামো থেকেই ওপেন ফ্রেমিং আর ক্লোজড ফ্রেমিং-এর উৎপত্তি। আমরা নিম্নোক্ত আলোচনায় এই দুইয়ের জন্য চলনসই পরিভাষা গ্রহণ করব - মুক্ত ফ্রেমিং আর আবদ্ধ ফ্রেমিং। মুক্ত ফ্রেমিং চিলড্রেন অব মেন (২০০৬) যে ফ্রেমিং পদ্ধতি দর্শককে ছবির অভ্যন্তরীণ বাস্তবতা সম্বন্ধে পূর্ণ ধারণা দেয় না তাকে বলে মুক্ত বা বিস্তীর্ণ ফ্রেমিং।  মুক্ত ফ্রেমিং-এ ছবিতে যা কিছু ঘটছে অথবা ছবিতে যা কিছু অবস্থান করছে তার ব্যাপারে দর্শক পুরোপুরি অবগত থাকে না। কেউ কেউ সহজেই বলে ফেলে যে, ক্লোজআপ হলো মুক্ত ফ্রেমিং এর যোগ্যতম উদাহরণ। আবার কেউ কেউ উল্টোটা বলে যে, আবদ্ধ ফ্রেমিং-এর আদর্শ উদাহরণ হলো ক্লোজ-আপ। আদতে এটি অতিসরলীকরণ। একটি ফ্রেম মুক্ত না আবদ্ধ তা নির্ভর করছে কতটুকু তথ্য সে দর্শককে সরবরাহ করছে তার ওপর। মুক্ত ফ্রেম সবসময় কিছু তথ্য (বলা যায়, বেশিরভাগ তথ্য) দর্শকের...

অগ্রিম প্রত্যাখ্যান পত্র

নবাগতা,  বোধ হয় একটা কথা তোমার জানা দরকার যে কথা  যে কথা এমনকি ভুয়োদর্শী চাঁদটা পর্যন্ত ভুলে গেছে আমি তোমাকে বলতে চাই। হাসতে পারো, কাঁদতে পারো, অবাক হতে পারো আমি তো বুঝি  ঘটনাটা পুতুল খেলার মতো হালকা আর এস্থেটিক, তারপরও-- আমাদের মতো যারা, এক দিন, এক বার, এক মুহূর্তই আমাদের জন্য যথেষ্ট।  আর একটাবার বাজি রাখার মতো কোনো সম্বল নাই আমার নিঃস্ব, বিশ্বাস করো, তোমাকে আশীর্বাদ ছাড়া আর কী দিতে পারি। চেয়ো না, আমি তো আমার নিজের কাছেই নাই। কী বলব--  ক্রমশ লাল হতে থাকা আকাশ লাল টিপ আর ত্রস্ত হাতে আড়াল করা একটা সিঁথির লালে আমি যে জন্মের নামে বন্ধকী পড়ে গেছি নবাগতা!

ধলু, এক অসহায় ছাগল

কসাই 'আল্লাহু আকবর' বলে চেঁচিয়ে উঠতেই শেষ চেষ্টা করল ধলু। তার চেষ্টা সফলও হলো, ছুটে বেরিয়ে এল দড়ি ছিঁড়ে। তারপর সোজা বেড়ার বাইরে। বেরিয়ে এসেও স্বস্তি নেই। বাড়ির কর্তা সহ আরও চাকর-বাকর, কসাই সবাই ছুটে এল। ধলু প্রাণপণে দৌড়াচ্ছে। এ পাড়ার মানুষেরা বড় সাংঘাতিক। ফি-বছরই এ সময় তারা খুব আনন্দ করে পশুপাখির গলা কাটে। কী মজা পায় কে জানে! তেমনই এ পাড়ার এক লোকের পাল্লায় পড়েছে সে। এর আগে সে যে বাড়িতে থাকত তারা খুবই ভালো ছিল। রোজ পেট ভরে খাবার খাওয়াতে পারত না তাও সে চিৎকার করত না। খুব ক্ষিদে পেলে নিঃশব্দে কাঁদত। সেই বাড়িতেই তার জন্ম হয়। তার মা ছিল কালো। তার ভাইবোনেরাও মিশমিশে কালো। দু'জন আবার সাদাকালোও ছিল। কেবল সেই ছিল ধবধবে সাদা। মালিকের ছোট্ট ছেলে মানিক আদর করে নাম রেখেছিল ধলু। বাকিদের কারো নাম তার মনে নেই। তবে এক ভাইয়ের নাম ছিল বোধ হয় কালু। মানিক তাকে যেমন খুব ভালোবাসত তেমনি সেও। তার মালিক মিজান সাহেবও তাকে খুব ভালোবাসত। কিন্তু এই মানুষটি টাকার জন্য কেমন নিষ্ঠুর হয়ে গেলেন। অভাবে পড়ে তাকে বিক্রি করে দিলেন হাটে। তার খুব মন খারাপ হয়েছিল। সবচেয়ে বেশি কষ্ট লাগল মানিকের কান্না দেখে। হাট থেকে...