শৈল্পিক অভিজ্ঞতাকে আমরা উৎপাদন অথবা ভোগ যে প্রেক্ষাপট থেকেই দেখি না কেন - আমাদের অভিজ্ঞতা কিছু সংখ্যক নির্ণায়ক দ্বারা প্রভাবিত হয়। চলচ্চিত্র গবেষক জেমস মোনাকো তাঁর 'FILM AS AN ART' প্রবন্ধে নির্ণায়কসমূহের নাম, তাদের সমালোচনা পদ্ধতি এবং কার্য সম্পাদন সম্পর্কে একটি রূপরেখা প্রদান করেছেন। নিম্নে এর পরিবর্ধিত রূপ প্রকাশ করা গেল -
ঐতিহাসিকভাবে রাজনৈতিক নির্ণায়কই হলো প্রাথমিক। এই নির্ণায়ক দ্বারাই নির্ধারিত হয় একটি শিল্প অথবা শিল্পকর্ম সামাজিকভাবে কীভাবে ব্যবহৃত হবে। এক্ষেত্রে, উৎপাদনের চেয়ে ভোগ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গ্রীক ও রোমান মতবাদ অনুযায়ী, শিল্পকে জ্ঞানতাত্ত্বিক ক্রিয়াকলাপ হিসাবেই দেখা হোত। বিশেষত, তখন জ্ঞানের অভিমুখে যাত্রাকে দেখা হোত ধর্মীয় যাত্রা হিসাবে। এ ধরনের মতবাদ সামাজিক রাজনৈতিক শ্রেণীকরণের অন্তর্ভুক্ত। রাজনৈতিক নির্ণায়ক শিল্পকর্ম ও তাকে প্রতিপালনকারী সমাজের মধ্যকার সম্পর্ককে ব্যাখ্যা করে।
মনস্তাত্ত্বিক নির্ণায়ক:
অন্যদিকে এই নির্ণায়ক হল অন্তর্মুখী। কারণ এই আলোচনা শিল্পকর্মের সাথে বহির্বিশ্বের সম্পর্ককে নয়; বরং শিল্পকর্মের সাথে খোদ শিল্পী বা দর্শকের সংযোগকে গুরুত্ব দেয়। এরিস্টটলের আবেগমুক্তি তত্ত্বের মাধ্যমে শিল্পকর্মের গভীর মনস্তাত্ত্বিক প্রভাবের সাথে আমরা পরিচিত। বিংশ শতাব্দীতে, অর্থাৎ মনোবিশ্লেষণের স্বর্ণযুগে, শিল্পী ও শিল্পকর্মের মধ্যকার সম্পর্ক আলোচনার কেন্দ্রে আসে। Rorschach পরীক্ষার দ্বারা যেভাবে দর্শকের মানসিক অবস্থা ফুটে ওঠে একইভাবে শিল্পকর্মকে শিল্পীর মনস্তাত্ত্বিক পরিস্থিতির পরিচায়ক ভাবা হয়। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে এই দৃষ্টিপাত ভোক্তা, দর্শকের দিকে ঘুরে গেছে।
প্রযুক্তিগত নির্ণায়ক:
এটি শিল্পের ভাষাকে পরিচালনা করে থাকে। প্রাথমিক কাঠামোর বিবেচনায়, তৈলচিত্র ও অ্যাক্রেলিকের মধ্যে পার্থক্য কী? এখানে মোনাকো প্রশ্ন রেখেছেন, "একটি ধারণাকে শিল্পের ভাষায় রূপান্তর করলে ধারণাটি কীভাবে প্রভাবিত হয়? প্রতিটি নির্দিষ্ট শিল্পভাষার চিন্তাগত আকৃতি কীরূপ? শিল্পীর ব্যবহৃত উপকরণকে তারা কীভাবে আকার দেয়?"
এই প্রশ্নসমূহই প্রযুক্তিগত নির্ণায়কের বিচরণক্ষেত্র। বিশেষ করে ধারণকৃত শিল্প যেহেতু জটিল প্রযুক্তিনির্ভর তাই তারা এই বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে আরো বেশি প্রাসঙ্গিক। এমনকি উপন্যাসের মতো অ-প্রযুক্তিগত শিল্পও গভীরভাবে শিল্পনির্ভর (অর্থাৎ, প্রেস)।
অর্থনৈতিক নির্ণায়ক:
সমস্ত শিল্পই উৎসগতভাবে অর্থনৈতিক উৎপাদ আর সে কারণে অবশ্যই তাদেরকে শেষ অবধি অর্থনৈতিক প্রেক্ষিতে গ্রহণ করতে হবে।আবার, চলচ্চিত্র ও অন্যান্য ধারণকৃত শিল্পসমূহ এই বৈশিষ্ট্যের মূল উদাহরণ। স্থাপত্যশিল্পের মতোই, তারা একইসাথে পুঁজিনির্ভর ও শ্রমসাপেক্ষ; অর্থাৎ তাতে বড় অঙ্কের অর্থের ভূমিকা থাকে আর কখনো তাদের বড় মাপের জনবল দরকার হয়।
এই চারটি নির্ণায়ক শিল্প প্রক্রিয়ার প্রতি ধাপে নিজেদের মধ্যে নতুন নতুন সম্পর্ক তৈরি করে। প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক নির্ণায়ক যেকোন শিল্পের ভিত্তি গঠন করে। শিল্পী ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেবার আগেই শিল্পের ভাষা ও তার কৌশলের অস্তিত্ব বিদ্যমান থাকে। তদুপরি, প্রতিটা শিল্পই কিছু অর্থনৈতিক বাস্তবতা দ্বারা সীমায়িত থাকে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন