অধ্যায় এক
চেখভের বন্দুক: “গল্পের সাথে প্রাসঙ্গিক নয় এমন সমস্তকিছুকে সরিয়ে ফেলুন। যদি প্রথম অধ্যায়ে আপনি উল্লেখ করেন যে, দেয়ালে একটি রাইফেল ঝুলে আছে, তাহলে দ্বিতীয় বা তৃতীয় অধ্যায়ে অবশ্যই তার থেকে গুলি ছুঁড়তে হবে। যদি গুলি-ই না করা হয়, তাহলে সেখানে বন্দুক থাকারও কোনো মানে হয় না।”
আনোয়ারের নিজের পক্ষেও শুরুর এক-দুই লাইন পড়ে বোঝা সম্ভব না সামনে কী আসতে চলেছে। সে কবজি সামান্য উঁচু করে কৌশলে হাতঘড়িটা দেখে নিল: এগারটা বেজে একত্রিশ মিনিট। আড়াইটার আগে ওদের টিমকে মিন্টো রোডে রিপোর্ট করতে হবে। ভদ্রলোক ওদেরকে সামনের সোফাটা দেখিয়ে বললেন, বসো তোমরা।
‘থ্যাংক ইউ স্যার।’ হুইলচেয়ারটার দিকে আরেকবার দৃষ্টি দিয়ে আনোয়ার বসে। জাহিদও বসে পাশেই। ভদ্রলোকের সোফার পাশেই হুইল চেয়ার রাখা। অথচ ওনার পা দুটো দিব্যি অক্ষত। সম্ভবত স্ট্রোক। স্ট্রোকই হবে। দুই পা ভালভাবে খেয়াল করলে বোঝা যায়। নিথর পড়ে আছে যেন। শরীরের সাথে জোড়া, অথচ শরীরের অংশ নয়। জমশেদ ইসলাম। সাবেক অর্থ উপদেষ্টা। ফাইলটা দ্রুত মনে করার চেষ্টা করে আনোয়ার। উপদেষ্টা থাকাকালীন ভদ্রলোক হুইল চেয়ার ব্যবহার করতেন না নিশ্চয়।
‘ইন্সপেক্টর, তোমার ওয়ারেন্ট আছে?’
‘সাব-ইন্সপেক্টর, স্যার।’ আনোয়ার সংশোধন করল, ‘ডিএমপি ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ। আমার কলিগ এস আই জাহিদ। আইটি ডিপার্টমেন্ট।’
‘এস আই!’ জমশেদ ইসলাম ভ্রূকুটি সহকারে পুনরুচ্চারণ করেন ধ্বনিগুলো, ‘আমার মেয়েকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে যে চাচ্ছ, তোমাদের কি ওয়ারেন্ট আছে?’
সাব-ইন্সপেক্টর স্মিত হাসে, ‘ওয়ারেন্টের কোনো প্রয়োজন পড়বে না, স্যার। আমি কেবলমাত্র তদন্তের জন্য কিছু তথ্য নিব।’
‘আপনারা চাইলেই তো আর মেয়েকে এভাবে হাজির করতে পারিনা।’ বব ছাঁট চুলের মধ্যবয়সী ভদ্রমহিলা আঁচল কোলে নিয়ে জমশেদের পাশে বসলেন, after all she is a child, right?’
আফসানা ইসলাম। জমশেদ সাহেবের স্ত্রী। ভদ্রমহিলা কোন পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন নামটা মনে পড়ছে না।
‘দেখুন ম্যাডাম আপনাদের মেয়ে যদি চান তাহলে আপনাদের সামনেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করব।’ একটু থেমে জোর দিয়ে বলে আনোয়ার, ব্যাপারটা গুরুত্বপূর্ণ।’
‘কী অভিযোগে বা কী ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করছ জানতে পারি কি?’
‘আপনাদের হয়তোবা জানা আছে যে, গোয়েন্দা পুলিশ সাম্প্রতিক নাশকতার ব্যাপারে তদন্ত করছে। পেট্রোল বোমা হামলার সাথে জড়িতদের অজ্ঞাতনামা আসামী করে বেশ কিছু মামলা হয়েছে। তার জের ধরে আমরা অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করছি। প্রমীলা ইসলামকে ডাকুন। বাকিটা স্পষ্ট হবে।’
‘পেট্রোল বোমা হামলা!’ আফসানা চোখ কপালে তোলেন, দেখুন আপনাদের কোথাও ভুল হচ্ছে। আমাদের ফ্যামিলি প্রোফাইল আপনি জেনে এসেছেন আশা করি।’ আফসানার উদ্বেগ ঢাকা পড়ে বিস্ময়ের আড়ালে। জমশেদ তার হাতে হাত রেখে সামান্য চাপ দিলেন। আমি কথা বলছি। উত্তেজিত হয়ো না।
আনোয়ার কিন্তু তার বক্তব্যে অটল। প্রমীলার সংশ্লিষ্টতার ব্যাপারে তাদের কাছে শতভাগ নিশ্চিত তথ্য আছে। একইভাবে জমশেদ ইসলামও নিশ্চিত যে পুলিশের কোথাও ভুল হচ্ছে। তার ধারণা কন্যাকে জড়িয়ে মূলত তাকেই হয়রানি করতে চায় সরকার। অতি সম্প্রতি এক বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী নাশকতার ব্যাপারে জিরো টলারেন্সের কথা বলেছেন। কাজে লাগানর মোক্ষম সুযোগ তোমাদের জন্য। ‘আচ্ছা একটু অপেক্ষা করো-’ বলে জমশেদ তক্তপোশের দিকে ঝুঁকলেন। আফসানা হাত বাড়িয়ে সেলফোনটা এগিয়ে দিলেন তাকে। ফোন হাতে পাঞ্জাবির বোতাম থেকে ছাড়িয়ে চশমা চোখে দেন জমশেদ। কোনো একটা নাম্বার খুঁজছেন বলে মনে হলো।
কোথায় ফোন করছেন ভদ্রলোক? গণভবনে? অফিসার দুজন চোখাচোখি করে।
‘তোমাদের পরিশ্রম কমিয়ে দেই একটু।’ ফোন কানে তুললেন জমশেদ।
‘যা করার দ্রুত করবেন স্যার।’
জমশেদ খানিকক্ষণ সেটটা কানে ধরে রেখে কোনো সাড়া না পেয়ে সংযোগ কেটে আবার কল করেন। এবারও সাড়া পাওয়া গেল না। ‘আসাদ ফোন ধরছে না। মিটিংয়ে নাকি?’
আফসানা অনেকক্ষণ যাবৎ উদ্বিগ্ন, ‘মিটিংয়ে বোধ হয়। মেজ ভাইজানকে চেষ্টা করব?’
জমশেদ কোনো উত্তর করলেন না। অন্য কোনো একটা নাম্বার ডায়াল করে ফোন কানে তুললেন। এবার সংযোগ পাওয়া গেল। ‘ওয়ালাইকুম আসসালাম। ভাল আছি। আরে… এসব কথা রাখো। তোমরা কী শুরু করেছ বল তো। শান্তিতে থাকবে দিবা না নাকি? …কী হয়েছে?? আমাদের বাসায় পুলিশ এসেছে... আমার মেয়েকে ইন্টারোগেট করতে! হ্যা, প্রমিকে। কী মুশকিল। …সেটা তুমি নিজেই কথা বলে জেনে নাও না!’ জমশেদ ফোন বাড়িয়ে দিলেন আনোয়ারের দিকে, ‘ডি আইজির ফোন।’
আনোয়ার একবার কলিগের দিকে তাকিয়ে বসা অবস্থা থেকে একটু ঝুঁকে এসে মোবাইল হাতে নেয়। ওপাশ থেকে কিছু একটা শুনে এমনভাবে সালাম দিয়ে উঠে দাঁড়ায় যেন ডি আইজি সশরীরে উপস্থিত। ‘আনোয়ার হাসান, এস আই, ডিবি। ব্রাভো সিক্সটিন স্যার।’ ফোনটা কানে নিয়ে এস আই কিছুটা দূরে চলে যায়। মিনিট পাঁচেক কথা বলে মোবাইল ফিরিয়ে দেয় জমশেদের হাতে। জমশেদ ফোন ফিরে পেয়ে যতক্ষণ ডি আইজিকে কথা শোনায় ততক্ষণ সে নীরবে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে। জমশেদ ফোন রাখার আগ মুহুর্তে বোবা জাহিদও উঠে দাঁড়াল।
‘স্যার আমরা তাহলে আসি।’
‘বসো বসো। চা দিতে বলি। আর ব্যাপারটা খুলে বলো তো আমাকে।’
আনোয়ার চায়ের ব্যাপারে আপত্তি করল। বাইরে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। আরো দুজন অফিসার আছে। পানি পান করা যেতে পারে অবশ্য।
জমশেদ সংক্ষেপে জানতে চাইলেন ঘটনা।
উভয় অফিসার কিছুক্ষণ নীরব চাওয়াচাওয়ি করে। অতঃপর এস আই জাহিদ প্রথমবারের মতো মুখ খোলে, ‘আপনাদের মেয়ে প্রমীলা অধিনায়ক নামের একটা সংগঠনের সাথে জড়িত। এটা জানা আছে নিশ্চয়ই।’ জমশেদ হা-সূচক মাথা নাড়লে জাহিদ বলে চলে, এই সংগঠন যে নিবন্ধনবিহীন তাহলে তাও জানা আছে আশা করি। এটা নিয়ে আমাদের কিছু প্রশ্ন আছে। বিশেষত এর উদ্দেশ্য নিয়ে। এটা কি কোনো সরকার-বিরোধী সংগঠন?’
‘না না। এটা সরকারের প্যারানয়া। অফিসার, আমি যতটুকু জানি তা থেকে তোমাদের নিশ্চিত করতে পারি যে অধিনায়ক রাজনৈতিক সংগঠন না। ছেলেমেয়েরা নিজেদের মধ্যে নানান কর্মসূচি রাখে। উৎসব প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান আয়োজন করে। আমার মেয়েও যোগ দেয়। ওর কিছু বন্ধুবান্ধব আছে সেখানে। এর বেশি কিছু না। একে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ভিত্তিক সংগঠন বললেও ভুল হবে। এর আবার নিবন্ধন কীসের? এর তো আইনি অস্তিত্বই নাই।’
ধন্যবাদ সহকারে আফসানার হাত থেকে পানির গেলাস নিল পুলিশ দুজন। আনোয়ার দীর্ঘ চুমুক দিয়ে পানি পান করতে থাকলেও জাহিদের গেলাসে ঠোঁট ঠেকে না। গেলাসটা হাতে রেখে ঘোরাতে ঘোরাতে বলে, দেখুন, অনেকদিন ধরে গ্রুপটার দিকে লক্ষ রেখে চলছি আমরা। আপনি কতদূর জানেন জানিনা। এদের অদূর অতীতের রেকর্ড এমনিতেই ভাল না। তার মধ্যে প্রমাণ পেয়েছি যে নাশকতা মামলার সন্দেহভাজন আসামীদের সাথে এই সংগঠনের সদস্যদের প্রত্যক্ষ এবং নিয়মিত যোগাযোগ আছে। ফেসবুক ভিত্তিক সংগঠন হলেও এর আকার তো নেহাত ছোট না। বছর খানেক আগে তারা www.adhinayok.org নামে একটা ওয়েবসাইট চালু করেছে। আমাদের আইটি ডিপার্টমেন্ট এক মাসে শত শত অধিনায়ক চিহ্নিত করেছে। আপনাদের মেয়ে প্রমীলা অনেকদিন ধরে... প্রায় শুরু থেকেই এই গ্রুপের সাথে জড়িত…’
‘আর আমার মেয়েকে খুঁজে বের করাটাই আপনাদের জন্য সবচেয়ে সহজ।’ সত্যিকারের যারা ভয়াবহ ক্রিমিনাল তাদের ধরার নাম নাই। এনারা লেগেছেন বাচ্চাদের পিছনে।
‘হ্যা তা-ই। এত বড় দলের নের্তৃত্বে কে বা কারা আছে সেটা জানা দরকার। এর পেছনে বড় কোনো মাস্টার মাইন্ডের হাত থাকবে না তা হতে পারেনা। আর অধিনায়ক ফাউন্ডেশনের সাথে এদের কোনো সম্পর্ক আছে কিনা সেটাও একটা জরুরি প্রশ্ন। প্রমীলা ইসলামের কাছে সব প্রশ্নের উত্তর ছিল বলে আমাদের ধারণা।’ এস আই জাহিদ ব্যক্তিগত সন্দেহের ব্যাপারটা উহ্য রাখল। তার জোরাল সন্দেহ যে, এদের কিছু একটা গোপন অভিসন্ধি আছে। সামাজিক মাধ্যমে অগণিত ছেলেমেয়ে নিজেদের অধিনায়ক দাবি করছে। মাদক ব্যবসা অথবা জঙ্গি পরিকল্পনা ছাড়া কেউ এত বিশাল অথচ গুপ্ত নেটওয়ার্ক এমনি এমনি তৈরি করে না। আরও একটা আশঙ্কার কথা তো ডিপার্টমেন্টকে এখনো জানান বাকি আছে। আজ তদন্তের এত নাজুক একটা পর্যায়ে এসে… হারামজাদা ডি আইজি।
আফসানা বলেন, আমরা যে কিছুই জানিনা তা নয়। কিন্তু ছেলেমেয়েরা যখন এসব কথা গোপন রেখেছে তখন আমাদের উচিৎ হবে না এ নিয়ে পুলিশের সাথে আলোচনা করা। নিন বিস্কুট নিন।
‘না ঠিক আছে ধন্যবাদ ম্যাডাম। এখন উঠতে হবে।’ এস আই আনোয়ার দুজনের মধ্যে প্রথমে উঠে দাঁড়ায়, ‘দেশের নিরাপত্তার কথা ভেবে আপনারা ভবিষ্যতে আইনের সাথে সহযোগিতা করবেন সেই অনুরোধ থাকল। আসো জাহিদ। আজকে আর সময় নষ্ট করে লাভ নাই।’ভবিষ্যতে যখন আসব কোর্ট থেকে ওয়ারেন্ট ইস্যু করেই আসব। তারপর দেখা যাবে।
আনোয়ার পেছনে ফিরতেই দেখে সাদা পাঞ্জাবি পরা এক বিশালদেহী দরজা আটকে দাঁড়িয়ে। প্রথমেই আফসানার দিকে চেয়ে বলে, ফুফু! বাসায় নাকি পুলিশ এসেছে? বাইরে পুলিশের গাড়ি দেখছি।
কেউ কিছু বলল না। এস আই আরেকবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সাদা পাঞ্জাবির পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় লোকটা আচমকা আনোয়ারের বাহু চেপে ধরল। অফিসারের গায়ে কী অবলীলায় হাত দিচ্ছে। চট করে কোমরের পিছনে হাত দিয়েই জাহিদের মনে পড়ল আজকে ওরা দুজনেই নিরস্ত্র।
‘দাঁড়াও। কোথায় যাচ্ছ?’
‘ওনাকে যেতে দে স্বপন।’ আফসানা ব্যস্ত হয়ে বলেন।
স্বপন সেদিকে কান না দিয়ে দ্বিগুণ গলা চড়িয়ে আনোয়ারের নাম আর পোস্ট জিজ্ঞাসা করে। ডিবি পুলিশ নাম-পোস্টিং জানাতে বাধ্য না। এক ঝটকায় স্বপনের হাত ছাড়িয়ে নেয় এস আই। এদেরই অজ্ঞাত পরিচয় লাশ দিয়ে একদিন শহরটা ভরে যাবে।
এবার জমশেদ ধমকের সুরে বললেন, ওনাদের তাড়া আছে ওনাকে যেতে দাও স্বপন।
আনোয়ার পাল্টা কিছু একটা করে বসারে আগেই জাহিদ দ্রুত গিয়ে ওকে সামলায়। বোঝাই যাচ্ছে লোকটা সরকারি দলের। কত এস আইকে চড় থাপ্পড় মেরেছে এযাবৎ কে জানে। স্বপনের সাথে কয়েক সেকেন্ড চাহনি বিনিময়ের পরমুহুর্তে সাব ইন্সপেক্টর দুইজন বেরিয়ে যায়।
আফসানা বললেন, কী ভয়াবহ ব্যাপার বল দেখি স্বপন। পুলিশ তো রীতিমতো বাসায় ঢুকে পড়েছে। আজকাল যা ভয় পাই আমি এদের! চারদিকে এমনিতেই ধরপাকড় চলতেছে। তার উপর বড় ভাইজান দেশে নাই। বস তুই। কোথা থেকে আসছিস এখন?
‘আমার আজকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাওয়ার কথা। পার্টির অফিসের দিকে বের হতেই রাস্তায় বাবুর কাছে শুনি এই অবস্থা। আমি আর দেরি না করে ওর মোটর সাইকেলটা নিয়ে রওনা দিয়ে দিলাম। যাই হোক, ডিবি পুলিশ এসেছিল কেন হঠাৎ সেইটা আগে শুনি।’
‘প্রমির জন্য।’ আফসানা বলেন।
‘প্রমির জন্য!’ স্বপন বুঝে উঠতে পারে না ব্যাপারটা। জমশেদের দিকে তাকায়, ফুফা?’
জমশেদ পত্রিকা ওলটাচ্ছিলেন। মুখ না তুলেই বললেন, তোমার সরকার নতুন নতুন ছক কাটছে। প্রমি না, ওরা এসেছিল আমাকে হ্যারাজ করতে। আমি বাপু রাজনীতির ধারেকাছে নাই আজ কত বছর হলো। হঠাৎ আমাকে অত্যাচার করার কারণটা কি বলতে পারো? আমার লেখালেখি বন্ধ করতে চাও তোমরা, নাকি?
আপনার লেখালেখিটা থামালে সব পক্ষেরই মঙ্গল বটে।
স্বপন বলে, এটা কোনো কথা না ফুফা। রিটায়ার্ড পলিটিশিয়ানদের চেয়েও বড় মাথাব্যাথা কাজ করতেছে এখন সরকারের। কেন এসেছিল কিছু কি বলেছে ওরা? প্রমির সাথে দেখা করেছে? আমাকে তো ভালভাবে কিছু শুনতেও দিলেন না। ফুফু আপনি ওদের বসিয়ে রেখে মেজ চাচাকে একটা ফোন কেন দিলেন না?
‘দেয়ার দরকার হয়নি।’ আফসানা বলেন, ওরা তো বলল ওরা নাকি পেট্রোল বোমার ইনভেস্টিগেশন করতেছে। প্রমির সাথে কী না কী সম্পর্ক খুঁজে পাইছে। বল আমি কোথায় যাব এসব কথা শুনে।
স্বপন ‘পেট্রোল বোমা’ কথাটা এক দুইবার উচ্চারণ করে নীরবে কী যেন ভাবে। মাথার ওপর ফ্যান ঘুরছে ঢিমে তালে। এখনো গরম পড়েনি বলে এসি ছাড়া হয়নি। ‘প্রমি কোথায়? ও জানে পুলিশ এসেছিল?’
‘প্রমি জানে। ও দোতলায় আছে। বেরতে মানা করেছি।’
‘আপনারা কীভাবে নিশ্চিত হচ্ছেন যে প্রমির সাথে পুলিশের ইনভেস্টিগেশনের কোনো কানেকশন নাই?’
‘কী বলছিস?’
ঠিকই বলছি। ও কত অর্গানাইজেশনের সাথে আছে সে বিষয়ে কোনো ধারণা আছে আপনাদের? কত মিছিল মিটিং করে সারাদিন সে খবর রাখেন? স্বপন সেদিকে গেল না। জমশেদকে উদ্দেশ্য করে বলল, ফুফা, গভর্নমেন্ট এখনকার ক্রাইসিস নিয়ে খুবই সিরিয়াস। আমার মনে হয় প্রমির ব্যাপারটা আমাদের চিন্তা করা উচিৎ। বিশেষ করে এরকম একটা সময়ে। জানিনা আপনারা কথাটা কীভাবে নিবেন কিন্তু ফাওয়াদের সাথে ওর মেশাটা আমার ঠিক পছন্দ না।
জমশেদ হাসেন। কিছু বলেন না। আফসানা গম্ভীরভাবে বললেন, স্বপন তুই তো জানিস। আমাদের মেয়ের ব্যাপারে, বিশেষ করে ও কার সাথে মিশবে না মিশবে এটা নিয়ে আমরা নাক গলাই না। এটা যদি প্রীতম হ’ত তাহলেও হয়তোবা আমাদের মতামত দেয়ার প্রশ্ন উঠত। কিন্তু প্রমির বিবেচনা বোধের উপর আমাদের যথেষ্ট আস্থা আছে।
তাহলে তো আর কিছু বলার নাই, স্বপন ভাবে, এখনই ভার্সিটির স্টুডেন্টদের সাথে মিশলে আর মেয়েকে আন্দোলন-পুলিশ-হাঙ্গামা থেকে বাঁচানর উপায় কী?
‘আমি তাহলে উঠি ফুফু। প্রমিকে একবার ডাকেন।’
‘তা ডাকছি কিন্তু তুই এখনি যাবি কেন, খেয়ে যাবি না?’
স্বপন মনে করিয়ে দিল যে ওকে একটা বাজবার আগে রওনা দিতে হবে। আফসানা দোতলার সিঁড়ির কাছে দাঁড়িয়ে ডাকলে উপর থেকে ‘আসছি মা’ জবাব পাওয়া যায়।
মিনিট খানেক পর রাবার ব্যান্ড দিয়ে চুল বাঁধতে বাঁধতে প্রমিকে নামতে দেখা গেল।
'অধিনায়ক' প্রকাশিত ভাষাচিত্র থেকে
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন